• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গি তৎপরতায় উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতি


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ২০, ২০১৭, ০৩:০৭ পিএম
জঙ্গি তৎপরতায় উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতি

ঢাকা : দেশে হঠাৎ করে দেখা দেওয়া জঙ্গি তৎপরতায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতি। একদিকে এর জন্য প্রধান দুই রাজনৈতিক দল পরস্পরকে দোষারোপ করছে; অন্যদিকে কিছুটা হলেও বিব্রত সরকার। জঙ্গি দমনে সরকারের এত কঠোর অবস্থানের পরও আত্মঘাতীর মতো ভয়াবহ আক্রমণাত্মক কৌশল নিয়ে জঙ্গিদের পুনরায় আবির্ভাব-দুশ্চিন্তায় ফেলেছে দেশের সামগ্রিক রাজনীতিকে।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে দায়ী করা হলেও এমন অস্থিতিশীল পরিবেশ আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে-সরকারের বড় দুশ্চিন্তা সেখানেই। সেইসঙ্গে বাধাগ্রস্ত হতে পারে উন্নয়ন কর্মকান্ড-এমন শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।

এই জঙ্গি তৎপরতাকে কেন্দ্র করে চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে পরস্পরকে দোষারোপ করে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। বুধবার চট্টগ্রামে সীতাকুন্ডের একটি বাড়িতে আইনশৃঙ্খলার অভিযানে জঙ্গি দম্পতি গ্রেফতার ও আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলিতে এক নারীসহ চার জঙ্গি নিহতের ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রথম বিএনপিকে দোষারোপ করে বক্তব্য দেয়। সে থেকে শুরু হওয়া পাল্টা জবাবও অব্যাহত আছে।

এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং ক্ষমতার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শীর্ষনেতারা জঙ্গি হামলাকে উভয়পক্ষের ‘রাজনৈতিক কৌশল’ বলে দাবি করেছেন। বিএনপির অভিমত, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে সরকার এর মধ্য দিয়ে আরেক দফা ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু সরকার পক্ষের দাবি, নির্বাচনকে বানচাল করতেই বিএনপির এ তৎপরতা।

শনিবার (১৮ মার্চ) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে নতুন করে আলোচনা। সেদিন তিনি ‘এ ধরনের হামলা দেড় বছর পর অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের অন্তরায়’ বলে মন্তব্য করেন।

এর আগে এই হামলার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে বিএনপি যদি সংলাপে আসত, তাহলে নির্বাচনে অংশ নিত। তা না করে তারা পেট্রলবোমা হামলা চালাল। সংলাপে অংশ নিলে আজকে আর আত্মঘাতী হামলার প্রয়োজন হতো না। আপনারা বর্তমানে চরম থেকে চরমে যাচ্ছেন।

কাদেরের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রোববার (১৯ মার্চ) সরকার জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ‘জঙ্গিবাদের সাইনবোর্ড’ সামনে এনে পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলে অভিযোগ করেন।

ফলে হঠাৎ করে দেখা দেওয়া জঙ্গিদের তৎপরতা আসলেই নির্বাচনের জন্য অন্তরায় কি না; নাকি উদ্দেশ্য রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণ—এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবার এ ধরনের জঙ্গি হামলার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে আন্তর্জাতিক চক্রগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে চায় কি না-দেখা দিয়েছে এমন প্রশ্নও।

২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে গত শনিবার পর্যন্ত জঙ্গিদের পাঁচটি তৎপরতা দেখা যায়। যদিও এসব তৎপরতায় এক শিশু ছাড়া সাধারণ মানুষের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গিরা নিহত হয়েছে; কিন্তু উদ্বেগে ফেলেছে জঙ্গিদের নতুন আত্মঘাতী কৌশল। এসব ঘটনায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সরকার।

ইতোমধ্যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি কারাগারে শুক্রবার দুপুর তিনটা থেকে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কারাগারে আটক আসামিদের দেখতে দর্শনার্থীদের কয়েকটি ধাপে তল্লাশি করে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। জঙ্গি হামলার ঘটনায় দেশের বিমানবন্দরসমূহে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি অঘোষিত রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

নির্বাচন বিশ্লেষক এবং রাজনীতিকদের মতে, এ ধরনের হামলা জাতীয় নির্বাচনের জন্য কোনোভাবেই হুমকি বা বাধা হতে পারে না। কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে না। কারণ, গোটা জাতিকে নিয়ে এ নির্বাচন একটি জাতীয় বিষয়, অনেক বড় বিষয়। সেখানে এ ধরনের জঙ্গি হামলা কোনো সমস্যা না। তারা রাজনৈতিক নেতাদের এমন বক্তব্য বা মন্তব্যকে ‘মনগড়া’ ও ‘রাজনৈতিক পদ্য’ বলেও দাবি করেন। তারা এমনও মত দেন, রাজনৈতিক নেতাদের এমন বক্তব্যের ফলে মূল কাজ জঙ্গি দমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনের জন্য অন্তরায় কেন হবে? জঙ্গিরা ও জঙ্গিদের আস্তানা চিহ্নিত হচ্ছে, এদের কর্মকান্ড সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে। যদি পারে তাহলে জাতীয় নির্বাচনের জন্য কেন বাধা হবে, তা বোধগম্য নয়। এটা মিথ্যে কথা। এমনকি বিএনপি জঙ্গি হামলাকে সরকারের ক্ষমতায় থাকার কৌশল দাবি করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, সেটাও ঠিক না। জঙ্গি হামলা নির্বাচন বানচালে বা ক্ষমতায় থাকার সহায়ক শক্তি নয়।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দুই দলের (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) কেউই সত্যের ধারেকাছেও যায় না। আসল কথা বলে না। ক্ষমতার রাজনীতির জন্য যেটা সুবিধাজনক, সেটা বলে। তাদের কথার ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। সম্প্রতি জঙ্গিদের যে তৎপরতা, তা আবার থেমে যাবে। জাতীয় নির্বাচনের এর কোনো প্রভাব পড়বে না।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!