• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এলাকায় গিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন : প্রধানমন্ত্রী


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২৬, ২০১৬, ০৮:৩৫ পিএম
এলাকায় গিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন : প্রধানমন্ত্রী

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য দলীয় সংসদ সদস্যদের  নির্দেশ দিয়েছেন। এজন্য সরকারে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে নিয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের জরুরি সভায় শেখ হাসিনা এই নির্দেশ দেন। সভা শেষে দলীয় সদস্যদের নির্বাচনী এলাকায় ফিরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন সংসদ নেতা। এসময় একাধিক সংসদ সদস্য মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করলে প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে কোন বিরোধে না জড়ানোর আহ্বান জানান।

সভায় প্রধানমন্ত্রী এখন থেকেই আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্ততি গ্রহণের জন্য সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, নির্বাচনের আর মাত্র দুই বছর তিন মাস বাকি আছে। তাই এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য এলাকায় গিয়ে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোরও নির্দেশ দেন তিনি। 

তিনি সজাগ ও সতর্ক থেকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বিরোধী জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের সব অঞ্চলে শুধু জঙ্গীবাদবিরোধী কমিটি গঠন করলেই চলবে না, এসব কমিটিগুলোকে কার্যকর করে নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। সর্বত্র এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সারাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটি গঠনে দলীয় সংসদ সদস্যদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে নিয়ে এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলতে হবে। এগুলোকে সত্যিকার অর্থেই কার্যকর করে তুলতে হবে। 

তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িতদের পাশাপাশি এদের কারা মদদ দিচ্ছে, বিপথে চালিত করছে, অর্থ-অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে সেসব মূল হোতাদের আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উৎস খুঁজে বের করে একে পুরোপুরি দমন করতে চায়। এজন্য অন্য সবার মতো সংসদ সদস্যদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।           

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্যও দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে যে অভিন্ন খুতবা দেওয়া হয়েছে, সেটি সব মসজিদে সঠিকভাবে পাঠ করা হচ্ছে কী না- সেটি নিশ্চিত করতে হবে। 

‘বর্তমানে যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ চলছে, সেটি প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা নয়’-শোলাকিয়ার খতিব ফরিদ উদ্দিন মাসউদের নেতৃত্বে দেশের এক লাখ আলেমের যৌথ বিবৃতিও দেশজুড়ে প্রচার করতে হবে। এটি নিশ্চিত করতে সংসদ সদস্যদেরও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কেউ আর যাতে ইসলামের নামে জঙ্গিবাদে যুক্ত না হয়, বিপথে না যায়- অভিভাবক ও শিক্ষকদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সংসদ সদস্যদের কার্যকর ভূমিকা পালনেরও নির্দেশ দেন তিনি।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, সরকারের যেসব উন্নয়ন কাজ হয়েছে, আরো কি কি উন্নয়ন কাজ করা হবে- সেগুলো বার বার জনগণের মাঝে ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে। নির্বাচনের তিন মাস আগেই দলকে পুরোপুরি প্রস্তুত রাখতে হবে। সেজন্য এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। এ সময় এমপিদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা গ্রুপিং সৃষ্টি না করার নির্দেশ দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের জন্য কাজ করার তাগিদ দেন। এছাড়া সভায় জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। 

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন আইন অনুযায়ী হবে, এবছরই হবে। এসময় প্রধানমন্ত্রী সংরক্ষিত আসনের নারী এমপিদের নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা তৈরি না করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, নারী সংসদ সদস্যরা দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। মহিলা আসনে যেসব সংসদ সদস্য আছেন, তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকা তৈরি করার দরকার নেই। তাদেরকে আমি মনোনয়ন দেবো না। আপনাদেরকে যেজন্য সংসদ সদস্য বানিয়েছি সেই সংগঠন গোছানোর কাজ করুন। নিজে নিজে সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়া যাবে না, মনোনয়ন দেবো আমি। কে মনোনয়ন পাবে সেটা আমি দেখবো। আপনারা সংগঠণের জন্য কাজ করুন। নিজস্ব নির্বাচনী এলাকা তৈরি করতে গিয়ে আমাদের আসনগুলো নষ্ট করলে কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না।

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে অল্প সময়ের মধ্যে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটলেও সরকার এ পর্যন্ত সফলভাবেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করছে। যে কোনো ঘটনা ঘটার পর পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বল্পতম সময়ে সেগুলো দমন করেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সঠিকভাবে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে। তারা এসব ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এ তদন্তের অগ্রগতিও হচ্ছে। রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি দমনের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, সারারাত ধরেই জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘেরাও করে রেখেছিল। রাতে অভিযান চালালে নিরাপরাধ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে, এই আশংকায় সকালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সফলভাবেই অভিযান চালিয়ে এসব জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের দমন করেছে।

দলীয় সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করার পাশাপাশি নারী সংগঠনগুলোকে চাঙ্গা করার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এখন পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ছে। তাই সারাদেশে এদের প্রতিরোধে নারী সংগঠনকে শক্তিশালী করে নারী সমাজের মাঝেও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে হবে।

বৈঠকে সরকার দলীয় কয়েকজন সংসদ সদস্যও বক্তব্য দেন। তাঁরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন। এ সময় সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বলেন, পুলিশের মধ্যে যারা আছেন, তাদের সবাই কিন্তু আমাদের নয়। বিএনপি-জামায়াত ও স্বাধীনতাবিরোধী মতাদর্শের লোকও সেখানে রয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন করতে হলে এদিকেও নজর দিতে হবে। এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মধ্যেও তো সমস্যা আছে। আর সবগুলো ঘটনা তো পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোকাবেলা করেছে। কল্যাণপুরের জঙ্গি হামলার প্রচেষ্টাও তো আমাদের পুলিশ বাহিনী মোকাবেলা ও দমন করেছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে আবদুল মান্নান, এ কে এম শামীম ওসমানসহ কয়েকজন মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, মন্ত্রীরা সংসদ সদস্যদের সঙ্গে ভাল আচরণ করেন না। তাঁরা জঙ্গি দমনে নিহত পুলিশ সদস্যদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের প্রস্তাব করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে না জড়ানোর নির্দেশ দেন। বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ আতিউর রহমান আতিক, আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, ড. হাছান মাহমুদ, ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, বজলুল হক হারুণ প্রমুখ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!