• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি শুধু ব্যবসায়ীদের মুখেই


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১২, ২০১৮, ০৭:১৫ পিএম
দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি শুধু ব্যবসায়ীদের মুখেই

ঢাকা : রমজান এলেই ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা-বৈঠকে বসেন সরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এবারো তার ব্যত্যয় ঘটেনি। আর প্রতিবারই এ সময় ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি দেন, রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু বাস্তব চিত্র উল্টো। এমনকি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ী উভয় পক্ষেরই কর্মকাণ্ডই প্রমাণিত হয় লোক দেখানো হিসেবে।

এ প্রসঙ্গে ভোক্তারা বলছেন, রমজানে পণ্যের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের স্বভাবসুলভ আচরণে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এরপরও তারা দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যেন সরকারপক্ষ তাদের এ আশ্বাসে হাত গুটিয়ে বসে থাকে।

তারা বলছে, গত কয়েক বছর থেকে রমজানে দাম বাড়ানোর নতুন কৌশল চালু করেছেন ব্যবসায়ীরা। রমজান শুরুর আগেই তারা পণ্যের দাম বাড়িয়ে নেন। এরপর রমজানে সেই অতিরিক্ত দামকে স্বাভাবিক বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। এ বছরও এমন হচ্ছে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে ভোক্তাদের এসব কথার সত্যতাও মিলেছে। গত সপ্তাহে বাজারে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজ রসুন তেল চিনিসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম এখনো কমেনি।

অর্থাৎ রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে ৫ টাকা, খুচরা ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ৪ টাকা পর্যন্ত, পেঁয়াজ ও রসুনের দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা। আর চড়া সব ধরনের সবজি, মাছ ও মুরগির দাম। এ পরিস্থিতি শুধু রাজধানীতেই নয়, সারা দেশেই।

শুক্রবার (১১ মে) চট্টগ্রামেও রমজানকে সামনে রেখে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। আর রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন সবজিগুলোর দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা পর্যন্ত। ওই এলাকার বাজারগুলোয় ইতোমধ্যে ঝাঁজ বাড়তে শুরু করেছে কাঁচা মরিচের। বেগুন, গাজর, শসা ও ধনেপাতার দর বাড়ছে জ্যামিতিক হারে।  চট্টগ্রামের বিক্রেতাদের দাবি, বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় ক্ষেতের সবজি নষ্ট হয়েছে। ফলে কৃষকের কাছ থেকে পাইকারদের বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। ক্রয়মূল্য বেশি হওয়ায় খুচরা বাজারে সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে।  

তবে রাজধানী বা চট্টগ্রাম কোনো বাজারেই সবজির কোনো সঙ্কট চোখে পড়েনি। এর বাজারে নতুন উত্তাপ যে ব্রয়লার মুরগিসহ অন্যান্য মাংস ও মাছে তারও কোনো সঙ্কট নেই। চট্টগ্রামে গরুর মাংস অনেক এলাকায় ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। ঢাকায়ও বিভিন্ন বাজারে মাংসের দাম বিভিন্ন।

এ ছাড়া ব্রয়লারসহ অন্যান্য মুরগির দাম দুই সপ্তাহ আগেই বাড়িয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৬০ টাকা, যা আগে ১৪০ টাকায় মিলত। আর দেশি মুরগির প্রতি পিসে প্রায় ৫০ টাকা বাড়তি। এমন অবস্থা রমজানে বাড়তি চাহিদার পণ্য খেজুরসহ বিভিন্ন ফলের। পাইকারি বাজারে খেজুরের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। ফলে এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে খেজুরের দাম অনেক কম। খেজুর (ভেজা) এবার ৬৮ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে মিলছে।

কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য খুচরা বাজারে ১২০ টাকার নিচে কোনো খেজুর মিলছে না। বিভিন্ন ফলের ক্ষেত্রেও পাইকারি ও খুচরা দামের ব্যবধান কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৭০ টাকা। পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে ফল ও খেজুরের দামের পার্থক্য অস্বাভাবিক স্বীকার করে ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রফতানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ব্যবসায়ীরা এমন করলে ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাজার তদারকি বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।  

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরবরাহ ঘাটতির কারণে কোনো পণ্যের দাম কমবেশি হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু দেশে একক আধিপত্য বিস্তার করে কিছু কোম্পানি পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। কারণ তারা এখন বাজারের নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয়েছে।  

তিনি বলেন, শুধু বড় করপোরেটরা নয়, এখন ছোট-বড় আড়তদার, পাইকার, খুচরা ব্যবসায়ী একে অন্যের সঙ্গে যোগসাজশে নিজেদের বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি করে ফেলেছে। এসব ভাঙতে হবে। আর সে জন্য সরকারি নজরদারির বিকল্প নেই।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!