• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে স্মার্ট কার্ড বিতরণে অর্থ আদায়ের অভিযোগ


এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন, ঠাকুরগাঁও মে ২০, ২০১৮, ০৬:২৬ পিএম
ঠাকুরগাঁওয়ে স্মার্ট কার্ড বিতরণে অর্থ আদায়ের অভিযোগ

ঠাকুরগাঁও : জেলায় স্মার্ট ভোটার আইডি কার্ড বিতরণে অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন ইউনিয়ন পরিষদ ঘেরাও করে প্রতিবাদ করছেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। রোববার (২০ মে) সকাল থেকে স্থানীয় লোকজন গড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বিক্ষোভ করে এর প্রতিবাদ জানায়।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন ও ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় মোট ভোটার ৪ লাখ ২৭ হাজার ৩৫৬ জন। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় ভোটার ৫৮ হাজার ২০১ জন। স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয় ১৬ জানুয়ারি ও শেষ হবে ২১ জুলাই।

স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, গত ১২ মে থেকে গড়েয়া ইউনিয়নে স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৯ মে শেষ হয়। গড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মো. জুয়েল ও তাঁর সহযোগী কুমোত চন্দ্র বর্মন স্মার্ট কার্ড দেওয়ার কথা বলে এলাকার ১১ শ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে স্থানীয় সোনালী ব্যাংকে ৩৪৫ টাকার ব্যাংক ড্রাফট করতে হবে। এরপর ব্যাংক ড্রাফটের রশিদ এবং ভোটার আইডি নম্বর সংশ্লিষ্ট কার্ড বিতরণ কেন্দ্রে জমা দিয়ে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।

এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মো. জুয়েল ও তাঁর সহযোগী কুমোত চন্দ্র বর্মন স্থানীয় ১১ শ সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে এবং ব্যাংক ড্রাফট, হাতের আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিস না নিয়েই ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কক্ষ থেকেই গোপনে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

অন্যদিকে গড়েয়া এসসি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রখর রোদে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে হাতের আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিস দেওয়ার পর স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করেছে ভোটাররা। আর যারা তাদের ভোটার কার্ড হারিয়ে ফেলেছে তাঁরা ব্যাংক ড্রাফট করার পর তাদের স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করেছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদে সরকারি নিয়মনীতি অমান্য করে অর্থের বিনিময়ে গোপনে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার সামশুল আজম, গড়েয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল ইসলাম রেদো শাহ কয়েক দফায় মিটিং করে স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া ও গোপনে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

গত শনিবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার সামশুল আজম, গড়েয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল ইসলাম রেদো শাহকে ইউনিয়ন পরিষদে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

গড়েয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম বলেন, উদ্যোক্তা জুয়েলকে ৪০০ টাকা দেওয়ার পর সে তথ্যসেবা কেন্দ্র করে আমাকে স্মার্ট কার্ড দিয়েছে। গড়েয়ার ঢাঙ্গীপুকুর গ্রামের নজর আলী বলেন, স্মার্ট কার্ড নেওয়ার জন্য জুয়েলকে ৪০০ টাকা দিয়েছি; শুধু আমি না, গড়েয়া ইউনিয়নের প্রায় ১১০০ মানুষ ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে কার্ড নেওয়ার জন্য ৪০০ থেকে ৫০০ করে টাকা দিয়েছে।

স্থানীয় সাইফুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ তথ্যসেবা কেন্দ্রে আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিস অথবা যাদের কার্ড হারিয়ে গেছে তাদের ব্যাংক ড্রাফট ছাড়াই অর্থের বিনিময়ে কার্ড পাওয়া যায়।

গড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মো. জুয়েল বলেন, আমাদের সঙ্গে চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার কয়েক দফায় মিটিং করেছে। এরপর চেয়ারম্যান সাহেব আমাদেরকে টাকা নিতে বলেছে; কিন্তু এখন উল্টো আমরাই বিপদে পড়ে গেছি।

গড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল ইসলাম রেদো শাহ বলেন, বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। যাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে তাদেরকে টাকা ফেরৎ দেওয়া হবে।

অভিযোগ অস্বীকার করে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার সামশুল আজম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের স্মার্ট কার্ড বিতরণ এটি আসলে দু:খজনক ঘটনা। আমি বিষয়টি জেলা নিার্বচন অফিসারকে অবগত করেছি; আর বিষয়টি আমরা দেখছি।

ঠাকুরগাঁও জেলা নির্বাচন অফিসার মো. জিলহাজ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমাকে কেউ বলেনি; আপনার কাছ থেকে শুনলাম। স্মার্ট কার্ড বিতরণ কেন্দ্র ছাড়া কোথাও থেকে স্মার্ট কার্ড বিতরণ অবৈধ। স্মার্ট কার্ড নিয়ে অর্থ লেনদেন প্রশ্নই আসে না; কারণ সরকার বিনামূল্যে জনগণকে স্মার্ট কার্ড দিচ্ছে। তারপরও কেউ যদি জনগণকে ঠকিয়ে এ ধরনের কাজ করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!