• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কামাররা


ভোলা প্রতিনিধি আগস্ট ১৮, ২০১৮, ০৫:৩৭ পিএম
ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কামাররা

ছবি: সোনালীনিউজ

ভোলা : ভোলা শহরের বিভিন্ন স্থানে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কামার শিল্পীরা। দম ফেলবারও সময় পাচ্ছে না তারা। দিন রাত টুং টাং শব্দে মুখরিত হচ্ছে হাট বাজারসহ কামারবাড়িতে। শুধু ভোলা জেলায় নয় উপজেলাগুলোর বিভিন্ন বাজারের কামার পাড়াগুলো চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। কামারের দোকানগুলোতে শোভা পাচ্ছে গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন পশু জবাইয়ের উপকরণ।

দিনরাত সমান তালে তারা এখন ব্যস্ত ছুরি, চাপাতি, দা, বটি, ছোট চাকু ও জবাই ছুরি নতুন তৈরি ও শান দেয়ার কাজে। কোরবানি ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন কামাররা। ক্রেতারাও তাদের পছন্দের দা, বটি, ছুরি, চাপাতি, কুড়াল, কেনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কামার পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, ভোরের আলো ফোটার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত একাধার কাজ করে যাচ্ছে তারা।

সারা বছর কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদের এ সময়টা বরাবরই ব্যস্ত থাকেন তারা। কারিগড়রা জানান সারা বছর যত পণ্য বিক্রি হয় কোরবানির ঈদেই বিক্রি হয় তার সম-পরিমাণ। কারণ পশু জবাই করার জন্য ধারালো অস্ত্রের প্রয়োজন। আর আগের পুরাতন অস্ত্র অনেকেই রাখেন না। সেই জন্য প্রতিবছর নতুন নতুন অস্ত্রের প্রয়োজন পরে।

ভোলার কালিনাথ রায়ের বাজার কামার পল্লী, ইলিশা বাজার, পরানগঞ্জ বাজার, ভেলুমিয়া বাজার, ঘুইংগারহাট, বাংলাবাজার, খাসের হাট, গজারিয়া বাজার, রাড়ির হাট বাজারসহ কামারদের বাড়িতে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দা, বটি, গরু জবাই ছুরি, চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করছে কামাররা। তাছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে অস্থায়ী কামারদের দোকান।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কাচামাল তথা লোহা, স্প্রিং কিনে সেগুলো আগুনে পুরে দা, বটি, চাপাতি, চাকুসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করছে কামাররা। বর্তমান যুগে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দশা চললেও ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে জমে উঠে এ শিল্প। ভোলা সদর কালিনাথ রায়ের বাজার গুপি কর্মকার জানান, আমাদের পূর্ব পুরুষেরা ৪০ বছর ধরে এ কাজ করে আসছে।

এক সময় কামারদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে ফলে আমাদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হারাচ্ছে। হয়তো বা এক সময় এই পেশা আর থাকবে না।

সারা বছর তেমন কোনো কাজ না থাকলেও কোরবানির সময় আমাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। তবে এ বছর তেমন একটা দেখছি না। কামার শিল্পী কোমল কর্মকার জানান, এই পেশায় আমরা যারা আছি তারা খুবিই অবহেলিত।

বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি হলেও সে অনুযায়ী আমরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছি না। এই পেশায় থেকে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। তিনি আরো জানান, আমাদের প্রতিটি দা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা, ছোট ছুরি ১০০/১২০ টাকা, বটি ভালোটা ১২০০/১৫০০ টাকা ও নরলাম ৩০০/৫০০ টাকা, চাপাতি ৬০০/৭০০ টাকা, জবাই ছুরি ভালোটা ৭০০/৮০০ টাকা ও নরমালটা ২০০ থেকে ৪০০ টাকাসহ বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে লোহার পাশাপাশি, স্প্রিং কিংবা স্টিলের ছুরি চাকুও লোকজনকে আকৃষ্ট করছে বলে জানান তিনি।

ভোলা ঘুইংগারহাট বাজার থেকে বটি ক্রয় করতে আসা মো. রফিক মাষ্টার জানান, দুটি বটি ৮৫০ টাকা দিয়ে ক্রয় করলাম। দামটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে অন্যান্য বছরের তুলনায়। ক’দিন পরই ঈদ তাই দামটা একটু বেশি হলেও বাধ্য হয়েই ক্রয় করতে হলো বলেও জানান তিনি।

এদিকে নতুন সরঞ্জামাদি কেনা ও মেরামত বাবদ একটু বেশি মূল্য ধরার বিষয়ে কামার দোকানিদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, বর্তমানে কয়লা ও রডের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাই বাধ্য হয়েই মূল্য একটু বৃদ্ধি করতে হয়েছে। তবে ঈদ ছাড়া অন্য সময় একটু কম রাখা হয় বলে স্বীকার করেন কামার শিল্পীরা। কামার শিল্পীরা মনে করেন সরকারি কোনো আর্থিক সহযোগিতা না পেলে হয়তো এ শিল্প একদিন হারিয়ে যাবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!