• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ধরলা সেতু খুলে দেয়ায় বাধভাঙ্গা উল্লাস এলাকাবাসীর


জাহাঙ্গীর আলম, কুড়িগ্রাম এপ্রিল ২৮, ২০১৮, ০৭:৩৫ পিএম
ধরলা সেতু খুলে দেয়ায় বাধভাঙ্গা উল্লাস এলাকাবাসীর

কুড়িগ্রাম : দীর্ঘ অপেক্ষার পর কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কুলাঘাটে নির্মিত রংপুর বিভাগের সর্ববৃহত সড়ক সেতু দ্বিতীয় ধরলা সেতু চলাচলের জন্য খুলে দেয়ায় উপজেলার সর্বত্রই মানুষের মাঝে বিরাজ করছে বাধভাঙ্গা আনন্দ উল্লাস। সেতু খুলে দেয়ার খবর শুনে দুর-দুরান্ত থেকে শত শত নারী-পুরুষ শিশু সেতুর দুই পাড়ে ভীড় জমায়। দর্শনার্থীদের পদচারণায় সেতুর দুই পাড় ও আশপাশের এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে।

দেশের মুল ভূখন্ড থেকে ধরলা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন থাকায় যোগাযোগ, ব্যবসা-বানিজ্য, উচ্চ শিক্ষা গ্রহন, জরুরী উন্নত চিকিৎসা সেবা, আত্মকর্মসংস্থান, সবকিছুতেই এতদিন এ উপজেলার মানুষ ছিল অনেকটা পিছিয়ে। শুধুমাত্র যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারনে স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ সময়েও দৃশ্যমান তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি প্রায় আড়াই লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ জনপদে। ফুলবাড়ী ও লালমনিরহাট জেলার সংযোগস্থলে কুলাঘাটে দ্বিতীয় ধরলা সেতুর নির্মান কাজ শুরু হলে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তিলাভের স্বপ্নে প্রহর গুনতে থাকে উপজেলাবাসী। কিন্তু প্রায় দুইমাস আগে সেতু নির্মানের কাজ শেষ হলেও অজানা কারনে  উদ্বোধন বিলম্বিত হওয়ায় ধর্য্যহারা হয়ে যায় উপজেলার মানুষ।

অবশেষে উপজেলাবাসীর নদী পারাপারের ভোগান্তি লাঘবে দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে  কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ জাফর আলী ও কুড়িগ্রাম জেলা প্রসাশক মোছাঃ সুলতানা পারভীন শনিবার (২৮ এপ্রিল) বিকাল ৪টায় স্বশরীরে উপস্থিত থেকে চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেন।

এ সময় কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মন্জু মন্ডল, ফুলবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান শেখ, সাধারন সম্পাদক গোলাম রব্বানী সরকার, সিভিল সার্জন ডাঃ আমিনুল ইসলাম, ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবেন্দ্রনাথ উরাঁও, উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার ফুয়াদ রুহানী উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে,২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালমনিরহাটের ফুলবাড়ীর মধ্যবর্তী স্থানে কুলাঘাটে ধরলা নদীর ওপর ৯৫০ মিটার পিসি গার্ডার সেতুর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে নির্মিত রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দীর্ঘতম এই সেতুটি নির্মানের জন্য সিমপ্লেক্স এবং নাভানা কনষ্ট্রাকশন গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে চুক্তি সম্পাদিত হয় ২০১৪ সালে। সেতুটির নদী শাসন, এ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ ও মূল সেতুর জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১৯১ কোটি ৬৩ লাখ ২২৩ টাকা ৫৮ পয়সা।  সেতুটি চালু হওয়ায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও লালমনিরহাট জেলার ২০ লাখ মানুষ উপকৃত হবে। বিভাগীয় শহর রংপুরসহ দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা সহজ হবে। কমে যাবে ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার সড়ক পথ।

অন্যদিকে ফুলবাড়ী হয়ে বঙ্গসোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সেভেন সিস্টারস নামে খ্যাত উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৭ টি রাজ্য আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা ও অরুনাচলের সাথে বাংলাদেশ ও ভারতের পন্য পরিবহন ব্যয় বহুলাংশে কমে আসবে। যুগান্তকারী অগ্রগতি ঘটবে বাংলাদেশ ও ভারতের এসব এলাকার। একই  সাথে বাংলাদেশের লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা হয়ে কলিকাতার যোগাযোগেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।

সেতু দেখতে আসা উপজেলার কবিরমামুদ গ্রামের আবুল কাশেম সরকার (৭০) বীর মুক্তিযোদ্ধা নজীর হোসেন, ব্যবসায়ী নুরজামাল মিয়া জানান, জন্মের পর থেকে আমরা রোদ, বৃষ্টি, বন্যা, খরা উপেক্ষা করে জীবনের ঝুকি নিয়ে নদী পারাপার হয়েছি। আজ সেই কষ্টের পরিসমাপ্তি হল।

উপজেলার ব্যবসায়ী ওয়াহেদ আলী, সুধীর চন্দ্র ভানু জানান, এখন থেকে মালামার আনা নেয়ার কাজে আর কষ্ট করতে হবে না। আজ থেকে আমাদের স্বপ্নের সেতু দিয়ে স্বাধীন ভাবে মালামাল আনা নেয়া করতে পারবো।

দাসিয়ার ছড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা বলেন, এতদিন আমরা অবরুদ্ধ ছিলাম। আজ থেকে স্বাধীনভাবে দেশের যেকোন অঞ্চলে যেতে পারবো। মনে হচ্ছে বুকের উপর থেকে বিরাট একটা পাথর নেমে গেল।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!