• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
অন্য শরীকদেরও সন্দেহ

জোটভুক্ত হেফাজতকে হারালো বিএনপি!


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ২২, ২০১৭, ০৬:৪৩ পিএম
জোটভুক্ত হেফাজতকে হারালো বিএনপি!

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি কওমি সনদের স্বীকৃতি দেয়ার পর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সমর্থনপুষ্ট হেফাজতে ইসলাম এখন পুরোপুরি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। শুক্রবার (২১ এপ্রিল) হেফাজতের ইসলামের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে নিয়ন্ত্রণের কথা না বললেও সরকারের ভালো কাজের প্রশংসায় মুখর এখন। প্রশ্ন উঠেছে, ২০ দলের শরিক হেফাজতভুক্ত দুটি দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিসের ভূমিকা নিয়েও। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে যে দলগুলোর নেতারা এখন সরকারের সঙ্গে আঁতাত করছেন।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ও ঢাকা মহানগর হেফাজতের নায়েবে আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিস শূরার সদস্য মাওলানা আবদুর রউফ ইউসূফী এ প্রসঙ্গে গতকাল মানবকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ যদি আলেম-ওলামাকে শক্তি বা চাপ প্রয়োগ না করে আস্থা অর্জনে করতে পারে তাহলে বর্তমান রাজনৈতিক মেরুকরণের পরিবর্তন আসতে পারে।

তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমরা আছি ভোটের রাজনীতি নিয়ে। ২০ দলীয় জোটে আছি, অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। আর হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষা সংক্রান্ত বৈঠকটিকে রাজনীতির সঙ্গে এক করে দেখার সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া মানবকণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিক কোনো স্থিতিশীল বিষয় নয়। কোন দল জোটে থাকবে, কোন জোটে থাকবে না, এটা ওই দলের নিজস্ব বিষয়। তবে আমরা মনে করি কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করতে পারে না। কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে জোট ত্যাগ করলে জোটের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং ওই দল জনবিচ্ছিন্ন হবে।

এদিকে, হেফাজতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠককে ইতিবাচকভাবে দেখছেন না ২০ দলীয় জোটের নেতারা। সম্প্রতি দলটির কয়েক সিনিয়র নেতা অভিযোগ করে বলেন, সরকার হেফাজতকে ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।

অন্যদিকে হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক শক্তি বা দল নই। তাই সরকার বা বিএনপি কারো সঙ্গে সখ্য ও সমঝোতার প্রশ্নই আসে না। কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতির সঙ্গে সরকারের সঙ্গে আঁতাত বা সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, কওমি মাদরাসা ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর হেফাজতে ইসলাম আলাদা সংগঠন। হেফাজত নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে সম্পর্কে আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, এটা তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের প্রশংসা করে মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, যারা ইসলাম, আল্লাহ ও মুসলমানদের পক্ষে থাকবে, নাস্তিক ও খোদাদ্রোহী বিদ্বেষী শক্তির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান পরিষ্কার থাকবে। হেফাজতসহ এ দেশের মুসলমান তাদের গ্রহণ করবে।

নাম গোপন রাখার শর্তে হেফাজতের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, হেফাজতের দাবিগুলো সরকার মেনে নিলে আমরা সরকারের সঙ্গে থাকলে অসুবিধা কোথায়! তিনি বলেন, হেফাজত কোনো রাজনেতিক দল নয়। সেটি আমাদের বুঝতে হবে।

গত ১১ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বৈঠকটিতে হেফাজতবিরোধী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। কওমি সনদের স্বীকৃতি ও হাইকোর্ট থেকে মূর্তি সরানোর দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় বেফাকের প্রায় ৩ শতাধিক আলেম-ওলামারা উপস্থিত ছিলেন।

ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কওমি সনদের স্বীকৃতি ও হাইকোর্ট থেকে মূর্তি সরানোর ঘোষণার পর পরই রাজনৈতিক অঙ্গনে হৈচৈ শুরু হয়েছে। সরকারের সঙ্গে হেফাজতের বৈঠকের পর পুনর্মূল্যায়ন হচ্ছে হেফাজত-২০ দলের সম্পর্কও।

২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ১৩ দফা দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে মহাসমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। ওই সময় বিএনপিসহ ২০ দল হেফাজতের আন্দোলনকে সমর্থন দেয়। তখন থেকে এ সংগঠন বিএনপির সমর্থনপুষ্ট সংগঠন হিসেবে পরিচিতি পায়। দিনভর ওই এলাকায় তাণ্ডব চালানোর পর রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সংগঠনটির নেতা ও হাজার হাজার কর্মী শাপলা চত্বর ছাড়তে বাধ্য হয়।

শাপলা চত্বর ছাড়ার পর প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট হেফাজতের পক্ষে দাঁড়ায়। সেই থেকে ২০ দলীয় জোটের নিয়ন্ত্রণে চলছে হেফাজত। তখন মহাসমাবেশ আয়োজনসহ বিএনপি থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন হেফাজত নেতারা। তবে হেফাজতের পক্ষে এ বক্তব্য অস্বীকার করা হয়। অতীতে হেফাজত নেতাদের একাধিক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতারা আমন্ত্রিত ছিলেন।

প্রায় চার বছর অতিবাহিত হতে চললেও হঠাৎ কওমি সনদের স্বীকৃতি ও হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গ্রিক মূর্তি সরানোর দাবিতে স্বোচ্চার হন দলটির নেতারা। জানা গেছে, এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে হেফাজতের আমিরের বৈঠক অনুষ্ঠানে ভূমিকা রাখেন সরকারের তিন মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা। এ নিয়ে ৫ সদসস্যের লিয়াজোঁ কমিটিতে ছিলেন আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মাওলানা রুহুল আমিন, মুফতি নুরুল আমিন ও মাহফুজুল হক।

হেফাজতের ঘোরতর বিরোধী হলেও কেন হেফাজতের আমির আহমদ শফীর নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন এমন প্রশ্নে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার ঈদ জামাতের ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, হেফাজতের আন্দোলন আর কওমি সনদ ও মূর্তি সরানোর বিষয় এক নয়। এটা আলাদা আলাদা বিষয়। সরকারের সঙ্গে হেফাজতের আপস হয়েছে কি-না এ বিষয়ে বিস্তারিত না বলে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম আগের মতো আর হৈচৈ করবে না। শাপলা চত্বরের হুমকি দেবে না তারা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!