• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আমিরের ‘বাজি’+ শাহরুখের ‘বাদশা’= শাকিবের ‘নবাব’


মিতুল আহমেদ জুলাই ৪, ২০১৭, ০২:৪৩ পিএম
আমিরের ‘বাজি’+ শাহরুখের ‘বাদশা’= শাকিবের ‘নবাব’

ঢাকা: ঈদুল ফিতুরে উপলক্ষ্যে গেল ২৬ জুন সারা দেশে মুক্তি পেয়েছে মোট তিনটি নতুন সিনেমা। এরমধ্যে ‘রাজনীতি’ ছবিটি ছাড়া নবাব ও বস-২ ছবি দুটো যৌথ প্রযোজনার। এরমধ্যে বাংলায় তুমুল দাপটে ঈদের প্রথম দিন থেকেই রাজ করছে দেশের সুপারস্টার অভিনেতা শাকিব খানের যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘নবাব’। এখন পর্যন্ত হল রিপোর্ট বলে, আয়ের দিক থেকে ‘নবাব’-এর ধারে কাছে নেই বাকি দুই ছবি। আর তুমুল হিট হওয়া ‘নবাব’-এর বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ, ছবিটির গল্প মৌলিক নয়!

গত ২৬ জুন মুক্তির পর থেকেই তুমুল ব্যবসা করছে দেশের সুপারস্টার অভিনেতা শাকিব খান ও কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শুভশ্রী অভিনীত ছবি ‘নবাব’। ছবিতে শাকিব খানের অভিনয়, লুকে এসেছে বিরাট পরিবর্তন। ‘নবাব’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শাকিব খানের কঠোর পরিশ্রম এবং ওজন কমানোর বিষয়টি সবার জানা। ইন্টিলিজেন্স এজেন্টের দায়িত্বেও শাকিব দেখিয়েছেনও দুর্দান্ত। ছবির গল্প, অভিনয়, গান, গল্পে টানটান উত্তেজনা সব মিলিয়ে দর্শকের কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন হওয়ার সুযোগ নেই। অথচ ‘নবাব’ ছবিতে যে গল্প দর্শক দেখছে সে গল্পটি মোটেও মৌলিক গল্প নয়। বরং আমির খান অভিনীত তুমুল হিট ছবি ‘বাজি’ এবং শাহরুখ খান অভিনীত আরেক নামকড়া ছবি ‘বাদশা’-এর ফিউশন!

‘নবাব’ ছবিটি দেখার পর অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে আমিরের ‘বাজি’ আর শাহরুখের ‘বাদশা’ ছবি দুটির মিশ্রণ করে তৈরি হয়েছে শাকিব খানের ‘নবাব’ ছবিটির গল্প। এমন অভিযোগের পর আমিরের ‘বাজি’ আর শাহরুখের ‘বাদশা’ ছবি দুটি বিশ্লেষণ করার পর দেখা যায়, দর্শকের অভিযোগ মোটেও মিথ্যে নয়! সত্যি সত্যিই আমিরের বাজি আর শাহরুখের ‘বাদশা’র গল্পকে ‘নবাব’-এর গল্পকার ফিউশন করে একটু এদিক ওদিক করে নির্মাণ করেছেন।

১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বাজি’ ছবিতে পুলিশ অফিসার হিসেবে অভিনয় করেন আমির খান। ছবিটির চিত্রনাট্য ও পরিচালক ছিলেন আশুতোষ গোয়ার্কি। সদ্য মুক্তি পাওয়া শাকিবের ‘নবাব’ ছবিটির সিংহভাগ কাহিনী ‘বাজি’ ছবি থেকে নিয়েছেন চিত্রনাট্যকার পেলে ভট্টাচার্য। ছবিতে আমির পুলিশ অফিসার আর মমতা কলকার্নিকে দেখা যায় সাংবাদিক চরিত্রে। ‘নবাব’ ছবিতে মমতা কুলকার্নির চরিত্রে দেখা যায় শুভশ্রীকে। 

নবাব ছবিতে যেমন শাকিবকে আইপিএস রজতাভ দত্তের মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয় মুখ্যমন্ত্রীর ডেপুটি খরাজ মুখার্জী, ঠিক একইভাবে ‘বাজি’ ছবিতেও আমিরকে একই কায়দায় ফাঁসিয়ে দেয় মুখ্যমন্ত্রীর ডেপুটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন পরেশ রাওয়াল। এছাড়া আমিরের ‘বাজি’ ছবির বেশীর ভাগ সিন কাট টু কাট মিল পাওয়া যায় শাকিবের ‘নবাব’ ছবিতে। শুধু তাই না, ‘নবাব’ ছবিতে শাকিব খানকে যখন প্রথম দেখানো হয়, একটি বাস স্টেশনে নামছে। আর তখনই রাস্তা দিয়ে যাওয়া মুখ্যমন্ত্রীর উপর আততায়ীদের হামলা এবং ঝাপিয়ে পড়ে শাকিব খান তাকে রক্ষা করেন। পুরো বিষয়টি প্রায় একইরকম দৃশ্যে আরো কুড়ি বছরের আগের ছবি ‘বাজি’তে দেখেছে দর্শক! 

