• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
শোকের মাস

নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি ঠেকাতে কঠোর আ.লীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ৫, ২০১৭, ০৯:২৭ পিএম
নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি ঠেকাতে কঠোর আ.লীগ

ঢাকা : শোকের মাসে নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই মাসকে কেন্দ্র করে কোন পর্যায়ে চাঁদাবাজি যাতে না হয় সেজন্য তৃণমুল নেতাকর্মীদের সর্তক করে দিয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।

এরইমধ্যে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শোকাবহ আগষ্ট মাসে দলীয় নেতাকর্মীরা কোন ধরনের চাঁদাবাজি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান। এই হুশিয়ারির পর ঢাকার এক সংসদ সদস্য তার নিজ আসনের আওতাভুক্ত সকল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, থানা ও সংশ্লিষ্ট সকলকে চিঠি দিয়ে চাঁদাবাজি ঠেকানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।

এদিকে, বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, আগষ্ট মাসকে কেন্দ্র করে নিসরব চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের চাঁদা দিতে হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের হুশিয়ারি সম্পর্কে তারা বলেন, দলের পক্ষ থেকে হুশিয়ারি দেয়াটা ভাল। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ের চাঁদাবাজির ঘটনা এই হুশিয়ারি দিয়ে বন্ধ করা যাবে না। এজন্য স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের উদ্যোগ নিতে হবে।

গত সোমবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে এক কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৫ আগস্ট শোক দিবসকে ঘিরে চাঁদাবাজির খবর পেলেই জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। জাতির শোকের এ দিনটিকে সামনে রেখে একটি চক্র চাঁদাবাজিতে মেতে ওঠে। তিনি বলেন, কেউ যেন শোক দিবসকে ঘিরে কোনো অপকর্ম করতে না পারে সেটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।কারণ, এই মাসে জাতির জনককে স্মরণের নামে চাঁদাবাজি যেন বঙ্গবন্ধুর স্মরণকে ম্লান করতে না পারে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি দেশবাসীকে বলব, কোথাও চাঁদাবাজির খবর পেলে আমাদের পার্টি অফিসে খবর দেবেন। সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। এ ধরনের অপকর্ম সহ্য করা হবে না।

দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের হাই কমান্ড কোন ধরনের অপ্রীতিকর ও অনৈতিক ঘটনার সঙ্গে দলের নেতাকর্মীরা জড়িয়ে পড়–ক তা চাইছেন না।  শুধু আগষ্ট মাস নয়, নির্বাচনের আগে কোন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যদি কোন পর্যায়ের নেতা কর্মীরা জড়িয়ে পড়ে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ইউএনও তারেক সালমান এবং বগুড়ার তুফান কর্মকাণ্ডের ঘটনা উলে­খ করে বলেন, এই দুটি ঘটনার একটি অতি উৎসাহি আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতার কাজ। অন্যটি দলের প্রভাবে স্থানীয় পর্যায়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া রাজনীতির একটি উদাহরণ। এই দুটি ঘটনায় দলের পক।স থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কারণ এই দুটি ঘটনায় সারাদেশে দলের বদনাম হয়েছে। এই অবস্থায় দলের সিদ্ধান্তে দুটি ঘটনায় অভিযুক্তদের বহিস্কার করা হয়েছে। যে কারণে বাজে কাজে দলের দুনার্ম হলেও তড়িৎ বহিস্কারে ভাবমুর্তি ফিরে এসেছে।

কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য জানান, এখন থেকে যেকোন ধরনের অনৈতিক ঘটনা, চাঁদাবাজির ঘটনায় দলের কোন নেতা কর্মীর নাম এলেই সঙ্গে সঙ্গে বহিস্কার করা হবে। দলের সভাপ৫তিও এমন নির্দেশনা দিয়েছেন বলে ওই নেতা জানান।

দলের সাধারণ সম্পাদকের এই সর্তকবার্তার তিনদিনের মাথায় বুধবার একই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আহবান জানান ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আসলামুল হক। তিনি আগামী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও তার দলীয় অঙ্গ সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে কেউ যাতে চাঁদাবাজি না করতে পারে সেজন্য থানায় জিডি ও সরাসরি মোবাইল ফোনে অভিযোগ করতে বলেন।  

বিষয়টি সবাইকে জানাতে এই সাংসদ বিভিন্ন মার্কেট মালিক, গার্মেন্টস ও দোকান মালিকদের উদ্দেশ্যে নোটিশ আকারে একটি চিঠি প্রেরণ করেছেন। ওই চিঠিতে আসলামুল হক উলে­খ করেন, আগামী ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। এ উপলক্ষে কোন ব্যক্তি/সংগঠন আমার দলীয় পরিচয়ে (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) দলের হয়ে আর্থিক সহযোগিতা(চাঁদা আদায়ের লক্ষ্যে অর্থ) চাইলে সঙ্গে সঙ্গে আমার মোবাইল নম্বরে (০১৮১৭০২৬৫৫১) বা সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হল।

সেই সঙ্গে তিনি কোন সংগঠন বা ব্যক্তিকে অর্থ প্রদান থেকে বিরত থাকারও অনুরোধ করেছেন। বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোটিশটি প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, সারাদেশে এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ধন্যবাদ আসলাম ভাই।

ঢাকার এই সংসদ সদস্যের মত সকল সংসদ সদস্যকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানান ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দেশের সকল সংসদ সদস্যকে এই উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। তাহলে চাঁদাবাজদের ঠেকানো সম্ভব হবে। তারা বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে কেউ চাঁদা দিলেও নিজের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মুখ খুলতে চান না। তাই সকল সংসদ সদস্য একই ধরনের উদ্যোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য সুবিধা হত।

উলে­খ্য, প্রতিবছর বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান উদযাপনে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ শুনতে হয় ক্ষমতাসীন সাংসদ, মন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় দলীয় নেতৃবৃন্দদের। সাংসদের নেয়া এমন উদ্যোগে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী শ্রেণীর মানুষ ও আওয়ামী লীগের সমর্থক-নেতৃবৃন্দ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!