• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরে-বাইরে চাপে বিএনপি


জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি জুন ২২, ২০১৬, ০৪:৪৫ পিএম
ঘরে-বাইরে চাপে বিএনপি

দলের ভেতরে-বাইরে রাজনৈতিক চাপে রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। কেন্দ্রীয় কমিটির পুনর্গঠনে দীর্ঘসূত্রতায় বিএনপিতে এক ধরনের অস্থিরতা, চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে দলটির সর্বস্তরে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে আসলাম চৌধুরী এবং দলপ্রধানের বিরুদ্ধে চলতে থাকা দুর্নীতি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার তোড়জোড়।

চাপের বেশিরভাগ অংশ পড়েছে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ওপর। নানামুখী এসব চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দলটি। প্রায় দিনই বিভিন্ন সভা-সমাবেশে রাজনৈতিক বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে সেই চাপ প্রশমনের চেষ্টা চলছে। কিন্তু দিন শেষে তা ফলশূন্য। কারণ আসলাম চৌধুরীর মোসাদ কানেকশন ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেছে। আর বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রতিটি মামলাই এখন আদালতে সক্রিয় রয়েছে।

অন্যদিকে দলটির অন্যতম প্রধান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও চাপের মাত্রা বাড়িয়েছে। এদিকে তিন মাস আগে ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ রূপও দাঁড় করাতে পারেনি বিএনপি। সেই সঙ্গে দলের অঙ্গসংগঠনগুলোর পুনর্গঠন ঘিরেও নেতাদের মধ্যে চলছে প্রতিযোগিতা।

পদ-পদবির এসব প্রতিযোগিতা এখন কাদা ছোড়াছুড়িতে রূপ নিয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে চাহিদা মতো পদ-পদবি ভাগিয়ে নিয়ে অথবা নিজেদের প্রভাব টিকিয়ে রাখতে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও এক পক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রকাশ্যেই।

সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপি যখন পুনর্গঠনের মাধ্যমে শক্তিশালী হয়ে নতুন নির্বাচন আদায়ে রাজপথে সক্রিয় রাজনীতিতে আসার লড়াই করছে তখন একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন দলের কেউ কেউ। যে বিতর্ক সামাল দিতে বিএনপি হাইকমান্ড হিমশিম খাচ্ছেন। সর্বশেষ স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে নতুন করে এক বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। এরপর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, বিএনপি ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে মিলে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। যদিও দলের নেতা আসলাম চৌধুরীর দায়-দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেছে খোদ বিএনপি।

এদিকে নতুন জাতীয় নির্বাচন আদায়ে বিএনপি বরাবর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর নির্ভরশীল থাকতে দেখা গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে দলটির কূটনৈতিক যোগাযোগের ঘাটতি নিয়েও দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি ঢাকা সফরে আসা কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল-মুবারক আল-হামাদ আল-সাবাহ ও যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বাংলাদেশ সফর করলেও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ না করার ঘটনা দলের নেতারা নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ঢাকা সফরে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব) মাহাবুবুর রহমান জানান, শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে বিএনপি। দৃশ্যত যেসব সমস্যা দেখা যাচ্ছে তা আর থাকবে না। শিগগিরই এসব সমস্যা দূর হবে। আর ঈদের পর বৃহত্তর আন্দোলনের চিন্তা করছে দলটি। বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। খুব শিগগির নতুন কমিটি পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শেষ হবে।

কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনে সর্বময় ক্ষমতাপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন পর্যন্ত নতুন কমিটির মহাসচিবসহ ৪১টি পদের নাম ঘোষণা করেছেন। এখনো স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যানসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী কমিটির সম্পাদকীয় পদগুলো ঘোষণার বাকি রয়েছে।

১৯ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে কাউন্সিলররা দল পুনর্গঠনে সর্বসময় ক্ষমতা দলের চেয়ারপার্সনের ওপর অর্পণ করেছেন। কিন্তু তিন মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেলেও বিএনপির পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি গঠন করতে পারছেন না খালেদা জিয়া।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা জানান, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিষয়াদি দেখভাল করেন এমন নেতাদের ওপর সরকার নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেছে। সরকারের চাপ নির্যাতনের কথা ভেবে অনেকেই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। শফিক রেহমানের গ্রেফতার এবং ড. ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন ওই নেতা। এর একটা প্রভাব দলের ওপর পড়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!