• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক মাস পেরিয়ে গেলেও সুদহার কমেনি


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৩, ২০১৮, ০৯:৫৫ পিএম
এক মাস পেরিয়ে গেলেও সুদহার কমেনি

ঢাকা : সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বেসরকারি খাতের ব্যাংক উদ্যোক্তারা মিলে ব্যাংকঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে উদ্যোগ নিলেও তার কোনো প্রতিফলন নেই। উদ্যোগের এক মাস পরও চড়া সুদে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আশায় আছেন, ব্যাংকঋণের সুদহার কমবে।

উচ্চ সুদহারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে শিল্প-কারখানায় সরবরাহ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম। বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হবে এলএনজি গ্যাস। ফলে ব্যবসায় পরিচালন ব্যয় বাড়বে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার বড় সাফল্য পেলেও শিল্প-কারখানাগুলোতে সঙ্কট কাটেনি। এতে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকঋণের চড়া সুদ ব্যবসায়ীদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাংকঋণের সুদহার নামিয়ে আনতে দু’দফা তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে যত দ্রুত সম্ভব ঋণের সুদহার কমাতে হবে।

গত ৩০ মার্চ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈঠক করেন বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস-বিএবি নেতাদের সঙ্গে। রাজধানীর গুলশানে বিএবি কার্যালয়ের ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সরকারি আমানতের অর্ধেক রাখা হবে বেসরকারি ব্যাংকে। এরপর পহেলা এপ্রিল রাজধানীর একটি হোটেলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, বিএবি সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার, বিশিষ্ট শিল্পপতি সালমান এফ রহমানসহ সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিরা এক বৈঠক করেন।

ওই বৈঠকে ব্যাংকঋণের সুদহার কমাতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়। সরকারি আমানতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অংশীদারিত্ব বাড়ানো, বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর নগদ জমার হার-সিআরআর এক শতাংশ কমানো এবং ব্যাংকগুলোর অগ্রিম আমানত হার সমন্বয় করার সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে তার সুফল পেতে সময় লাগবে। রাতারাতি এর সুফল পাওয়া যাবে না।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, পৃথিবীর অনেক দেশে ব্যাংক খাতের সিদ্ধান্ত মাঠ পর্যায়ে অল্প সময়েই সুফল দেয়। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো সিদ্ধান্ত নিলে রাতারাতি ব্যাংক খাতে তার প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও এর সুফল পেতে সময় লাগে। এতে দেখা যায়, সিদ্ধান্ত অনেক সময় কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।

ব্যাংকগুলো স্বল্প সুদে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নিতে পারে এজন্য রেপোর সুদহারও কমানো হয়েছে। সিআরআর হার কমানোর ফলে গত ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বাজারে গেছে। কিন্তু এতেও ঋণের সুদহার কমছে না। প্রতিটি ব্যাংক এরপরও আমানতের সুদহার বাড়িয়ে তারল্য সংগ্রহ করছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সিআরআর হার কমিয়ে তহবিল বাড়ানো গেছে। তবে সামগ্রিক তহবিল ব্যয় কমানো যায় না। এতে ঋণের সুদহার আদৌ কমবে কি না প্রশ্ন আছে।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাশেম খান এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা আশায় আছি, ব্যাংকঋণের সুদহার সহনীয় হবে। এতে বিনিয়োগ চাঙ্গা হবে। অন্যথায় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে যাবেন না। আর বিনিয়োগের সুযোগ না হলে অর্থ বিদেশে চলে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!