• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বইমেলায় অব্যবস্থাপনা ক্ষুব্ধ প্রকাশক-পাঠকরা


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৭, ১২:৫৫ পিএম
বইমেলায় অব্যবস্থাপনা ক্ষুব্ধ প্রকাশক-পাঠকরা

ঢাকা : সোহরাওয়ার্দীর সারা পথে উড়ছে ধুলা, বিক্রয়কর্মীদের মুখ ঢাকা মাস্কে; কাঁচা-পাকা রাস্তায় কোথাও কোথাও ইটের অস্তিত্ব নেই, হাঁটতে গেলেই হোঁচট। সন্ধ্যায় আলোকসজ্জার ঘাটতির কারণে বইমেলার অনেক এলাকাই ডুবে থাকে অন্ধকারে। এখনো কিছু কিছু স্টলে চলছে নির্মাণকাজ। নেই বসার ব্যবস্থাও। পর্যাপ্ত টয়লেট যেমন নেই, নেই খাবার পানির সুবিধাও। কিছু স্টলে দেয়া হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। অনেক স্টলের সামনে নেই কার্পেট। বয়োবৃদ্ধদের জন্য হুইলচেয়ারের সংখ্যাও অপর্যাপ্ত।

মেলা শুরুর চার দিনের মাথায় এত ‘নেই’ নিয়ে ক্ষোভ-বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রকাশক-পাঠকরা। তাদের ভাষ্য, স্টল বরাদ্দের সময় অনেক সুবিধা দেয়ার কথা বলা হলেও কোনোটিরই দেখা মিলছে না। দেশের প্রধান এই গ্রন্থমেলার অব্যবস্থাপনা নিয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি মেলা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে; বলেছে, দ্রুত এসবের সমাধান না হলে প্রকাশকরা ‘চুপ’ করে বসে থাকবেন না।

‘গত শুক্রবার রাতে গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছি; চিঠি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া না হলে এরপর অভিযোগ আকারে তা উপস্থাপন করব। যেভাবে চলছে এভাবে তো মেলা চলতে পারে না,’ বলেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নেতা মাজহারুল ইসলাম। র‌্যামন পাবলিশার্সের কর্ণধার মশিউল হক বিদ্যুৎ বলেন, ‘পানি, বিদ্যুৎ’-এ রকম যে সুবিধাগুলোর কথা বলেছিল তারা (বাংলা একাডেমি), তার কোনোটিই এখনো পাইনি। মেলা ঘুরে দেখুন, বিক্রয়কর্মীরা মাস্ক পরে আছেন। ধুলোময় এই বইমেলা। পর্যাপ্ত টয়লেট নেই, খাবার পানি নেই।’ মেলার নান্দনিকতা বাড়াতে ফোয়ারা চালু ও ফুলের বাগান করার কথা থাকলেও তা করেনি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান নিরাপদ।

মেলার নীতিমালা অনুযায়ী উদ্বোধনীর আগেই স্টল নির্মাণ করার কথা থাকলেও তৃতীয় দিনেও বেশ ক’টি প্রকাশনীর স্টল ছিল অসম্পূর্ণ। বিক্রয়কর্মীদের আইডি কার্ড পরার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেশিরভাগ কর্মীর কাছেই তা পাওয়া যায়নি। এসব নিয়ে গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটিরও কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। মেলায় আগত পাঠক-প্রকাশকদের অন্যতম অভিযোগ, টিএসসি থেকে বইমেলায় ঢোকার প্রবেশ তোরণ ঘিরে। এটি যে বইমেলার প্রবেশ তোরণ, তা কোনোভাবেই বোঝা যাচ্ছে না- ভাষ্য তাদের।

‘এটি তোরণ? দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো বিয়েবাড়ির গেট ভেঙে পড়ে আছে,’ বলেন ধানমন্ডি থেকে আসা সাব্বির রহমান। বাংলা একাডেমির ‘নান্দনিকতা জ্ঞান’ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। ‘এটিকে নান্দনিক বলে কীভাবে? বাংলা একাডেমির কী হয়েছে?’ সাব্বিরের কথার সুর প্রকাশক মাজহারুল ইসলামেরও কণ্ঠেও। ‘মেলার প্রবেশ তোরণে নান্দনিকতার লেশমাত্র নেই। কী লজ্জা!’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের ছাত্রী অপর্ণারও অভিযোগ ব্যবস্থাপনা ঘিরে।

‘মেলায় অনেক বয়োবৃদ্ধ আসছেন। পুরো চত্বর ঘুরে দেখার পাশাপাশি তারা একটু বিশ্রাম নেবেন, তার জো নেই। শুধু কথা আর বুলিতেই সার, আয়োজকরা আদৌ এসব করবে কি না কে জানে!’ দর্শকদের সুবিধার জন্য মেলায় দুটি বড় ডিজিটাল স্ক্রিনে তথ্য প্রচারের কথা বলা হলেও তার চিহ্ন মেলেনি। অন্যদিকে ‘অ্যানালগ’ তথ্যকেন্দ্রে দায়িত্বরতরাও ‘ঠিকঠাক’ তথ্য দিতে পারছেন না বলে জানালেন নন্দিতা তাবাসসুম নামে একজন।

পর্যটনের স্টলে খাবারের দাম ও মান নিয়েও ক্ষোভ তার। ‘নিুমানের খাবার বেশি দামে বিক্রি করছে তারা। তারা মেলায় চান্স পায় কী করে?’ প্রকাশকদের অনেকে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন নিয়েও খোদ জানিয়েছেন।

এবার মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে এক অস্থায়ী মঞ্চে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হচ্ছে। এ মঞ্চটিকে ‘ছোট’ ও ‘দৃষ্টিকটু’ বলছেন মাজহারুল ইসলাম। তার অভিযোগের তীর ধেয়ে গেছে মেলার নান্দনিকতার দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানের দিকেও। ‘বইমেলা আয়োজনের কোনো অভিজ্ঞতা নেই যাদের, তারা কীভাবে নান্দনিক করবে মেলা। তারা পুরোপুরি ব্যর্থ।’

‘আন্তর্জাতিক মানের আয়োজন করা বেশকটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম রয়েছে আমাদের। তাদের হাতে দিলে মেলাটি আরো সুন্দর হতো। নান্দনিকতার সঙ্গে কিন্তু মেলার সৃজনশীলতার দিকটিও ফুটে ওঠে। আশা করছি, একাডেমি কর্তৃপক্ষ এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান করবে,’ বলেন প্রকাশক সমিতির এই নেতা।

পাঠক-প্রকাশকদের অভিযোগ যে ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে, সেই নিরাপদের কর্ণধার চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
এসব অভিযোগের মুখে আশার কথা শোনালেন গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ। তিনি বললেন, ‘সবে তো মেলা শুরু। আমরা সবদিক নিয়েই সতর্ক আছি। মেলাকে নান্দনিক করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা রয়েছে আমাদের। সমস্যাগুলোর কথা শুনেছি, দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করব।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই


 

Wordbridge School
Link copied!