• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে এলাকায় স্বস্তি


গাজীপুর প্রতিনিধি অক্টোবর ৮, ২০১৬, ০৯:২২ পিএম
জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে এলাকায় স্বস্তি

গাজীপুর: জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানোর ঘটনায় গাজীপুর মহানগরীর হাড়িনাল ও নোয়াগাঁও এলাকায় নেমে এসেছে স্বস্তি। এলাকাবাসী আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছেন, কোনো ধরনের সন্ত্রাস বা নাশকতা শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে তারা পছন্দ করেন না।

অভিযানকালে স্থানীয় বাসিন্দারা ভিড় জমায় ঘটনাস্থলে। দিনভর তাদের উৎসুক দৃষ্টি নিবন্ধ ছিল সেদিকে। অভিযানের শুরুতে ও গুলাগুলির ঘটনায় প্রথমে উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। এরপর ধীরে ধীরে শান্ত হতে থাকে। গাজীপুরবাসীর মুখে মুখে আজ সারাদিনের আলোচনার বিষয় র‌্যাব ও পুলিশের জঙ্গি নির্মূল অভিযান।

গাজীপুরের হাড়িনাল ও নোয়াগাও এলাকায় জঙ্গিদের দুটি আস্তানায় র‌্যাব, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সোয়াদ, ডিবি ও জেলা পুলিশের অভিযানে জেএমবির ঢাকা অঞ্চলের সমন্বয়ক আকাশসহ নয়জন নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেছেন জঙ্গিবিরোধী সফল অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

শনিবার হাড়িনালে র‌্যাবের ওই অভিযান চলার সময় দেড় কিলোমিটারের মধ্যে নোয়াগাঁওয়ের আফারখোলা পাতারটেক এলাকায় আরেকটি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সোয়াদ ও জেলা পুলিশ। সকাল ১০টার দিকে নগরের জয়দেবপুর থানার নোয়াগাও পাতার টেক এলাকার দোতালা একটি বাসা ঘিরে ফেলে গাজীপুর পুলিশ। এর আগে ভোর ৬টার দিকে হাড়িনাল পশ্চিমপাড়া লেবুবাগান এলাকায় আতাউর রহমানের একতলা বাড়িতে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। সেখানে দুই জঙ্গি নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান।

শনিবার দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের জানান, কিছুদিন আগে দুজন জেএমবি দম্পতি আটক হয়েছিল। র‌্যাব তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছিল গাজীপুরে এবং এর আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি জেএমবি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তারা নাশকতা করার পরিকল্পনা করছিল এবং তাদের নাশকতা করার সামর্থ্যও ছিল। আটক দম্পতির কাছ থেকে প্রাপ্ততথ্যর ভিত্তিতে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করি। আতাউর রহমানের ভাড়া বাড়িতে যেই কক্ষে জঙ্গিরা বসবাস করতো সেই কক্ষের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। র‌্যাব সদস্যরা তাদের দরজা খুলতে বললে জঙ্গিরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এসময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি একে-২২রাইফেল, একটি পিস্তল, একটি ল্যাপটপ ও বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাড়ির মালিক র‌্যাবকে জানিয়েছে, নিহত দুই জঙ্গি রাশেদ মিয়া এবং তৌহিদুল বাড়ির মালিককে তথ্য দিয়েছিল যে, রাশেদ মিয়া এসএসসি পাশ করে ভর্তির চেষ্টা করছে এবং তৌহিদুল ডুয়েটে অবস্থান করছে। অভিযানে এক জঙ্গির জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়েছে এবং সেই পরিচয়পত্র থেকে একজনের পরিচয় প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করা গেছে। জঙ্গিরা তাদের নাম ও পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন নাম পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল গাজীপুরের জঙ্গিদের বেশ কয়েকটি দল নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। পরে বিকাল ৪টার দিকে মরদেহগুলো উদ্ধার করে র‌্যাব সদস্যরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

এদিকে, র‌্যাবের অভিযানের পর বেলা ১০টার দিকে নোয়াগাঁওয়ের আফারখোলা পাতারটেক এলাকার একটি দোতলা বাড়িতে অভিযান শুরু করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, যার সঙ্গে ছিল সোয়াট। ঘটনাস্থলে ছুটে যান গাজীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ পিপিএম, ডিবি (ডিসি) মনিরুল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বিকেল ৪টার দিকে অভিযান শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন সেখানে সাতজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। নিহত অপর সদস্যদের পরিচয় জানা যায়নি। তাদের বয়স ১৭ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে বলে জানান ছানোয়ার। ঘটনাস্থলে থেকে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব ও পুলিশের দুই অভিযানের খবরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও গাজীপুরে যান। পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান ও জাবেদ পাটোয়ারীও এসময় তার সাথে ছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এখানে যারা ছিল, সবাই জঙ্গি গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। তাদের আত্মসমর্পনের নির্দেশ দেয়ার পর তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ করে গুলি ছুঁড়ে। এসময় পুলিশ পাল্টা গুলি ছুঁড়লে ঘটনাস্থলে আকাশসহ সাতজন মারা যান। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, পুলিশ, সোয়াট এবং অন্যান্য বাহিনী জঙ্গি দমনে সাহসী ভূমিকা পালন করছে। ঘটনাস্থল থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, চাপাতি এবং গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

আনসারুল্লা বাংলা টিমের প্রধান বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের কোনো সন্ধান পাওয়া গেছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেজর জিয়া আমাদের কাছে ফ্যাক্টর না। কেউ পার পাবে না। আমরা সব ধরনের প্রচেষ্টা নিচ্ছি। যে বাড়িতে পুলিশের অভিযান চলে, তার মালিক সৌদি প্রবাসী সোলেমান সরকারের। তার ভাই কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আরবি শিক্ষক ওসমান গণি বাড়িটি দেখাশোনা করেন। তিন মাস আগে তার কাছ থেকে তিনজন বাড়িটির দোতলা ভাড়া নেয়। ওই তিনজন জঙ্গি বলে ধারণা পুলিশের।

গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে কয়েকটি জঙ্গি আস্তানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বেশ কয়েকজন জঙ্গি নিহত হন। এরপর গাজীপুরে এক দিনে দুটি আস্তানায় অভিযান হল, যাতে নিহত হলেন নয়জন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএন

Wordbridge School
Link copied!