• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উপরের প্রেসারে ভাস্কর্য সরাচ্ছি: মৃণাল হক


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৬, ২০১৭, ০৩:০৬ এএম
উপরের প্রেসারে ভাস্কর্য সরাচ্ছি: মৃণাল হক

ঢাকা: চাপের মুখে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনের ভাস্কর্য অপসারণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এর নির্মাতা ভাস্কর মৃণাল হক। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দিনগত মধ্যরাতে ভাস্কর্যটি সরানোর কাজ চলার সময় সেখানে অবস্থান করছিলেন মৃণাল হক।

জানতে চাইলে সে সময় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকের কাছে এসে বাইরে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

মৃণাল হক বলেন, ‘উপরের প্রেসারে ভাস্কর্যটি সরাতে হচ্ছে। আমাকে বলা হয়েছে সরাতে, চাপ দেয়া হয়েছে।’ কে বা কাদের চাপে ভাস্কর্য সরানো হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকের অনেক রকম ক্ষমতা আছে। আমি বানিয়েছিলাম, আমাকে সরাতে বাধ্য করা হচ্ছে।’

এরপর মৃণাল হক আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমি মাপ চাইছি। আমার হাত-পা বাঁধা।’ তবে ভাস্কর্যটি এনেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করা হতে পারে বলে জানান তিনি।

ভাস্কর্য অপসারণে তার উপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে মৃণাল হক বলেন, ‘অন্য কেউ সরাতে গেলে ভেঙে যেতে পারে, নষ্ট হতে পারে সেজন্য এসেছি।’

এর আগে রাত সাড়ে ১২টার দিকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গন সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য সরানোর কাজ শুরু হয়। এ খবর বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো লাইভ সম্প্রচার করলে সেখানে উপস্থিত হন উৎসুক জনতা। তার আগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকে অবস্থান নেয় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী।

রাত পৌনে ১২টার দিকে প্রধান ফটক বন্ধ থাকা অবস্থায় ভেতরে সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে ন্যায়বিচারের প্রতীক গ্রিক ভাস্কর্য অপসারণের কাজ করতে দেখা যায়। ভাস্কর্যটির পাদদেশে কয়েকজন শ্রমিককে অবস্থান করতে দেখা যায়।

গণমাধ্যমে ভাস্কর্য সরানোর খবর প্রচার হয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে অনেকেই। ঘটনাস্থলে সে সময় অবস্থান করছিলেন ভাস্কর্যের নির্মাতা ভাস্কর মৃণাল হক।

এসময় সুপ্রিম কোর্টের বাইরে অবস্থান নেয় অর্ধশতাধিক ছাত্র-জনতা। তারা ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা ফটকের বাইরে মিছিলও করে। এসময় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থাকে দেখা যায়।

উল্লেখ্য, এর আগে বাংলাদেশে কওমি মাদরাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এই ভাস্কর্য অপসারণে দাবি জানিয়ে আসছিল। সংগঠনটির আমির আহমদ শফি গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, গ্রিক দেবির মূর্তি স্থাপন করে বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যে আঘাত করা হয়েছে। তবে এমন বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তবে গত ১১ এপ্রিল রাতে গণভবনে কওমী মাদরাসার ওলামাদের সঙ্গে বৈঠকে হেফাজতের আমির আহমদ শফির উপস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে অভিমত দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যুক্তি উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে একটি বিষয় এসেছে আমাদের হাইকোর্টের সামনে গ্রিক থেমেসিসের এক মূর্তি লাগানো হয়েছে। সত্য কথা বলতে কি আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। কারণ গ্রিক থেমেসিসের মূর্তি আমাদের এখানে কেন আসবে। এটাতো আমাদের দেশে আসার কথা না। আর গ্রিকদের পোশাক ছিল এক রকম, সেখানে মূর্তি বানিয়ে তাকে আবার শাড়িও পরিয়ে দেয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে নান্দনিকতার পাশাপাশি পাশে ঈদগাহের অবস্থানকে যুক্তি দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সোনালীনিউজ/এন

Wordbridge School
Link copied!