• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অস্তিত্ব সংকটে জামায়াত


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ১১, ২০১৭, ০৭:০৫ পিএম
অস্তিত্ব সংকটে জামায়াত

ঢাকা: স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার কারণে স্বাভাবিক রাজনীতিতে একেবারেই কোণঠাসা জামায়াত। দলটির নিবন্ধন স্থগিত রেখেছে নির্বাচন কমিশন। আদালতের নির্দেশে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকও বাতিল হয়ে গেছে। বিতর্কিত এ দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি সর্বত্র।

দাবি থাকলেও রাজনৈতিক কৌশলের কারণে জামায়াত এখনই নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম। নিষিদ্ধ না হলেও দলটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এখনো ধরপাকড়ের শিকার নেতা-কর্মীরা। এমন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও জামায়াতের নীতিনির্ধারকরা স্বনামেই রাজনীতি চালিয়ে যেতে চান। এমনকি নিষিদ্ধ হলেও ভিন্ন নাম নেবে না দলটি। থাকবে সুসময়ের আশায়। দলটির বিভিন্ন সূত্রে এমন তথ্যই জানা গেছে।

দলটির নেতারা মনে করেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। অতীতেও অনেকবার জামায়াত রাজনৈতিক বৈরিতার মুখে পড়েছে। তখনো ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে দলটি। সব বৈরিতা কাটিয়ে উঠতে হয়তো সময় লাগবে। উঠে দাঁড়ানোর ব্যপারে তারা আশাবাদী।

এ ব্যাপারে জামায়াতের মধ্যম সারির এক নেতা বলেন, জামায়াত তার নিজস্ব আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যাবে। এখানে নিবন্ধন বাতিল বা দল নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়গুলো ভিন্ন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নির্বাচন বা রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া জামায়াতের একমাত্র লক্ষ্য নয়। গঠনতন্ত্র মোতাবেক জামায়াত একটি নির্দিষ্ট আদর্শ নিয়ে কাজ করে। সেখানে নির্বাচন বা রাষ্ট্র ক্ষমতার বিষয়টি অনেক পরের বিষয়। আমরা আমাদের আদর্শিক রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এ কারণে নাম বদল করে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ কম।

তিনি উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, নামই যদি বদল করতে হবে, তাহলে আদর্শ রইল কোথায়? তিনি আরো বলেন, আদর্শিক রাজনীতিতে আদর্শ নিয়েই কথা হবে। আমরা মনে করি, দেশে এখন একতরফা ইতিহাস রচনা হচ্ছে। সে রচনা বর্তমান রাষ্ট্রযন্ত্র জোর করে চাপিয়ে দিতে চায়। কিন্তু মানুষতো মুক্তবুদ্ধির জীব। সেই বিকৃত ইতিহাস মানুষ কতটা গ্রহণ করছে, সরকার কি সেটা তলিয়ে দেখছে? জামায়াত নিষিদ্ধ করলেই সেটার রেশ শেষ হয়ে যাবে না।

তবে দলের একটি অংশ মনে করে, জামায়াত আসলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তাদের দাবি, মোট ভোটের ৮-৯ শতাংশ জনমতই জামায়াতের প্রতি প্রতিহিংসার অন্যতম কারণ। ক্ষমতায় যেতে ভোটের এমন অঙ্কই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কিছু গোষ্ঠীর মাথাব্যথার কারণ।

এমন শক্ত অবস্থানের জন্যই স্পষ্ট প্রতিহিংসার শিকার দলটি। ভোটের অঙ্কের হিসাব মাথায় নিয়েই হয়তো জামায়াতকে বর্তমান সরকার নিষিদ্ধ করবে না। আবার বিএনপিও জামায়াতকে ছাড়বে না। বিএনপির বড় একটি অংশের জামায়াতপ্রীতি এখনো প্রকাশ্য।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতের এমন আস্ফালন বরাবরই ধৃষ্টতার পর্যায়ে পড়ে। তারা দর-কষাকষির জায়গায় গিয়ে ভোল পাল্টাতেও সময় নেবে না। ধর্ম নিয়ে আদর্শের ধুয়া তুলে জামায়াত যে রাজনীতি করছে, তা নেহায়েতই রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য। তা দেশের মানুষের উপলব্ধিতে এসেছে। দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত, জামায়াতের এমন কৌশলী খপ্পরে না পড়া। তাই দলমত-নির্বিশেষে সময় এসেছে জামায়াতের রাজনীতিকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার।

এ ব্যাপারে সিনিয়র সাংবাদিক কাজী সিরাজ বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী দল হিসেবে সরকার জামায়াতের ব্যাপারে যে মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তা ঠিকই আছে। এখানে বিএনপির উচিত হবে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা। ঘোষণা দিয়ে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের বিষয়টি পরিষ্কার করলে কোণঠাসা হয়ে পড়বে জামায়াতের রাজনীতি। এখানে সরকারের দায়িত্বটাই বেশি। তবে নিষিদ্ধের কথা বলে সরকার এখনো সে পথে না যাওয়ায় কার্যত আশ্বাসই পাচ্ছে জামায়াত।

সর্বশেষ আদালতের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বাদ দিয়েছে। কমিশনের এমন পদক্ষেপে দলটি আরেক ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও সে সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াত।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবাদ বার্তায় দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নির্বাচনে দলীয় প্রতীক হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নামে সংরক্ষিত দাঁড়িপাল্লা বাতিলে নির্বাচন কমিশনের গৃহীত সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক। দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে জামায়াতে ইসলামী অতীতে প্রায় প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আসছে।

জামায়াত সেক্রেটারি প্রতিবাদ লিপিতে বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন আছে। আদালত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেননি। এমতাবস্থায় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জামায়াতের প্রতীক বাতিলের এ সিদ্ধান্তটি রহস্যজনক।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!