• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রার্থী না হলেও নির্বাচনী প্রচারণায় থাকবেন তারেকপত্নী


হৃদয় আজিজ এপ্রিল ১৭, ২০১৮, ০৩:১৬ পিএম
প্রার্থী না হলেও নির্বাচনী প্রচারণায় থাকবেন তারেকপত্নী

ফাইল ছবি

ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে রাজনীতিতে নিয়ে আসার বিষয়টি বার বার আলোচনায় আসছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়া দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে জেলে গেলে আলোচনাটি আরো ঘনিভূত হয়। দুই মাস পেরিয়ে গেল দলের চেয়ারপারসন কারাগারে।

এদিকে প্রায় পনেরো বছরের দণ্ড মাথায় নিয়ে লন্ডনে বসে দল চালাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। এমন সময়ে দলের হাল ধরতে, বিশেষ করে নির্বাচনের আগে প্রচারণার ক্ষেত্রে জিয়া পরিবারের কাউকে সামনে আনার ক্ষেত্রে ডা. জোবায়দাকেই সবচেয়ে বেশি চিন্তা করা হচ্ছে।

তবে দেশে ফেরার ক্ষেত্রে ডা. জোবায়দার সবচেয়ে বড় বাধা হলো তার পাসপোর্ট। ২০১৩ সালে তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তারেক রহমান এবং তার পরিবারের কেউই পাসপোর্ট নবায়ন করেননি। তবে নিজ দেশে ফিরতে চাইলে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে অস্থায়ী এন্ট্রি ডকুমেন্ট নেয়া যায়। 

এ রকম একটি ডকুমেন্ট নিয়ে অথবা নতুন পাসপোর্ট করে ডা. জোবায়দা দেশে আসতে পারেন। তবে, জোবায়দা রহমান দেশে আসতে চাইলে সরকার কেমন আচরণ করে সেটাই দেখার বিষয়। কেননা জোবায়দা ও তার মায়ের বিরুদ্ধেও মামলা আছে, যার তদন্ত চলছে। 

এদিকে, পুরনো ঢাকার নির্জন কারাগারে থেকে বেগম জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে সরকার। তাতে বিএনপির আস্থা নেই বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। খালেদা জিয়া দেখার জন্য স্বল্প সময়ের জন্য ডা. জোবায়দা রমজান মাসে ঢাকায় আসতে পারেন বলে বিএনপির একটি নীতি নির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে লন্ডন থেকে মেয়েদের নিয়ে দেশ ঘুরে গেছেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তিনি দেখাও করেছেন। 

ওই সূত্র আরো জানিয়েছে, পেশায় চিকিৎসক জোবায়দা আসছেন মূলত খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য। স্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গেও এ বিষয়ে তিনি কথা বলবেন।

শাশুড়ি অসুস্থ হলে পুত্রবধূই তার চিকিৎসার যাবতীয় বিষয় দেখাশুনা করতেন। খালেদা গত বছর যখন লন্ডনে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন তখনো সার্বক্ষণিক তার পাশে ছিলেন জোবায়দা। 

বিএনপির গতিবিধি পর্যাবেক্ষণ করে দেখা যায়, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। নেত্রী মুক্তি পাবেন আশা করে এক ধরনের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি; আবার বিচারাধীন ৩৪ মামলার ক্ষেত্রে সরকারের কেমন আচারণ হবে সেদিকেও লক্ষ্য রাখছে দলটি, এজন্য তারা বেগম জিয়ার যদি মুক্ত না হয় সেকথা ভেবে বিকল্প প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। 

দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া আগামী ৮ মে উচ্চ আদালতে মামলার শুনানিতে জামিন না পেলে আসন্ন রমজান মাসে শাশুড়িকে দেখতে দেশে আসবেন ডা. জোবাইদা। এ সময় তিনি দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন। কিছুদিন দেশে থেকে আবার লন্ডনে চলে যাবেন। তবে নির্বাচনের আগে আবার দেশে এসে সারাদেশে বিএনপির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেবেন ডা. জোবাইদা রহমান।

এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, তারা এ মুহূর্তে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির আইনি লড়াইয়ে ব্যস্ত। তারা আশা করছেন, খালেদা জিয়া শিগগির জামিনে মুক্তি পাবেন।

নির্বাচনী প্রচারে ডা. জোবাইদা রহমান দেশে আসবেন কি না- প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিস্থিতিই বলে দেবে তিনি আসবেন কি না। একইসঙ্গে ব্যারিস্টার মওদুদ এও বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর কাছে ডা. জোবাইদা রহমানের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাৎক্ষণিকভাবে অনেক সিদ্ধান্তই নেয়া হতে পারে। 

দলীয় সূত্র জানায়, দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও আপাতত একাদশ সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে দলটি। এ লক্ষ্যে দলের ভেতরে-ভেতরে নির্বাচনে অংশ নেয়ার যাবতীয় প্রস্তুতিমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়েও চলছে প্রার্থী জরিপের কাজ। ২০ দলীয় জোট ও সমমনা দলগুলোর জন্য অর্ধশতাধিক আসন রেখে বাকি দুইশর কিছু বেশি আসনে তিনজন করে সম্ভাব্য যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীর নামও তালিকা করছে দলটি। 

বিএনপির কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা জানান, খালেদা জিয়া আইনি লড়াইয়ে জামিন পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পেলেও শারীরিকভাবে অসুস্থ তিনি। আগের মতো সারাদেশে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন না। এ পরিস্থিতিতে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের ‘ইতিবাচক ইমেজ’কে কাজে লাগাতে চায় দলটি।

দলের ওই নেতাদের মতে, বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিয়ে দল পরিচালনা করছেন। দীর্ঘদিন ধরে দলের কট্টরপন্থি ও উদারপন্থিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও নয়াপল্টন কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মধ্যে কোন্দল থাকলেও এখন আর তা প্রকাশ্যে নেই। 

তবে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে মনোনয়ন দেয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতার লড়াই শুরুর আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। ওই পরিস্থিতি কারাগার থেকে খালেদা জিয়া এবং লন্ডন থেকে তারেক রহমানের পক্ষে সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে ডা. জোবাইদা রহমান নির্বাচনী মাঠে থাকলে নেতাকর্মীরা আরো বেশি ‘ঐক্যবদ্ধ’ থাকতে ‘সহায়ক’ হবে বলে মনে করেন তারা। 

বিএনপি নেতারা আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইতিমধ্যে ডা. জোবাইদা রাজনীতিতে এলে স্বাগত জানাবেন বলে মত প্রকাশ করেছেন। তার মতো একজন শিক্ষিত মেয়ে রাজনীতিতে এলে ভালো হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের মনোভাব ইতিবাচক। দলের ভেতর ও বাইরে তার ব্যক্তি ইমেজ দলের সংকটকালে কাজে লাগানোর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বিএনপি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ডা. জোবাইদা রহমানের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দলের প্রয়োজনে এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজন হলে তখন দলের হাইকমান্ড প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন।

ডা. জোবায়দা রহমান তার একমাত্র কন্যা জায়মা রহমানকে নিয়ে স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনে যান। ১০ বছর ধরে তিনি সেখানেই আছেন। তিনি সরকারি চিকিৎসক হিসেবে চাকরি করতেন। দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার কারণে ২০১২ সালে তিনি বরখাস্ত হন। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!