• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আ.লীগের সন্দেহের দৃষ্টিতে যুক্তফ্রন্ট!


বিশেষ প্রতিনিধি মে ২৪, ২০১৮, ০৩:১৪ পিএম
আ.লীগের সন্দেহের দৃষ্টিতে যুক্তফ্রন্ট!

ঢাকা : আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে কিছু রাজনীতিকের তৃতীয় শক্তি হিসেবে যুক্তফ্রন্ট গঠনের ঘোষণাকে আমলে নিচ্ছে না শাসক দল আওয়ামী লীগ। তবে এ জোটের আলোচিত রাজনীতিকদের গতিবিধি সন্দেহের চোখে দেখছে ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ড। বিএনপি ছাড়া সরকারবিরোধী অন্য কোনো জোটে যোগ দিলে ক্ষমতাসীনদের আপত্তি থাকবে না।

আলোচিত যুক্তফ্রন্টের নেতারা ১৯ মে বিএনপির ইফতারে অংশ নিয়েছেন। সেখানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঐক্যের আহ্বানও জানিয়েছেন। আলোচিত পাঁচ রাজনীতিক হলেন- গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদর রহমান মান্না।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তারা এ জোট গঠনের উদ্যোগ নেন। সম্প্রতি বি চৌধুরী বলেছেন, তাদের জোট আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ওপর প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে।

ক্ষমতাসীনরা বলছেন, ছোট দলের এসব নেতাদের জোট গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না। সরকারবিরোধী দেশি-বিদেশি একটি চক্রের ক্রীড়নক হিসেবে তারা মাঠে নেমেছেন। তারা দেশে দুর্বল ও অগণতান্ত্রিক সরকার চায়। দুর্বল সরকার হলে সেখানে তারাই সবল হিসেবে আর্বিভূত হতে পারবে।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতারা এ বিষয়ে বলছেন, গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন ও সাংগঠনিক অবস্থানের কারণে বিএনপি তাদের সামনে এখন কোনো প্রতিপক্ষই না। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের আত্মবিশ্বাস হয়েছে যে, ২০১৮’র নির্বাচনেও যদি বিএনপি না আসে, তাহলে কিছু হবে না। তাই বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ তো নয়ই, শক্ত প্রতিপক্ষও নয়।

 নেতারা বলছেন, এ অবস্থায় বিএনপি এসব বয়স্ক ও পরিচিত রাজনীতিবিদদের ওপর ভর করেছে। তাদের সামনে রেখে বিএনপি আগামী নির্বাচনের সুফল চায়। বিএনপি বুঝতে পারছে, নিজেদের সাংগঠনিক শক্তিতে আর কিছুই করতে পারবে না।

হেফাজত, কোটা আন্দোলনের মতো বিভিন্ন পক্ষের আন্দোলনে তারা ইন্ধন দিয়ে ফায়দা নিতে চাইবে। তেমনি রাজনীতিতেও এসব ‘পরিত্যক্ত’ লোককে তাদের মুরুব্বি বানিয়ে ফায়দা নিতে চাইবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, আমরা যেকোনো গণতান্ত্রিক উত্থানকে ওয়েলকাম করি। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে সব রাজনৈতিক দল জনগণের জন্য কাজ করবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এসব দল ও জোটের উদ্দেশ্য কী? অতীতে অনেকেই দলবদল করে ষড়যন্ত্র করেছে। তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে আরও সময় লাগবে।’

যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা আর মান্না ও কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার দুই বছর পর কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ ছেড়ে নতুন দল গঠন করেন।

আর মান্না সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায় সরকারের আমলে দলে সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত হন আর পরে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। আরেক শরিক জেএসডি নেতা আ স ম আবদুর রব ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঐকমত্যের সরকারে মন্ত্রী হন।

এর আগে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৮৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রধান সব বিরোধী দল বর্জন করলেও তিনি ছোট ছোট অনেক দল নিয়ে ভোটে যান এবং সে সময় বিরোধীদলীয় নেতা হন রব।

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি বানায় বিএনপি। পরে তাকে এই পদ ছাড়তে বাধ্যও করা হয়। আর সে সময় আলাদা দল গঠন করার পর তার ওপর হামলাও হয় প্রকাশ্যে।

গত ডিসেম্বরে যুক্তফ্রন্ট ঘোষণার পর এর অন্যতম শরিক মান্না বলেন, দুই জোটের বিপরীতে নতুন একটা রাজনীতিক জোট গড়ার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ছিল আমাদের। সাধারণ মানুষও সেটা চাইছে। আমরা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে পথ চলা শুরু করেছি। আমরা মানুষের কাছে যাব। আশা করছি দুই রাজনৈতিক জোটের বাইরে বৃহৎ শক্তি নিয়ে আমরা রাজনীতিতে আর্বিভূত হতে পারব।

তৃতীয় শক্তি হওয়ার ঘোষণা এর আগেও নানা সময় নানা পক্ষ থেকে এসেছে। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এটি একটি বহুল আলোচিত বিষয় ছিল। কিন্তু কার্যত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে কেউ কখনও বড় হয়ে উঠতে পারেনি। জাতীয় পার্টি ও জামায়াত নানা সময় জোট করে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসনে জিততে পারলেও সারা দেশে তাদের শক্তি নেই। আর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীতে দুটি দলের অবস্থানই শূন্যের কোটায়।

নতুন ঘোষিত যুক্তফ্রন্টের ঐক্যবদ্ধ কোনো কর্মসূচি নেই। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের সঙ্গেই অংশগ্রহণ করে তাদের সুরেই কথা বলছেন জোটের অনেকে।

এ বিষয়ে জোটের অন্যতম উদ্যোক্তা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারা স্বেচ্ছাচারী। এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে একটি বৃহৎ আকারে ঐক্য দরকার।

আমরা আমাদের মতো আন্দোলন করছি, আমরা একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলন করছি। বিএনপিও জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে। আমাদের থেকে বিএনপির বিপদ আরও বেশি। সবাই যার যার জায়গা থেকে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছি। এখানে আমাদের ঐক্য হতেই পারে, সেটা আন্দোলনের জন্য।

কিন্তু বিএনপির সঙ্গে যদি ঐক্য হয়, তাহলে তৃতীয় শক্তি হয়ে উঠার বাসনার কী হবে?- এমন প্রশ্নে মান্না বলেন, আমাদের আন্দোলন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার আন্দোলন। শেখ হাসিনার বিপক্ষে বা খালেদা জিয়ার পক্ষে নয়। বিএনপির সঙ্গে আমাদের মাখামাখির বিষয় নয়, এটা গণতন্ত্রের বিষয়। আমি আওয়ামী লীগ বিএনপিকে একই পাল্লায় মাপি।

গত বছর থেকেই নতুন জোট গড়ার তোড়জোড় করে আসছিলেন এসব নেতা। রবের বাড়িতে এক বৈঠকে পুলিশ বাধা দেওয়ার পর বি চৌধুরীর বাড়িতে বসেছিলেন তারা।

পরে সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছিলেন, বিএনপি এখন জামায়াতনির্ভর দল হয়ে উঠেছে। এ কারণে চারদিক থেকে চাপে রয়েছেন খালেদা জিয়া। বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বকে ‘বাঁচতে’ হলে আবার জিয়ার রাজনীতিতে ফিরতে হবে।

পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে জামায়াত ছাড়ারও পরামর্শ দিয়েছিলেন বিএনপির অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা। সর্বশেষ বিএনপির এক ইফতারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বি চৌধুরীকে মুরুব্বি বলে সম্বোধন করেছিলেন।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!