• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আসিয়ান সম্মেলনে সু চির শর্তে রোহিঙ্গা শব্দই বাদ


আন্তর্জাতিক ডেস্ক নভেম্বর ১৩, ২০১৭, ১০:২৫ পিএম
আসিয়ান সম্মেলনে সু চির শর্তে রোহিঙ্গা শব্দই বাদ

ঢাকা: রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান ও হিন্দুদের ওপর গণহত্যা ও জাতিগত নিধন চালাচ্ছে মিয়ানামার। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে গঠিত জোট আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্র হচ্ছে মিয়ানমার। এ কারণে জোটটির চলমান ৩১তম সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুটি প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু সম্মেলন উপলক্ষে ঘোষণা পত্রের যে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে, তাতে রোহিঙ্গা ইস্যুটি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

১৯৬৭ সালের ৮ আগস্ট দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড নিয়ে গঠিত হয় আসিয়ান জোট। তারপর থেকে ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার এবং ভিয়েতনাম সদস্যপদ লাভ করে। 

এমনকি সূচির যোগদানে পুরো সম্মেলনে রোহিঙ্গা শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ হবে না। সোমবার(১৩ নভেম্বর) ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় আসিয়ানের এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে একটি অংশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ সরবরাহের কথা বলা হয়েছে।

স্যাটেলাইটে ধরা পড়েছে রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে ফেলার পরের দৃশ্য

একই সঙ্গে ফিলিপাইনে জঙ্গিগোষ্ঠী কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেয়া ও উত্তর রাখাইনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নির্যাতিত হওয়া, তাদের নিজ ঘরবাড়িতে পুনর্বাসন করার বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে ওই ঘোষণাপত্রে।

আর ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ‘উত্তর রাখাইন’-এ ক্ষতিগ্রস্ত বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে তাও সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। সেখানকার বর্তমান অবস্থার বর্ণনাও উল্লেখ করা হয়নি। রোহিঙ্গাদের অবস্থার কোনো কথাও তুলে ধরা হয়নি। রোহিঙ্গা শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারণ করা হয়নি খসড়ায়।
 
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনায় না আনার জন্য ইতিপূর্বে যে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তার পরিপ্রেক্ষিতেই বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে আসিয়ান। অথচ ১৯৯৯ সালে যখন অং সান সু চি গৃহবন্দী ছিলেন মিয়ানমরে, তখন তিনিই আসিয়ান নেতাদের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে কথা না বলার জন্য।

ওই বছরের ১৩ এপ্রিল থাইল্যান্ডের দ্যা নেশন পত্রিকায় উপ-সম্পাদকীয় বিভাগে লিখেছিলেন, ‘ আসিয়ান রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কোনো রাষ্ট্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যহত হলে, তা এড়িয়া যেতে পারে না অন্য রাষ্ট্রগুলো। রাষ্ট্রের বিষয়ে কথা না বলা মানেই হচ্ছে সহযোগিতা না করা’।

আর সেই সু চির অনুরোধেই এবার আসিয়ান সম্মেলনে রাখাইনের নির্যাতিত রোগহিঙ্গাদের বিষয়ে কথা বলছে না আসিয়ান।

উল্লেখ, গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা শুরু করে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। গণহত্যা চালাতে এ পর্যন্ত সেখানে কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন বহু নারী। এ অবস্থায় প্রাণে বাঁচতে দশ লাখেরও বেশি মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

মিয়ানমারের ওই অভিযানকে জাতিগত নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস একে জাতিগত নিধন হিসেবে ঘোষণা করে। গণহত্যার সম পর্যায়ে বলে মন্তব্য করে।

এদিকে সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে বিষয়টি উল্লেখ না করলেও আসিয়ানের বেশিরভাগ সদস্য মুসলিম দেশ হওয়ায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি আলোচনায় থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সম্মেলনে অংশে নেয়া অন্যতম সদস্য দেশ মালয়েশিয়া রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বেশ সোচ্চার রয়েছে।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!