• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের সময় ফেসবুক গুজব নিয়ে উদ্বেগে আ.লীগ


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ১৬, ২০১৮, ০৪:৩৭ পিএম
নির্বাচনের সময় ফেসবুক গুজব নিয়ে উদ্বেগে আ.লীগ

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নতুন উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচন চলাকালে ফেসবুকসহ অনলাইনকেন্দ্রিক সামাজিক যোগাযোগের অন্য মাধ্যমগুলোতে নির্বাচন ও দলটিকে নিয়ে গুজব রটানোর বিষয়ে চিন্তিত দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা একই দুশ্চিন্তায় আচ্ছন্ন। নির্বাচনের আগে ইশতেহার, প্রার্থী মনোনয়ন ও তৃণমূলের বিরোধ মেটানো নিয়ে দলটি যেমন ব্যস্ত, তেমনি ব্যস্ত ও উদ্বেগ নির্বাচন চলাকালে গুজব ঠেকানোর জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়ার মধ্যে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে গুজব। নির্বাচনকে ঘিরে দেশ-বিদেশ থেকে বিএনপি-জামায়াত নানা কায়দায় গুজব ছড়িয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা শীর্ষ নেতাদের।

দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বিভিন্ন কারণে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা থাকলেও সরকারকে বিভিন্ন সময় অস্বস্তিতে ফেলেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো গুজবে। গুজব রটিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের অপচেষ্টা বেশ ভাবিয়ে তুলেছে দলটির নীতিনির্ধারকদের। সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারো ওই ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে বলে ক্ষমতাসীনদের আশঙ্কা।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় মনে করে, জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক নিয়ে বরাবরই হোঁচট খাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। বিরোধীপক্ষের গুজবও ঠেকাতে পারছে না। প্রায়ই দলটির জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। নানা ইস্যুতে সরকারবিরোধীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ফেসবুকে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়ে সরকারকে সমালোচনার মুখোমুখি করছে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী।

বিটিআরসির মতে, এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন দেশের সাড়ে আট কোটির বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন। ফলে এসব মাধ্যমের গুজব সাধারণ মানুষের মধ্যে সহজেই প্রভাব ফেলতে পারে।

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সামাজিক মাধ্যমে যতটা সক্রিয়, সে তুলনায় দলটির কর্মী ও সমর্থকরা ততটা সোচ্চার নন বলেও দলের শীর্ষ পর্যায়ের ধারণা। দলটির নেতৃত্বাধীন সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করলেও ‘গুজব সন্ত্রাসের’ কারণে এর সবচেয়ে বেশি কুফল ভোগ করতে হচ্ছে তাদেরই। তবে নির্বাচন চলাকালে গুজব প্রতিরোধ ও সেগুলোর জবাব দেওয়ার বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে দলটি।

দলের অভিজ্ঞ নেতারা মনে করেন,  সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর বিশাল তথ্যভান্ডার থেকে অপপ্রচার ফিল্টার করা ও সেগুলো পুরোপুরি ঠেকানো প্রায় অসম্ভব। অপপ্রচারের জবাব দিয়ে জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোকে কীভাবে নির্বাচনী প্রচার ও সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরতে ব্যবহার করা যায়, এ বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ করছে দলটি। দলের বিরুদ্ধে গুজব যথাসম্ভব ঠেকাতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেসব বিষয়েও পদক্ষেপের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি।

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সম্প্রতি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সাইবার যুদ্ধ হবে।’ এমন পরিস্থিতিতে দলটির কর্মী ও সমর্থকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরো বেশি সক্রিয় হতে পরামর্শ দেন তিনি। তার বক্তব্যের আগেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় করার উদ্যোগ দলটি নেয় বলে সূত্র জানায়।

দলের গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের’ (সিআরআই) পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য সিআরআই ইতোমধ্যে কয়েকটি কর্মশালারও আয়োজন করে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এ প্রসঙ্গে জানান, ‘জামায়াত-বিএনপির অপপ্রচার রোধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সতর্ক নজর রাখতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জনগণ যেন গুজবে বিভ্রান্ত না হন, সেজন্য অপপ্রচারের জবাব দেওয়া এবং সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরতে নেতাকর্মীদের প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও নির্দেশ আছে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে আওয়ামী লীগ যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে, এর নানা প্রমাণও আছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে বিশেষ তথ্য-প্রযুক্তি সেল। এর মাধ্যমে যে কোনো অপপ্রচার বা গুজবের জবাব তৃণমূল নেতারাও দিতে পারবেন। একটি সাইবার সাইড (সেল) গঠিত হয়েছে দলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে।

তথ্য সেলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দেওয়ার জন্য কাজ করছেন নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের দিন ফেসবুক বন্ধ রাখতে নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেওয়ার কথাও ভাবছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন। জাতীয় নির্বাচনের আগে যে কোনো সময় থেকে ফেসবুক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার পরিকল্পনা সরকারেরও আছে বলে জানায় সূত্র।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ঠেকাতে ‘গুজব শনাক্তকরণ সেল’ গঠন করেছে। পুলিশও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে কাজ করছে। সবশেষ নজরদারিতে যোগ হয়েছে র্যাব।

আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ নির্বাচনের আগে নোংরা প্রচারণার জবাব দিতে ‘সাইবার ব্রিগেড’ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে সম্প্রতি। দলের অন্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও নজর দিয়েছে গুজব ঠেকানোর দিকে। দলীয়ভাবে নানা গ্রুপ করে গুজব বন্ধে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আগমুহূর্তে এ কাজে আরো গতিশীলতা আনতে চায় দলটি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!