• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিন কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২৬, ২০১৮, ০৯:১৭ পিএম
তিন কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি

ঢাকা: কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় দলটি। এজন্য তারা তিনটি কৌশলে সামনের দিকে এগোচ্ছে। এদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়া যদি আদালত থেকে মুক্তি না হয়, আর সেই অজুহাতে বিএনপি নির্বাচনে না আসে তাহলে তাদের কারার কিছু নেই। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে।

আওয়ামী লীগের এমন অবস্থানের কারণে বিএনপি তিন কৌশল নিয়ে সামনে এগোচ্ছে। দলটি খালেদা জিয়ার মুক্তি জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পাশাপাশি তৃণমূলকে শক্তিশালী করা, কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সরকারকে চাপে রাখার চেষ্টা করছে।

শান্তিপূর্ণ আন্দোলন : ইতোমধ্যেই খালেদা জিয়ার মুক্তি অন্দোলনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, অবস্থান, অনশন, কালোপতাকা প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ, স্মারকলিপি, গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এসব কর্মসূচি চলাকালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন নেতা আটক হয়েছেন। পুলিশ হেফাজতে ছাত্রদলের এক নেতার মৃত্যুর অভিযোগও রয়েছে। চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবির আন্দোলনের শুরুতে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও এখন পরিস্থিতি পুরো উল্টো।

বিএনপির অভিযোগ, সরকারের পাতা ফাঁদে পা বাড়ায়নি বিএনপি, এজন্য আওয়ামী লীগ বেশ বিপাকে পড়েছে। তারা বার বার দলটির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ দ্বারা হামলা চালিয়েছে এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা বিএনপি মাঠ গরম করতে পারছে না বলে সহিংস আন্দোলনের জন্য উসকানি দিচ্ছে।

কূটনৈতিক তৎপরতা : বিএনপির দায়ীত্বশীল পর্যায়ের এক নেতা জানিয়েছে, খালেদার মুক্তিতে নতুন আশা নিয়ে বিদেশি কূটনৈতিক মহলে তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছেন দলটির নেতারা। পাশাপাশি কঠোর কর্মসূচি সফল করতে তৃণমূলকে সুসংগঠিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের নেতাদের প্রধান করে টিম গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই তারা সাংগঠনিক সফর শুরু করবেন। 

তৃণমূলের প্রস্তুতি নেয়ার মধ্যেই খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুতে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়েছে। নিয়মিত আপডেটও তাদের জানানো হচ্ছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দফতরে বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হচ্ছে। একদিকে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ অন্যদিকে তৃণমূলের প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে কঠোর আন্দোলন, এই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির আশা করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

আইনি তৎপরতা : খালেদা জিয়ামুক্তি আন্দোলনে বিএনপি এখন পর্যন্ত কার্যত সফল হতে পারেনি। বরং খালেদা জিয়া কারাবাস দীর্ঘ হচ্ছে। এ সম্পর্কে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মো. রফিক শিকদার জানান, ‘মামলার গ্রাউন্ড, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়সসহ নানা বিষয় বিবেচনা করে আমি ধারণা করেছিলাম ম্যাডামের সাজা হবে না। তাছাড়া মামলার সঙ্গে ম্যাডামের সংশ্লিষ্টতাই নেই। ম্যাডামের মুক্তির দাবিতে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলমান। আমরা আশা করছি আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনব। খালেদা জিয়া ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না।’

খালেদা জিয়ার কারামুক্তি এবং বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আর কতদিন? একটা সময় হবে মানুষ আমাদের কাছে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আশা করবে না। তখন বাধ্য হয়ে আমাদের মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার যতই কৌশল করুক না কেন, বেগম খালেদা জিয়া আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। আপিল বিভাগ দুই মাসের জন্য জামিন স্থগিত করেছেন, আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আইন অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তিতে দুটি পথ আছে, একটা আইনের, আরেকটা রাজপথ। আমরা আইনি লড়াই করব আবার রাজপথেও থাকতে হবে। শুধু আইনি লড়াই দিয়ে এই যুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জিজ্ঞেসা করা হয়েছিল, আপনাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ রয়েছে, এটা কী ঠিক। তিনি জানান, ‘এটা ঠিক না’। তাহলে কেন আপনারা ব্রিটিশ আইনজীবী, রাজনীতিক ও মানবাধিকারকর্মী লর্ড কারলাইলকে নিয়োগ দিলেন? 

উত্তরে ফখরুল বলেন, দেশ নেত্রীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ পুরোটাই মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার জন্য এবং দেশের আইনজীবীদের সহযোগিতা দিতে লর্ড কারলাইলকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’

এদিকে, জার্মানিভিত্তিক একটি গবেষণায় ‘একনায়কতন্ত্রের’ তালিকায় বাংলাদেশ নাম যুক্ত হওয়ার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা এত দিন ধরে যে কথাগুলো বলছিলাম, আজকে তা বিশ্বে স্বীকৃত হয়েছে। এই গবেষণার মধ্য দিয়ে আমাদের বক্তব্যের প্রতিফলন হয়েছে।’

‘এই গবেষণায় আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে যারা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তারা অত্যন্ত লজ্জাবোধ করছি এবং আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি।’

অপরদিক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা এইচ টি ইমাম জার্মানিভিত্তিক এই গবেষণাটি প্রত্যাক্ষাণ করেছেন।

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে বিএনপি কতটুকু সাড়া পাচ্ছে, জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী বলেন, কতটুকু সাড়া এটা আমার বলার কিছু নেই, এটা সাংবাদিকরা দেখবে, জনগণ দেখবে। তবে আমার পর্যবেক্ষণ হলো, বিরোধী দলকে খুব ভয় পাচ্ছে সরকার। জনগণের মতামতকে ভয় পাচ্ছে। জনগণের মতামতকে ভয় পাচ্ছে বলে তারা বিভিন্ন কায়দা-কানুন করে অনৈতিকভাবে খালেদা জিয়ার জামিন আটকাচ্ছে। এটা একটা অনৈতিক কাজ। এটা হলো সরকারের ভয় পাওয়ার লক্ষণ। তারপর তাদের মিটিং করতে দিচ্ছে না। একটা গণতান্ত্রিক দেশে মিটিং করতে দেবে না, দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এআই/জেএ

Wordbridge School
Link copied!