• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

তৃতীয় শক্তি হতে চায় যুক্তফ্রন্ট


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭, ০৯:১০ পিএম
তৃতীয় শক্তি হতে চায় যুক্তফ্রন্ট

ঢাকা: দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক জোটের বাইরে তৃতীয় একটি রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টি করতে গঠন করা হয়েছে যুক্তফ্রন্ট। আপাতত এই যুক্তফ্রন্টের নেতৃত্বে আছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। রাজনৈতিক এই তৃতীয় শক্তি গড়ে তোলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না। যুক্তফ্রন্ট গঠন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তার বিরুদ্ধে ওঠা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ও তার ছাত্র রাজনীতি নিয়ে কথা হয় এই রাজনীতিবিদের সঙ্গে। 

মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন, দুই দলের মধ্যে ক্ষমতার লালসা, অর্থের লিপ্সা এবং এগুলো করতে গিয়ে ক্ষমতার জন্য উন্মাদ প্রতিযোগিতা ও হিংসা পুরো দেশের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করেছে। বর্তমানে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই, গুম খুন বেড়ে গেছে। বিশেষ করে দেশে ধর্ষণের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থাও নেয়া যাচ্ছে না। কারণ আইন এবং বিচার বিভাগকেও করায়াত্ব করা হয়েছে। এক কথায় গণতান্ত্রিক যে নূন্যতম অধিকারগুলো থাকে সে অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

জাতীয় নির্বাচনে এই জোট কিভাবে কাজ করবে? জানতে চাওয়া হলে মান্না বলেন, নির্বাচন আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে। এটাও আমাদের লড়াইয়ের একটি অংশ। তবে নির্বাচনে আমরা নিজেদের আলাদা স্বকীয় বৈশিষ্ট নিয়ে লড়ব। তবে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংশয় কাটেনি। বরং সেটি বাড়ছে দিন দিন। গণতন্ত্রের লড়াই মানে একটি গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হবে।

তিনি বলেন, এটি আমাদের দাবি। সরকার কিভাবে সেটি করতে চায় সেটি আমাদের বলুক। তারা যদি মনে করে আগের নির্বাচন চালিয়ে যাবে তাহলে সেটি আর বাংলাদেশে হবে না। তবে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে কথা বলছেন তাতে মনে হচ্ছে না তিনি কোনো সমঝোতার বিষয়ে আগ্রহী আছেন। আমরা এ ব্যাপারে খুবই শংকিত।

বিভিন্ন দলের অংশ গ্রহণে অনেক সময়ই রাজনৈতিক জোট হয়েছে। কিন্তু বড় দুই জোটের বাইরে কোন জোট টিকতে পারে না কেন? এ বিষয়ে মান্না বলেন, টিকতে পারে না এ কথাটা ঠিক না। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ৭ দলীয় জোট, ৮ দলীয় জোট বা ৫ দলীয় জোট একসঙ্গে আন্দোলন করেছে। তবে পরবর্তী সময়ে সেসব জোটের আর কার্যকারিতা দেখা যায়নি। আমাদের দেশের বাইরে ভারতে বা পশ্চিমবঙ্গে দুটো মূল ধারার বাইরে কিন্তু তৃতীয় ধারা কাজ করছে। এছাড়া ফ্রান্সে ম্যাঁখো প্রথম বা দ্বিতীয় তৃতীয় কোনো অবস্থানেই ছিলেন না। কিন্তু তিনি এখন প্রেসিডেন্ট। আমাদের এখানে তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক শক্তি কেন সফল হতে পারে না, সেটি কোথাও হয়তো ভুল আছে। আমরা সেই ভুলগুলো চিহ্নিত করে বুঝে বিকল্পশক্তি দাঁড় করানোর কাজটি করব।

আপনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন, তাই দলের ভেতর একটি ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আবার কাদের সিদ্দিকীও তাই, এছাড়া আ স ম আব্দুর রবও আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ। সে কারণে অনেকেই বলছেন সরকারের গ্রিন সিগনালেই আপনারা এই জোট করেছেন। এই প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, যদি ভেতরে ভেতরে সরকারের সাথে একটি যোগসাজশ থাকেও তাহলে সেটি আপনি জানেন না। আর যেহেতু জানেন না তাই সেটা আপনাকে বলবোও না। বাহ্যিকভাবে আমরা যা বলছি সেসব কর্মসূচির সাথে ক্ষমতাসীনদের সাথে কোনো মিলই নেই।

তাহলে কী বিএনপির সাথে যোগসাজশ আছে? মান্না বলেন, জনগণের কাছে লুকানোর কিছু নেই। একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আমরাও আন্দোলন করছি আর বিএনপিও সেই দাবিতে আন্দোলন করছে। এখানে স্লোগান ও আদর্শগত ঐক্য তো আছেই। তবে আমরা বিএনপির সাথে যাচ্ছি না। অনেকবারই তো তাদের দেখা হয়েছে। শুধু ক্ষমতার বদল এটা কোনো লড়াই হতে পারে না। বিএনপি যেসব দাবি করছে তার সাথে একমত না। তারা একটি সহায়ক সরকারের কথা বলছে এবং এর একটি রূপরেখা দেয়ার কথা, কিন্তু সেটি এখনো দেয়নি। তবে বিএনপির যৌক্তিক দাবির সাথে আমরা একমত।

রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের কারণে দুই বছর জেল খেটেছেন, কী ষড়যন্ত্র করেছিলেন, বা আপনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর কোনো পূর্ণ ব্যাখ্যাও দেননি কেন? জানতে চাইলে মান্না বলেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় অনেক কথাই বলা সম্ভব না। আমার আইনজীবী অনেক বিষয়েই কথা বলতে নিষেধ করেছেন। তবে এটুকু বলতেই পারি যে, এখন তিন বছর হতে চলেছে। কিন্তু এখনো আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ গঠন করা যায়নি। আমার জামিনের বিষয়ে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন তার বিরুদ্ধে তো একটি পুলিশি রিপোর্ট পর্যন্ত নেই। এটি একটি মিথ্যা বানোয়াট মামলা। এখনো ইউটিউবে সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে কথপোকথনের অডিও আছে। সেখানে কোথাও লাশ শব্দটি নেই। এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি আমি কোথাও লাশের কথা বলিনি।

যতদিন আওয়ামী লীগে ছিলেন ভেতরে থেকে দলের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন। এই অভিযোগ অনেক নেতার। এ বিষয়ে মান্না বলেন, ওবায়দুল কাদের যাদের হাইব্রিড কাউয়া বলেন তারাই আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। ওদের কথার কোনো জবাব দেয়ার কারণ আছে বলে মনে করি না। তবে দলের বিষয়ে আমি সমালোচনা করেছি দলীয় ফোরামে ও দলের ভেতরে থেকে। তবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বলেছি এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। আমি এই নির্বাচন মানি না। আর আওয়ামী লীগও করি না। এই বলে দল ছেড়েছি।

মান্না জানান, সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার পূর্ণপ্রস্তুতি ছিল। নির্বাচনে যে লড়তে না পারি আমাকে জেলে নেয়ার এটাও একটি কারণ ছিল। তবে এখন মেয়র পদে লড়ার এখন আর ইচ্ছা নেই। আজ নমিনেশন সাবমিট করলে কালই আমার জামিন বাতিল হতে পারে। এছাড়া এখন শুধুই যুক্তফ্রন্ট নিয়ে কাজ করতে চাই।

আশির দশকের আলোচিত ছাত্র নেতা ও ডাকসুর একমাত্র দুইবার নির্বাচিত ভিপি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে আমি এতোটাই জনপ্রিয় ছিলাম যে, যদি চাইতাম তাহলে তৃতীয় মেয়াদেও ডাকসু ভিপি হতে পারতাম। মানুষ ভাববে কোনো কাজ নেই। জাতির জন্য কোনো কাজ করার চিন্তা বা আগ্রহ নেই। তাই বার বার ডাকসু নির্বাচন করছে। এজন্যই আর ডাকসু নির্বাচন করিনি। তিনি বলেন, এখন ছাত্র রাজনীতি নেই। আছে মাস্তানি গুণ্ডামী। পেশী শক্তি দেখিয়ে ছাত্রলীগ ডাকসু ভবন থেকে আমার ছবি সরিয়ে দিয়েছে।

মান্না বলেন, ছাত্র রাজনীতির স্বর্ণযুগ আমি পাইনি। যেটি তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী বা আ স ম আব্দুর রব পেয়েছিলেন। তারা ঊনসত্তর, একাত্তর পেয়েছেন। তাদের ছাত্র রাজনীতির সাথে যখন আমি নিজেকে তুলনা করি তখন দেখি যে আমার কথার মাঝে একটি চুম্বক শক্তি ছিল। যার জন্য ছাত্ররা আমাকে গ্রহণ করেছিল। আমি তাদের কাছে জনপ্রিয় হতে পেরেছিলাম।

ছাত্র রাজনীতিতে যতটা জনপ্রিয় ছিলেন। পরবর্তীকালে জাতীয় রাজনীতিতে আর সেভাবে জনপ্রিয় হতে পারেননি। কিন্তু বারবার রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করেছেন। এবার যুক্তফ্রন্ট গঠন করলেন। নির্বাচনে এই ফ্রন্ট কিভাবে কাজ করবে বা এই ফ্রন্ট নিয়ে কতটুকু সফল হতে পারবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়নি। গত ৫ থেকে ৭ বছর যাবৎ এই জোট গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে অনেকেই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আবার চলেও গেছেন, সবার সাথে ঐক্যমত হয়নি। আমরা মনে করি স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পর দেশ যেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সেভাবে এগুতে পারেনি। এজন্য দেশের প্রধান বড় দুই রাজনৈতিক দলই দায়ী। তাদের আচরণের মধ্যদিয়ে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতির গড়ে উঠেছে সেটিই এই ক্ষতি করেছে।

ভিডিওতে দেখুন পুরো সাক্ষাৎকার:

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!