• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

খানসামায় পান চাষ করে স্বাবলম্বী ৩০ পরিবার


মোহাম্মদ সাকিব চৌধুরী, দিনাজপুর জুলাই ২৪, ২০১৬, ০৩:১৯ পিএম
খানসামায় পান চাষ করে স্বাবলম্বী ৩০ পরিবার

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় বাপ-দাদার সময় থেকেই পান বরজকে অনেকটা আশির্বাদ মনে করে যত্নসহকারে চাষ করে আসছে এই উপজেলার পান চাষীরা। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদনের ৮৫ ভাগ পান যাচ্ছে আশেপাশের জেলাগুলোতে। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকছেন পান চাষে। গেল ১০ বছর পূর্ব থেকে বর্তমানে উপজেলায় পানের আবাদ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানান যায়, এ বছর উপজেলায় বানিজ্যিক ভিত্তিতে ১০ একর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার দুবলিয়া গ্রামেই ৯৫ ভাগ পান চাষ করা হয়। বর্তমানে উপজেলার ৩০ টি পরিবার এই পান চাষের সঙ্গে জড়িত।

পান চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাদ্র-আশ্বিন মাসে দোঁয়াশ মাটিতে আগাছা পরিষ্কার করে তিন বার চাষ দিয়ে প্রতি এক শতক জমিতে ২ কেজি ফসফেট, ১ কেজি চুন ও ২০০ গ্রাম লিজেন্ট মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে দিয়ে দেড় ফুট দূরত্বে সারি বেধে মাটি উঁচু করে ১ ফুট দূরত্বে পানের গাছ লাগিয়ে দিতে হয়। প্রতিটা পানের লতা থেকে ১২/১৫ টি চারা লাগানো যায় এবং বাঁশ, পাটকাঠি, জিআই তার, কাশবন, সুপারি পাতা ও সুতা দিয়ে পানের বরজ বানাতে হয়।

জমির চারিদিকে বাঁশ ও সুপারি পাতা দিয়ে বেড়া দিতে হয় এবং জমির উপরে জিআই তার ও কাশবন দিয়ে চাল বানানো হয়। মাটি থেকে পানের লতা যখন ৪-৫ ইঞ্চি লম্বা হয় তখন পাশে ১ টি ৫-৬ ফুট লম্বা পাটকাঠি পুতে দেয়া হয়। পানের লতাটি ধীরে ধীরে বড় হয় এবং পাটকাঠি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। ৫-৬ মাস পর থেকে পান বিক্রির উপযোগী হয় এবং এরপর প্রতি ৮-১০ দিন পরপর পান বাজারে নেয়া যায়। ১ টি বরজ থেকে সর্বনিম্ন ১৫ বছর একাধারে পান পাওয়া যায়। যদি পানের ফাপ পচা রোগ না হয় তাহলে বরজটি ৫০/৬০ বছর থাকে।

আষাড়-শ্রাবণ মাসে পানের ফাপ পচা রোগ হয় এটি পানের সবচেয়ে বড় রোগ এ রোগ দমনে ফ্লোরি, এডমা ও কাফেডার নামে এই তিনটি ঔষধ ব্যবহার করা হয়। শীতের সময় এক প্রকার বিষাক্ত কুয়াশা পান গাছে লাগলে পান পাতা ঝরে যায়। এতে চাষীদের মারাত্মক ক্ষতি হয় । এ প্রতিরোধে কোনো ঔষধ না থাকায় বিপাকে পড়েন চাষীরা। অনেক চাষীরা কুয়াশা ঠেকানোর জন্য বরজের চারিপাশ পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেন।

পান চাষী রনজীত রায় বলেন, খানসামা উপজেলায় দুই প্রকার পান চাষ হয়, মিষ্টি পান ও সাচি পান। তবে উপজেলায় মোট চাষের ৮০ ভাগই মিষ্টি পান ।

লতা রানী রায় বলেন, পান চাষ করেই আমাদের সংসার চলে, আমি এবং আমার স্বামী দুজনেই বরজে কাজ করি। ২৭ বছর ধরে পানের বরজ করে আসছি। বর্তমানে ২৩ শতক জমিতে পানের বরজ রয়েছে। প্রতিহাটে সপ্তাহে (দুইদিন) ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার পান বিক্রি করি। এখান থেকেই আয় করে সংসারের খরচসহ সন্তানদের লেখাপড়া করানো হয়।

দুবলিয়া গ্রামের পান চাষী রমনী রায় জানান, এখানকার সব পরিবার এক সময় ব্যবসা আর শখের বসে শতাধিক পানের বরজে পান চাষ শুরু করেন। গ্রাম কিংবা শহরে অতিথি আপ্যায়নে এ পানের এখনো চাহিদা রয়েছে। চুন ছাড়া পান পাতার রস আর কাঁচা সুপারির রস হার্টের উপকারিতা ছাড়াও ছাঁচি পানের রস দিয়ে যৌনরোগের ওষুধ তৈরি করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে গ্রামের কবিরাজরা বেশ নাম রেখেছে।

রংপুর থেকে দুবলিয়া গ্রামে পান কিনতে আসা এক পান ব্যবসায়ী বলেন, এখানকার পান সুস্বাদু হওয়ায় এ পানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমাদের লাভও ভালো হয়।

খানসামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এজামুল হক পানের বরজ পরিদর্শন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের জানান, খানসামার মাটি পান চাষের জন্য বেশ উপযুক্ত হওয়ায়, এখানে দীর্ঘদিন ধরে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির পানের চাষ করে চাষিরা। বর্তমানে বিভিন্ন গ্রামের চাষীরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে অনেক পানের চাষ করেছে। প্রতি বছর পানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সকল প্রকার পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।

এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, সরকারের নজরদারি থাকলে পান চাষে আগ্রহী এসব পরিবার আর্থিক লাভবানের মধ্যদিয়ে তাদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন পান চাষীরা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!