• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরাঞ্চলে পানিশূন্য মরাখাল ৫০ নদী


ফরহাদুজ্জামান ফারুক, রংপুর মার্চ ৬, ২০১৭, ১১:১৯ এএম
উত্তরাঞ্চলে পানিশূন্য মরাখাল ৫০ নদী

রংপুর : পানির অভাবে নাব্যতা হারিয়ে রংপুর বিভাগে ৫০টি নদী এখন মৃত্যুর কোলে দোল খাচ্ছে। সীমান্তবর্তী দেশ ভারত উজানে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু অর্ধশতাব্দী আগেও এসব নদীতে ছিল উত্তাল যৌবনে পানির প্রবাহ ও প্রাণের স্পন্দন। আর এখন সেই যৌবনে ভাটা পড়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে নদীর অস্তিত্ব। মিলছে না পানিহীন নদীর ঠিকানাও।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উত্তরের প্রাচীনতম জনপদ রংপুর বিভাগের রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় রয়েছে - ধরলা, করতোয়া, দুধকুমার, জলঢাকা, সতী ঘাঘট, নীলকুমার, বাঙালী, বড়াই, মানাস, কুমলাই, ধুম, বুড়িঘোড়া, সোনাভরা, হলহলিয়া, লহিতা, ঘরঘরিয়া, নলেয়া, জিঞ্জিরাম, ফুলকুমার, কাঁটখালী, সারমারা, রায়ঢাক, যমুনেশ্বরী, চিতনী, মরা করতোয়া, ইছামতি, আলাই, ঘাঘট, তিস্তা, কুমারীসহ প্রায় ৫০ নদী এখন মৃত প্রায়। এসব নদীর অধিকাংশই নাব্যতা বিলীনের মুখে। কোথাও কোথাও নেই হাটুজল।  তাই শুকিয়ে যাওয়া এসব নদীর বুকে পাল তোলা নৌকার বদলে পায়ে হেটে চলছে মানুষ।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা। পরাণপাড়া গ্রামের মশিউর রহমান, সরকার মনজুরুল মান্নান ও দিপক সাহা জানান, ‘একটা সময় ছিলো, যখন তিস্তার একুল-ওকুলে খরস্রোত ছিলো। কিন্তু আজ দু’কুলেই শুধুই ধু ধু বালুচর। মানচিত্র থেকে এখানকার বেশ কিছু নদী হারিয়ে যেতে বসেছে’।  

রংপুর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরে গঙ্গাচড়া উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মধ্যে ৭ ইউনিয়নই তিস্তা নদী বেষ্টিত। বর্তমান মৌসুমে ধু ধু বালুচর। বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমাদের ছোট নদী’ কবিতার মতোই এখন কৃষাণ কৃষাণীরা লাঙ্গল জোয়াল কাঁধে গরুর পাল নিয়ে পার হয় প্রতিনিয়ত।

অন্যদিকে সামান্য বর্ষার ছোবলে ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করা করতোয়াও এখন পানি শুন্যতায় ধুকে ধুকে কাঁদছে। কোথাও নেই সেই প্রবাহ। নেই ডিঙ্গি নৌকা। এ নদী ক্ষীণ প্রবাহ গাইবান্ধা ও বগুড়ায় প্রবেশ করে কিছুট্ গতি পাওয়ার চেষ্টা করলেও তা এখন শুধুই ইতিহাস।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলা দিয়ে এক সময় প্রবাহিত আড়াইকুমারী নদী এখন আর নেই। এমন প্রায় অর্ধশতাধিক নদীতে পানির অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। ভারত উজানে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় নদীমাতৃক বাংলাদেশের উত্তরের জেলার নদ-নদী এখন পানিশুন্য।

এব্যাপারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নদী বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘এসব নদী পুণরুদ্ধার করতে হলে অবৈধ বাঁধ অপসারণ, নদীর তলদেশ খনন, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে উৎস মুখ উন্মোচন করে কৃত্রিম ক্যানেলের মাধ্যমে ছোট নদীগুলোর সঙ্গে বড় নদীর সংযোগ সাধন করা গেলে কৃষিপ্রধান উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো আবার যৌবনে ফিরবে। ফের দেখা মিলবে খরস্রোতায় নদীপাড়ের মানুষের ভাঙ্গাগড়ার খেলা’।

এসময় তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে পানি প্রদানের আশ্বাসে বসে থাকলে কোনো লাভ হবে না। এখন প্রতিশ্রুতি আমরা একাধিকবার কান পেতে শুনেছি। কিন্তু কিছুই পাইনি, শুধু শুধু দিয়ে যাচ্ছি। এজন্য আমাদের সরকারকেই কৃষি নির্ভর অর্থনীতির কথা ভেবে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে’।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!