• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
চট্টগ্রাম স্টেশনেও হাহাকার

ট্রেনের টিকেটের জন্য কমলাপুরে ‘মহাভিড়’


নিজস্ব প্রতিবেদক ও চট্টগ্রাম ব্যুরো জুন ৬, ২০১৮, ১২:৫৪ এএম
ট্রেনের টিকেটের জন্য কমলাপুরে ‘মহাভিড়’

ঢাকা : আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ঘরমুখো যাত্রীদের মূল আগ্রহের নাম এবার ট্রেন। নিরাপদে বাড়ি ফিরতে সবারই চাওয়া ট্রেনের টিকেট। মঙ্গলবার (৫ জুন) ঢাকার কমলাপুর স্টেশন ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে টিকেট প্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। এদিন আগামী ১৪ জুনের টিকেট সংগ্রহে কমলাপুরে নজিরবিহীন ভিড় ছিল।

ঈদ উপলক্ষে নিয়মিত ট্রেনের পাশাপাশি বিশেষ ট্রেনও পরিচালনা করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গত ১ জুন থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু করে রেলওয়ে। তবে এর মধ্যে চাহিদা বেশি ১৪ জুনের টিকেটের। গতকাল মঙ্গলবার পঞ্চম দিনের মতো টিকেট সংগ্রহ করতে দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষা করেন হাজার হাজার মানুষ। টিকেট কাউন্টারের সামনে থেকে স্টেশন ছাড়িয়ে টিকেট প্রত্যাশীদের লাইন গিয়ে ঠেকে প্রধান সড়কের কাছে। তবে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও লাইনের সবাই টিকেট পাননি। কাউন্টার থেকে শুনতে হয়েছে- ‘টিকেট শেষ’। মনমরা হয়ে তাদের ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।

এদিকে ঢাকার কমলাপুর ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে বুধবার (৬ জুন) বিক্রি হবে আগামী ১৫ জুনের টিকেট। ঈদের আগের দিন হওয়ায় ১৫ তারিখের টিকেটের জন্য যাত্রীদের চাহিদা আরো বেশি। মঙ্গলবার (৫ জুন) ইফতারের পর কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে টিকেট প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবারের টিকেট সংগ্রহের আশায় তারা মঙ্গলবার দুপুর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। স্টেশনের মূল আঙিনা ছাড়িয়ে অসংখ্য নারী-পুরুষের এ লাইন চলে এসেছে রাস্তায়। তারা রাত জেগে অপেক্ষার পর বুধবার (৬ জুন) সকালে টিকেট পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।

ঈদের আগে ১৪ জুন সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ হচ্ছে। ওইদিন রাজধানী ছাড়বে নানা শ্রেণি-পেশার অগণিত মানুষ। কমলাপুরে ওইদিনের টিকেটের জন্য গত সোমবার সন্ধ্যা থেকেই অনেকে লাইন দাঁড়ান। দীর্ঘ লাইনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন তারা। বিক্রির জন্য বরাদ্দকৃত টিকেটের তুলনায় গতকাল মঙ্গলবার টিকেট প্রত্যাশীর সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। সকাল ৮টায় টিকেট বিক্রি শুরু হলেও ভোর রাতেই মানুষের সারি চলে যায় স্টেশন ছাড়িয়ে। এটাকে ‘স্মরণকালের সেরা ভিড়’ বলছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

কমলাপুর স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, টিকেটের তুলনায় টিকেট প্রত্যাশীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সবাই টিকেট পাননি। হাজার হাজার টিকেট প্রত্যাশীদের নিয়ন্ত্রণ করতে বেগ পোহাতে হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। রেলওয়ে সূত্র মতে, মঙ্গলবার টিকেট দেওয়া হয় ২৭ হাজার ৪৬১ জনকে।  

এদিকে টিকেটের জন্য দীর্ঘ লাইন দেখে ঢাকা স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী গতকাল সকালে বলেন, এত লোক, টিকেট দেব কীভাবে? আমাদের তো একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আমার অভিজ্ঞতা বলছে, এটা স্মরণকালের সেরা ভিড়।

তিনি আরো বলেন, আজ (গতকাল) টিকেট নিতে এসেছেন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। হয়তো সবাইকে টিকেট দিতে পারব না। তবে যতক্ষণ থাকবে আমরা ততক্ষণ বিক্রি করব। এ ব্যাপারে তিনি জানান, সকাল ৮টা থেকে ২৬টি কাউন্টারে টিকেট বিক্রি শুরু হয়। ১৪ জুনের জন্য মোট ২৭ হাজার ৪৬১টি টিকেট বিক্রি হচ্ছে, যা মোট টিকেটের ৬৫ শতাংশ। আর ২৫ শতাংশ টিকেট বিক্রি হচ্ছে এসএমএস বা অনলাইনের মাধ্যমে। ১০ শতাংশ সংরক্ষিত টিকেট।

পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন ট্রেনের টিকেটের জন্য আগের চেয়ে চাপ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, সড়কে যানজটের আশঙ্কা থেকে এটা হতে পারে। আমাদের কাউন্টারগুলো থেকে যে তথ্য পাচ্ছি, তাতে দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রামসহ ওইদিকের লাইনের ট্রেনগুলোয় এবার টিকেটের চাহিদা বেশি। এর কারণ হতে পারে সড়কের যানজটসহ অন্যান্য কিছু প্রতিবন্ধকতা। এ ছাড়া ট্রেনের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ট্রেনের অগ্রিম টিকেট কিনতে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল মঙ্গলবার বিক্রি করা হয়েছে ১৪ জুনের অগ্রিম টিকেট।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ প্রধান ৪টি রুটের ১৩টি ট্রেনের অগ্রিম টিকেট মঙ্গলবার বিক্রি করা হয়েছে। মোট ৯ হাজার ৫২২টি টিকেটের মধ্যে কাউন্টারে যাত্রীদের কাছে টিকেট বিক্রি করা হয় ৬ হাজার ৬৩৬ টিকেট। বাকি ৩৫ শতাংশ টিকেট কোটার জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকাগামী ৬টি, সিলেটগামী ২টি, চাঁদপুরগামী ৪টি ও ময়মনসিংহগামী ১টি ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল ৮টা থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। ১৪ জুনের টিকেট কিনতে আসা অনেক যাত্রী সোমবার বিকাল ৫টার পর থেকেই স্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর অনেকে টিকেট পেয়েছেন, আবার কেউ কেউ পাননি।

টিকেটের জন্য আসা চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল মজিদ জানান, সোমবার ইফতারের পরেই স্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। মঙ্গলবার সকাল থেকে টিকেট দেওয়া শুরু হয়। দুপুর ১২টার দিকে টিকেট হাতে পেলাম। কষ্টের পরও টিকেট হাতে পাওয়ায় স্বস্তিবোধ হচ্ছে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্পেশাল ট্রেনসহ মোট ১২টি ট্রেনের ৯ হাজার ৫২২টি টিকেটের মধ্যে ৬ হাজার ৬৩৬টি কাউন্টারে বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ টিকেট বিক্রি হয় অনলাইনে। এ ছাড়া ৫ শতাংশ ভিআইপি ও ৫ শতাংশ রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!