• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নতুন কৌশলে নির্বাচনমুখী বিএনপি


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৩০, ২০১৭, ০১:৩৬ পিএম
নতুন কৌশলে নির্বাচনমুখী বিএনপি

ঢাকা: নতুন বছরে নতুন কৌশল নিয়ে এগুতে চায় দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। নানা অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা নিয়ে সময় পার করলেও নতুন বছরে দলটির মনোযোগ এখন মূলত একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিকে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ সৃষ্টি করতে দলটি যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।

সংলাপের দুয়ার উন্মুক্ত রেখে আগামী দিনে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে ‘ইতিবাচক’ ভূমিকা রাখতে সামনে এগোনোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আন্দোলন দলটির সর্বশেষ বিকল্প বলে জানিয়েছেন সিনিয়র নেতারা।

জানা গেছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বেশ সতর্ক। নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিষয়ে ‘অতি উৎসাহ’ দেখানোর পক্ষপাতি নয় তারা। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করেই ধাপে ধাপে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে চায় দলটি।

নির্বাচনের এখনো এক বছর সময় হাতে থাকায় দলটি দাবি-দাওয়ার মধ্যেই আরো কয়েকটি মাস পার করবে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো ধরনের সমঝোতা না হলে নির্বাচনের ছয় মাস আগে ‘সর্বাত্মক’ আন্দোলনের পথ বেছে নেয়া হতে পারে।

এক-এগারোর পর থেকে ১০ বছর ধরে রাজনৈতিক দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে কাক্সিক্ষত ফল না পেলেও দলটি সীমিত আসন নিয়ে বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিল। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি।

ওই নির্বাচনের আগে ও পরে আন্দোলনে ব্যর্থতা এবং একই সাথে সরকারের দমন-পীড়নে বিএনপি অনেকটাই চাপে পড়ে যায়। বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি না নেয়ায় গত দুই বছরে দলটি সাংগঠনিকভাবে এখন অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনই লক্ষ্য এখন। যদিও দলটি সেই নির্বাচন নিয়েও নানা অনিশ্চয়তায় রয়েছে। নির্বাচন আদৌ হবে কি না বা নির্বাচন হলে কোন ধরনের নির্বাচন হবে তা নিয়ে রয়েছে নেতাদের মধ্যে যথেষ্ট ভাবনা।

বিএনপির অভ্যন্তরে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা ভাবনা কাজ করছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই দলটির। নেতারা বলছেন, বিএনপিতে প্রার্থীর কোনো অভাব নেই। নির্বাচনে অংশ নিলে ‘ডু অর ডাই’ ধরে নিয়ে সাংগঠনিক সব সমস্যাও সমাধান হয়ে যাবে। নেতাকর্মীরা ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে এসে দল মনোনীত প্রার্থীকেই বিজয়ী করার জন্য কাজ করবেন। বিএনপির চিন্তা মূলত অন্য জায়গায়। সেটি হচ্ছে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ আর ‘নির্বাচনকালীন সরকার’।

দলের সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নানামুখী কাজ করে যাচ্ছে। মোক্ষম সময়েই তা প্রকাশ পাবে।

জানা গেছে, বিএনপির রাজনৈতিক পরিকল্পনা হচ্ছে- প্রথমত, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে নানা তৎপরতার মাধ্যমে আলোচনা ও সমঝোতার পথে সরকারকে টেনে আনা এবং দ্বিতীয়ত, আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।

রাজপথের আন্দোলনকে ‘সর্বশেষ বিকল্প’ হিসেবে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে এখন থেকে আরো তিন-চার মাস সরকারকে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে যাবে তারা।

যদি সরকার কোনো সংলাপে বসতে রাজি না হয়, তাহলে তারা কঠোর কর্মসূচির কথা চিন্তা করবেন। যদিও দলটির নেতারা মনে করছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি ‘একতরফা’ নির্বাচন করা সরকারের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

বিএনপির সিনিয়র পর্যায়ের একাধিক নেতা এ-ও বলেছেন, নতুন বছরে নির্বাচন তাদের একমাত্র ফোকাস হলেও দলের চেয়ারপারসনের মামলার গতিবিধিও তারা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। যদি খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার না পান তাহলে রাজপথেই সে প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে চারটি মামলা দায়ের করা হয় বিগত সেনা সমর্থিত এক-এগারোর সরকারের সময়ে। বাকি ৩৩টি মামলা দায়ের করা হয় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। হত্যা, সহিংসতা, রাষ্ট্রদ্রোহ, দুর্নীতি, আদালত অবমাননাসহ নানা অভিযোগে এসব মামলা করা হয়। ১৭টি মামলায় ইতোমধ্যে চার্জশিট দেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিট্যাবল ট্রাস্ট মামলা দু’টি দ্রুত সমাপ্তির পথে রয়েছে। দলটির নেতারা বলেছেন, এ দু’টি মামলা এবং এর সম্ভাব্য রায় নিয়ে বিচলিত নন তারা। মামলার কাগজপত্র, সাথী, তথ্য-প্রমাণ বিবেচনায় নেয়া হলে খালেদা জিয়া ‘বেকসুর খালাস’ পাবেন এমনই দাবি তাদের।

তবে তাদের শঙ্কা অন্যত্র। তারা বলছেন, দলের চেয়ারপারসনকে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে এ মামলাকে রাজনৈতিকভাবে ‘কাজে’ লাগাতে পারে সরকার। তবে সেটি করা হলে রাজনীতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে এমন আভাসও দিয়েছেন তারা।

এদিকে বছরের শুরুতেই একতরফা নির্বাচনের দিন পাঁচ জানুয়ারি ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বিশেষ করে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করতে চায় দলটি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দিনকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বিএনপি। জানা গেছে, এবারো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি নেবে দলটি। এ জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ডাকা হতে পারে।


সোনালীনিউজ/জেডআরসি/আকন

Wordbridge School
Link copied!