• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আ.লীগের মনোনয়ন পেতেই ‘হায় মুজিব’!


নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম আগস্ট ১৫, ২০১৭, ০১:১২ পিএম
আ.লীগের মনোনয়ন পেতেই ‘হায় মুজিব’!

চট্টগ্রাম: বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগে বরগুনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারিক সালমানের বিরুদ্ধে ‘অতি উৎসাহী হয়ে’ মামলা করায় বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবায়েদুল্লাহ সাজুকে সম্পতি দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

সম্পতি অতি উৎসাহী এসব আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন ক্ষমতাশীন দলের নেতারা। বরিশালের এই ঘটনার রেশ না কাটতেই চট্টগ্রামের বন্দর এলাকায় ফের আরেকটি ঘটনা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন আওয়ামী লীগ।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামের বন্দর এলাকার বাসিন্দা ইকবাল আলী ওরফে হাজি ইকবাল আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচির ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে দাবি করছেন হাজি ইকবাল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার (১৩ আগষ্ট) বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ও মিছিলের আয়োজন করেন ইকবাল আলী। মিছিলটি চেরাগীপাহাড় মোড় পর্যন্ত যায়। পরে প্রেসক্লাবের সামনে এসে ‘হায় মুজিব, হায় মুজিব’ বলে উন্মাদনা সৃষ্টি করেন তিনি, যা ভিডিওতে ধারণ করা হয়। তার পরনে ছিল পায়জামা, পাঞ্জাবি ও মুজিব কোট। জিঞ্জির চাকু দিয়ে তিনি শরীরে আঘাত করছিলেন, আর বলছিলেন ‘হায় মুজিব, হায় মুজিব’। এ সময় তার আরও দুজন অনুসারী শার্ট খুলে একই কাণ্ড ঘটান। তারা বঙ্গবন্ধুর বাকি খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দাবি জানান। খুনিদের আত্মীয়স্বজনদের সরকারি চাকরি না দেওয়ারও দাবি করেন। কয়েক মিনিট ধরে তাঁদের এই মাতম চলে।

তার কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছেন ফেসবুকে।

এদিকে ইকবাল আলীর দাবি, তিনি ৩৮ নম্বর দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য। তবে তার এই দাবি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াছ। তিনি বলেন, ইকবাল একসময় বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার কারণে ৮-১০ বছর আগে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইকবাল আলী চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানাধীন ৩৮ সল্টগোলা এলাকার বাসিন্দা। তিনি প্রায় ১৯ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। ২০০২ সালে তিনি দেশে চলে আসেন। স্থানীয় রাজনীতিতে নগর আওয়ামী লীগের কোনো ইউনিট কমিটিতে তার নাম নেই। তবে সৌদি আরবের মক্কা ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বলে তিনি দাবি করেছেন। তার দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা নেই। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে একখণ্ড জমি ইজারা নিয়ে তিনি ট্রাক টার্মিনাল করেছেন। সেখান থেকে ভাড়া পেয়ে সংসার চালান।

ইকবাল আলীর এই কর্মকাণ্ডের ভিডিওটি সোমবার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের চট্টগ্রাম নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিন। তিনি বলেছেন, ‘পালের গোদাসহ নিজেদের প্রচারের জন্য যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এমন তামাশা করছেন, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা জরুরি। নাহয় দিনের পর দিন আরও উদ্ভট কিছু দেখতে হতে পারে। এদের এখনই থামান।’

চট্টগ্রাম নগরের খুলশী এলাকার বাসিন্দা আলতাফ হোসেন ইকবাল ফেসবুকে প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, ‘অতি ভক্তি কিসের লক্ষণ?’ আলী আজম নামে হাটহাজারীর বাসিন্দা তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মুজিব কোট পরা এরা কারা? ১৯৭৫ সালের পরে এরা কোথায় ছিল?’ কায়সার হামিদ নামে চট্টগ্রামের আরেক যুবক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘নিজ দলে এত বড় ছাগল আমি আমার রাজনৈতিক জীবনে দেখেছি বলে মনে হয় না। পয়সা-কড়ির জৌলুশে তিনি নাকি আবার আমাদের চট্টগ্রামের বন্দর-পতেঙ্গার কান্ডারি হতে চান।’

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার ভিডিওর সমালোচনা প্রসঙ্গে ইকবাল আলী আজ বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর বাকি খুনিদের ফিরিয়ে এনে শাস্তি দিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালন করেছি। সেখানে ধর্মীয় আলোকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ করেছি। আমি তো রক্তাক্ত হইনি।’ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এমন অদ্ভুত কাণ্ড ঘটিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছি। আমাকে দেয়া হয়নি। লতিফ ভাই (এম এ লতিফ) পেয়েছেন। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চাইব না।’

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিও সম্পর্কে শুনেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মন্তব্য করার রুচি আসছে না। আমি ক্ষুব্ধ।’


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!