• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের আনন্দ শুধু চেয়ে দেখবেন তারা


শেখ আবু তালেব, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৭, ০৩:৪৮ পিএম
ঈদের আনন্দ শুধু চেয়ে দেখবেন তারা

ঢাকা: জীবনের নির্মমতা শুধু তারাই দেখবে এবার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এপার থেকে জীবন বাঁচাতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার অনেক মানুষই অথৈ পানি পারি দিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন তখনকার বার্মা তথা মিয়ানমারে। সমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় এপার থেকে অনেক মানুষ শুধু ব্যবসা ও চাকরির জন্য যেতেন রেঙ্গুনে। এখন সেই রেঙ্গুনের লোকজনই জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে আশ্রয় খুজঁছে বাংলাদেশে।

মিয়ানমারের রাজধানী রেঙ্গুন তখন স্থান পেয়েছিল কবি সাহিত্যিকদের রচনায়। হিন্দি ও উর্দু বেশ কয়েকটি গানেও পাওয়া যায় রেঙ্গুনের কথা। তখনকার জনপ্রিয় একটি গান ছিল ‘ মেরে পিয়া গিয়া..রেঙ্গুন..কিয়া হ্যায় ওঁহাছে টেলিফুন..তুমহারি ইয়াদ সাতাতি হ্যাঁয়...হাম ছোরকে হিন্দুস্তান বহুত পাস্তায়ে...’ ‘আমার প্রিয় (স্বামী) গিয়েছে রেঙ্গুন..সেখান থেকে করেছে টেলিফোন..তোমার স্মৃতি কষ্ট দেয়..(স্বামীর উত্তর ছিলো)..আমি হিন্দুস্তান ছেড়ে অনেক পস্তাচ্ছি (ভুল করে অনুশোচনা করেছি)।’

জনপ্রিয় এই গানের শিল্পী ছিলেন সামশাদ বেগম। এর শরতের উপন্যাসেও পাওয়া যায় রেঙ্গুন শহরের কথা। ভারতীয় উপমহাদেশে চিকিৎসকরা পরিবেশ বদলে জন্য বললে, তখন সবাই ছুটে যেতেন বার্মার রেঙ্গুনে। চাকচিক্য ও বিদেশি বেনিয়াদের চলাচল থাকায় অঞ্চলটি অনেক সমৃদ্ধ ছিল।

সেই অঞ্চলের একটি এলাকার আদি বাসিন্দা বা ভূমিপুত্র হলো রোহিঙ্গা মুসলিম। আরব বেনিয়াদের পদচারণায় বার্মিজ অঞ্চলে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কৃষি ও মৎস্য নির্ভর পেশা হলো রোহিঙ্গাদের। এর পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবসায়ীক কার্যক্রম করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। মিয়ানমারের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পায় না রোহিঙ্গারা। আন্তর্জাতিক চাপে  রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিলেও সরকারি চাকরিতে তাদের কোনো স্থান নেই। এমনকি রোহিঙ্গারা দশম শ্রেণির পরে পড়াশুনাও করতে পারেন না।

প্রচুর ফসলি জমি থাকায় এতো কিছুর পরও তারা টিকে আছেন জীবনের লড়াইয়ে। বাংলাদেশের সীমন্ত লাগোয়া জেলার মাছ ব্যবসায়ীরা মূলত রোহিঙ্গাদের শিকার করা মাছের ওপর ভরসা করেই টিকে আছেন। সেই মাছ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম হয়ে চলে আসে ঢাকার মানুষদের খাবার টেবিল ও অভিজাত রোস্তেরাঁগুলোতে।

শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে থেমে থেমেই তাদের উপর নেমে আসছে নারকীয় হত্যাকাণ্ড। সেই রোহিঙ্গারা এখন প্রতিবেশি মুসলিম দেশ আমাদের বাংলাদেশে। মুসলিম দাবি নিয়ে উঠেছে আমাদেরই বাসার পাশে। ঈদ-উল আজহার সময়ে তাদের বাসায় এখন চলতো ঈদের আমেজ। কিন্তু আজ তারা খোলা আকাশের নিচে। জীবন যেখানে বিপন্ন, সেখানে ঈদের হাসি তাদের চেহারায় দেখা বিলাসী কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

আমরা যেখানে ঈদের গরু কোরবানি করে সবার মাঝে গোশত বিলিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিবো। তখন হয়তো তারা বুভুক্ষের মতো তাকে থাকবে আমাদের দিকে। নতুন পোশাক পড়ে যখন সবাই ঈদগাহে যাবো..পাশেই দেখা মিলবে জীর্ণ কাপড়ে জায়নামাজে বসে আছেন রোহিঙ্গারা।

সবাই ঈদের আনন্দ উদযাপনের সময়ে, তাদের দু’চোখ শুধু নির্বাক হয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করবে না। চোখের সামনে ঈদ হলেও, তাতে অংশ নেয়ার সুযোগ তাদের দিল না মিয়ানমার সরকার। সীমান্তে নাফ নদীর ধারে ও আশ্রয় শিবিরেই অন্যান্য সাধারণ দিনের মতোই কাটে ঈদের দিনও।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব/জেএ

Wordbridge School
Link copied!