• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘ইসি পুনর্গঠনে খালেদার প্রস্তাব স্পষ্ট নয়’


এমএ ইউসুফ ডিসেম্বর ৪, ২০১৬, ১২:২১ পিএম
‘ইসি পুনর্গঠনে খালেদার প্রস্তাব স্পষ্ট নয়’

রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এর মধ্যে আছে সরকার দলীয় লোকদের অন্তর্কোন্দল, রোহিঙ্গা ইস্যু ও লুই আই কানের নকশার বাস্তবায়ন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর হাঙ্গেরি সফরে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি, আছে তিস্তা চুক্তিও। তবে যে বিষয়টির ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো তার মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন ও মধ্যবর্তী নির্বাচন অন্যতম।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধী দল ও ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরকারপ্রধানের প্রতি কিছু প্রস্তাবনা পেশ করেছেন। প্রস্তাবনা বিবেচনার জন্য চলছে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি। সব কথার জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার (৩ ডিসেম্বর) গণভবনে ডাকা সংবাদ সম্মেলন থেকে।

তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন বিষয়ে ওনার (খালেদা জিয়া) প্রস্তাব স্পষ্ট নয়। উনি এই প্রস্তাব দেয়ার আগে নিজেরা ক্ষমতায় থাকতে কিভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিলেন, সে বিষয়টি স্মরণ করা উচিত ছিল। উনি (খালেদা জিয়া) রাষ্ট্রপতির কাছেও প্রস্তাব দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ বিষয়ে আমার কিছু করার নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন বিষয়ে প্রস্তাব দেয়ার আগে মানুষ পুড়িয়ে মারার জন্য জাতির কাছে ওনার (খালেদা জিয়া) ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। উনি নির্বাচনে অংশ নেননি। এরপর উনি মানুষ খুন করে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতে আন্দোলন শুরু করলেন। আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা। যেকোনো প্রস্তাব দেয়ার আগে তার তো জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল।

তিনি বলেন, ‘২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে অনেক সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। অনেক রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র পুড়িয়েছে, ইঞ্জিনিয়ারকে আগুনে ফেলে দিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার ২০ জন সদস্যকে হত্যা করেছে। আগে এসবের জবাব উনি (খালেদা জিয়া) জাতির কাছে দিক, তারপর তার প্রস্তাব নিয়ে কথা বলব।’

শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন কমিশন রয়েছে, নির্বাচনও হচ্ছে। বিএনপি সিটি করপোরেশন নির্বাচন করছে, আবার জেলা পরিষদ নির্বাচন করছে না। অর্থাৎ বিএনপির যখন যে নির্বাচন করতে মন চায় তখন সেটা করে, যখন মন চায় না তখন করে না। তারা নির্বাচনে জয়ী হলে কমিশন ভালো আর হারলেই কমিশন খারাপ। নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট নয়। তবে তারা যেহেতু একটি প্রস্তাব দিয়েছে, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি যে পদক্ষেপ নেবেন, সেটাই হবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে তিস্তা পানিচুক্তি প্রসঙ্গও। এ নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে তিনি জানান। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো আগে এগিয়ে আসা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তাকে বহনকারী বিমানের তুর্কমেনিস্তানে জরুরি অবতরণের ঘটনা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বন্দী বীর’ কবিতার একটি লাইন উল্লেখ করে হাসতে হাসতে বলেন, ‘জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য।’ এর পরই তিনি বলেন, ‘এটা একটা যান্ত্রিক দুর্যোগ ছিল। দুর্ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এখন বেঁচে আছি, সহি-সালামতে ফিরে এসেছি, সবার দোয়া চাই।’

‘তবে অ্যাকসিডেন্ট যান্ত্রিক ত্রুটিতেও হতে পারে, আবার মনুষ্য সৃষ্ট কারণেও হতে পারে’ মন্তব্য করে নিজের জীবনের ওপর নানা হামলার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কোটালীপাড়ায় বোমা পেতে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব ঘটনার আগে একটি দলের নেতাদের বক্তব্যগুলো শুনলে অনেক কিছুই বোঝা যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশে হত্যাকারীর বিচার না করে পুরস্কৃত করা হয়, যে দেশে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানানো হয়, সে দেশে কারই বা জীবনের নিরাপত্তা থাকে। কাজেই ঝুঁকির মধ্য দিয়ে আমি চলছি। যত দিন আমার আয়ু আছে তত দিন কেউ আমাকে কিছু করতে পারবে না। কারণ দেশবাসীর দোয়া আছে। 

তবে দেশের রাষ্ট্রপতি ও সরকারপ্রধানের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য আলাদা নতুন উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা ‘বিলাসিতা’ বলে নাকচ করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির জন্য নতুন এয়ারক্রাফট কেনার মতো বিলাসিতা করার সময় আসেনি। গরিবের ঘোড়া রোগ থাকতে নেই- ঘোড়া পালতেও অনেক খরচ। সেটা আমরা চাই না। সাধারণ মানুষ যেটাতে চড়ে, আমরাও সেটাতেই চড়ব। তবে নির্দিষ্ট কারো জন্য নয়, যাত্রীদের জন্য বিমানকে আধুনিকায়নের ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমানের উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী তার আসন্ন ভারত সফর সম্পর্কে বলেন, এ সফরে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হবে। এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করি সমস্যার সমাধান হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে দেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এখন আর মধ্য নেই, মধ্য পার হয়ে গেছে। আমরা তিন বছর পার করছি। মধ্যবর্তী যদি বলেও থাকেন, সেটা পরবর্তীর বিষয়ে বলেছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘স্বপ্ন দেখা ভালো।’

মিয়ানমারে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে এসে বাংলাদেশে কেউ ঠাঁই পাবে না বলে সংবাদ সম্মেলনে সতর্ক করে দেন প্রধানমন্ত্রী।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সেখানে ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে বাংলাদেশে এসে কেউ আশ্রয় পাবে না। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, সেখানে মানুষ কষ্টে আছে। তবে আমি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনদের বলে দিয়েছি, মিয়ানমারে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের কেউ যদি বাংলাদেশে ঢুকে থাকে, তাহলে তাদের যেন গ্রেফতার করা হয়।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!