• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এদেশ কি বড় দেশগুলোর স্বার্থ উদ্ধারের জায়গা


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৯, ২০১৭, ১১:১৬ এএম
এদেশ কি বড় দেশগুলোর স্বার্থ উদ্ধারের জায়গা

ঢাকা : তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, বাংলাদেশ কি ভারত, চীন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তি ও ক্ষমতাধর বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর খেলাধুলা ও স্বার্থ উদ্ধারের জায়গা হবে!

তাদের ময়লা আবর্জনা রাখার জায়গা হবে কি বাংলাদেশ? তারা নিজেদের স্বার্থরক্ষা করার জন্য বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

গতকাল রোববার (০৮ অক্টোবর) রাজধানীর পল্টনের মুক্তি ভবনে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের গ্যাসসম্পদ, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং সরকারি পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এ প্রশ্ন রাখেন তিনি। এসময় তিনি ২০১৬ সালে জ্বালানি খাতে সরকারের গৃহীত মহাপরিকল্পনার নানামুখি সমালোচনা করেন। মতবিনিময় সভাটির আয়োজন করে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

আনু মুহাম্মদ বলেন, বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে এই মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছে সরকার। এই পরিকল্পনা যদি ছক অনুযায়ী এগোতে থাকে, তাহলে কিছুদিন পরপর এইভাবেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হতে থাকবে। জনগণের পকেটের টাকা নিয়ে বাড়তি দামের ভর্তুকি দেওয়া হবে।

‘দেশে বিদেশি গোষ্ঠিগুলোর স্বার্থরক্ষার জন্যই এই মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার’ এই দাবি করেন আনু মুহাম্মদ।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথমে যখন বিদেশি সংস্থাগুলো দেশে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে আসে তখন বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল উৎপাদন খরচ কম হবে, জনগণ অল্প টাকায় এইসব (জ্বালানি)  সুবিধা পাবে। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পরেই দেখা যায়, উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আর এটাই হওয়া স্বাভাবিক ছিল। কেননা বিদেশি কোম্পানিগুলো সীমাহীন মুনাফা লোটার জন্যই বাংলাদেশে এসেছে।

গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের টাকা দিয়ে বাপেক্স ৮ থেকে ১০ বছর অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাতে পারে বলে উলে­খ করে তিনি বলেন, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। যা দিয়ে বাপেক্স ৮-১০ বছর গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান চালাতে পারবে। কিন্তু তা না করে সরকার বিদেশি কোম্পানিগুলোকে কাজ দিচ্ছে তাদের স্বার্থরক্ষার জন্য।

নিজেদের সক্ষমতা না বাড়িয়ে সরকার বড় বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছে মন্তব্য করে আনু মুহাম্মদ বলেন, রূপপুর ও রামপালের মতো মেগা প্রজেক্টের কাজ করছে সরকার। এইসব প্রজেক্টে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা হলে বিদেশি কোম্পানিগুলো কোনো দায় নেবে না। এমন বিধান রেখেই সরকার চুক্তি করছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনা হলে এর ভয়াবহতা কী হবে তা কল্পনাও করা যায় না। তাছাড়া এইসব প্ল্যান্ট থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের দামও অনেক বেশি হবে।

‘সরকার কী কারণে বলছে দেশে গ্যাসের সংকট? এই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বিএনপির আমলে ভারতে গ্যাস রপ্তানি করার জন্য যেমন বলা হতো বাংলাদেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে, ঠিক একই কায়দায় বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থার স্বার্থরক্ষা করতেই সরকার বলছে দেশে গ্যাসের সংকট।

তিনি আরও বলেন, আমরা যখন সরকারকে এসব অনিয়মের কথা বলি তখন আমাদের বলা হয় মিয়ানমারও তো একই কায়দায় গ্যাস উত্তোলন করে এবং বিদ্যুৎ  উৎপন্ন করে থাকে!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মিয়ানমারের মতো দেশ কি বাংলাদেশের জন্য মডেল হতে পারে? দেশটিকে ভারত, চীন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের স্বার্থে ভাগ করে নিয়েছে। এতো প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্তে¡ও দেশটিতে লোডশেডিং ও দারিদ্র্য বেশি। সেই দেশটি বাংলাদেশের জন্য রোল মডেল হয় কিভাবে? এইসব কারণেই তো রাখাইনে রোহিঙ্গা সমস্যার সৃষ্টি।

তিনি মন্তব্য করেন, এইসব দেশ রোহিঙ্গাদের দিয়ে বাইরে থেকে বাংলাদেশের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। একইভাবে দেশের ভিতরে রামপাল ও রূপপুরের মতো প্রকল্প করেও সমস্যা করছে।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে এ সময় আনু মুহাম্মদ বলেন বলেন, আপনি সব জায়গায় বলেন আমাদের সক্ষমতা আছে। আমরা করতে পারি। কিন্তু গভীর সমুদ্রে কেন আমরা নিজেরা গ্যাস অনুসন্ধান করতে পারি না? এইক্ষেত্রে আমরা কেন নিজেদের সক্ষমতা অর্জন করতে পারিনি?

মতবিনিময় সভায় এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম ও  কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!