• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছেলের হাতে নির্যাতিত মাকে বাড়ি দিলেন ডিসি!


ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭, ০৮:০৫ পিএম
ছেলের হাতে নির্যাতিত মাকে বাড়ি দিলেন ডিসি!

ঠাকুরগাঁও: ছেলের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে হাতপাতালে চিকিৎসাধীন শতবর্ষী বৃদ্ধা তসলিমা খাতুনের জন্য এবার বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল। ওই বৃদ্ধা মাকে ছেলের নির্যাতন থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তার থাকার জন্য বাড়ি তৈরি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন জেলা প্রশাসক।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া এলাকায় ভাত খেতে চাওয়ায় নিজের বড় ছেলে বদিরউদ্দীন বৃদ্ধা মাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক ওই বৃদ্ধা মাকে জেলা সদর থেকে এসে একটি পরিত্যক্ত ঝুপড়ি ঘর থেকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এখন ওই বৃদ্ধা মায়ের জন্য একটি বাড়ি তৈরি করে ‘বড় ছেলের’ দায়িত্ব পালন করলেন মানবতার এক বাস্তব দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ডিসি আব্দুল আওয়াল।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. খায়রুল কবির জানান, ওই নির্যাতিত বৃদ্ধা মা বর্তমানে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরতে পারবেন।

হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফ বেগ বলেন, জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল স্যারের নির্দেশে ছেলের হাতে নির্যাতনের শিকার বৃদ্ধা মায়ের জন্য একটি টিনের ঘর, নলকূপ ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৃদ্ধা মা হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরলে তিনি ওই নতুন বাড়িতে উঠবেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শতবর্ষী বৃদ্ধা তসলিমা খাতুনকে নতুন বাড়ি তৈরির খবর জানানোর পরে তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, হামার ডিসি মোর বড় ছুয়া (আমার বড় ছেলে)। হাসপাতালত মোর প্রতিদিন খবর নিছে (প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিয়েছে)। শুনিছু এলা নতুন বাড়ি তৈরি করে দিছে (এখন নতুন বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে)। বাড়ি গেলে নতুন বাড়িত থাকিম আর বড় ছেলের তানে দোয়া করিম (বাসায় গিয়ে নতুন বাসায় ডিসির জন্য দোয়া করব)।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, গত ১৫ আগস্ট গভীর রাতে ওই বৃদ্ধা মাকে মারধরের বিষয়টি জানতে পেরে খুবই মর্মাহত হয়েছি। পর দিন সকালে বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।

তিনি আরো বলেন, ওই মায়ের থাকার ঘর নিয়ে সমস্যা, সেজন্য সন্তান হিসেবে মায়ের জন্য একটি টিনের ঘর ও শৌচাগার তৈরি করে দিয়েছি। যেন শেষ জীবন পর্যন্ত নিরাপদে থাকতে পারেন তিনি। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হলেই বৃদ্ধা মাকে নতুন বাড়িটি উপহার দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট দুপুরে ছেলের বউমার কাছে ভাত চেয়েছিলেন হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের শতর্বষী তসলিমা খাতুন। এ কথা ছেলে দবির উদ্দিন জানতে পেরে শতবর্ষী বৃদ্ধা মাকে লাঠি দিয়ে মাকে মারধর করেন। লাঠির আঘাতে তসলিমার বাম চোখ থেঁতলে যায়। পরদিন সকালে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল ওই বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

ওই ঘটনায় দবির উদ্দিনকে ওই রাতে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে বৃদ্ধা মা তার সন্তানের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই জানালে এবং ছেলেকে দেখার আকুতি করলে আদালত নির্যাতনকারী বড় ছেলে দবির উদ্দিনের জামিন মঞ্জুর করেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!