‘নবাব’ ছবির কাহিনীর ভিত্তি মূলত আমির খানের ‘বাজি’ ছবির কাহিনী। কিন্তু ‘নবাব’ ছবির ফিনিশিং সিকুয়েন্সটি চিত্রনাট্যকার পেলে ভট্টাচার্য ধার করেন বলিউড বাদশা শাহরুখ অভিনীত আলোচিত ছবি ‘বাদশা’-এর এন্ডিং থেকে! শ্যাম গুয়েলের গল্পে নির্মিত ১৯৯৯ সালের ছবি ‘বাদশা’। ছবিটি পরিচালনা করেন আব্বাস মুস্তান। শাহরুখ খান অভিনীত ‘বাদশা’ ছবির এন্ডিংটাকেই শাকিব খানকে দিয়ে করানো হয় ‘নবাব’ ছবিতে। শাকিব খানের অসুস্থ মা’কে জিম্মি করে মুখ্যমন্ত্রীর ডেপুটি খরাজ মুখার্জী যখন মুখ্যমন্ত্রীকে গুলি করে মারতে বাধ্য করে তখন দর্শকের আর বুঝতে বাকি থাকে না যে এমন দৃশ্য তারা বহু বছর আগে কোথাও যেনো দেখেছে! 

‘নবাব’-এর পুরো ছবিতে আমির খানের চরিত্রে শাকিব খানকে আর শুভশ্রীকে মমতা কুলকার্নির চরিত্রে দেখা গেলেও এন্ডিংটাতে যখন ছবি এসে ঠেকে, তখন চরিত্রগুলো পাল্টে মিশে যায় ‘বাদশা’ ছবির চরিত্রে। যেমন শাকিব খান ঢুকে যান শাহরুখ খানের চরিত্রে, শুভশ্রী হয়ে যান টুইঙ্কেল খান্নার চরিত্রে। এভাবেই চরিত্রের অদল বদলের ভিতর দিয়ে আমিরের ‘বাজি’ আর শাহরুখের ‘বাদশা’কে শাকিবের ‘নবাব’-এ রূপদান করেন চিত্রনাট্যকার পেলে ভট্টাচার্য। আবার পুরো ছবির কোথাও তিনি বাজি কিংবা বাদশা নিয়ে টুঁ শব্দটি করেন না। বরং ‘নবাব’ ছবির কাহিনীকে নিজের নামেই চালিয়ে দেয়া হয়। 

ঈদুল ফিতুরে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে এগিয়ে আছে শাকিব খান অভিনীত ‘নবাব’ ছবিটি। যা দেখতে বাংলার সিনেমা হলে মানুষের ঢল নেমেছে। বাংলা চলচ্চিত্রের বিভিন্ন গ্রুপে বাংলার জীর্ণ শীর্ণ সিনেমা হলগুলোতেও যেভাবে ‘নবাব’ দেখতে যে মানুষের স্রোত লক্ষ্য করা গেছে, তা দর্শক খরার এই সময়ে একটা বড় চমকই বটে! প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজও খুব আড়ম্বরভাবে জানাচ্ছে, ‘নবাব’ গত দশ বছরের ঈদের সেল ছাড়িয়ে গেছে। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। দুই বাংলার ইতিহাসে এক সিনেমা হলের এক দিনের সর্বোচ্চ সেলের মালিকও নাকি এখন শাকিব খানের ‘নবাব’। হয়তো এসবের ভিড়ে ‘বাজি’ কিংবা ‘বাদশা’র মেধাসত্ব হারানোর বিষয়ে কথা উঠবে না, নাকি এই দুই ছবির সত্ত্ব কিনেই ‘নবাব’ নির্মিত হয়েছে, সেটা নিয়েও চুপ থাকবেন প্রযোজকরা! পাছে মানুষ জানতে পারে যে, এটি অন্য কোনো দেশের পুরনো সিনেমার রিমেক! আর এভাবেই নিভৃতে ভিনদেশি সিনেমার গল্প কেটে কেটে বহু বছর পুরনো ছবির গল্পে দেশের সিনেমা হলে রিমেক হবে শত শত সিনেমা! কোনোটা হিট হবে, আবার কোনোটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে দর্শক। কিন্তু পাল্টাবে না কিছুই। নতুন গল্প নিয়ে যারা কাজ করতে চায়, নতুন চিন্তা নিয়ে যারা সিনেমায় আসতে চায় তারা এসব চৌর্যবৃত্তির ভিড়ে বিলীন হবে? খাঁটি গল্প নিয়েও প্রযোজক খুঁজে পাবে না তারা...   

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!