• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বন সেন্টারের মতো সেকেন্ডেই ভাঙবে বিজিএমইএ! (ভিডিও)


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২২, ২০১৭, ০৮:৫৪ পিএম
বন সেন্টারের মতো সেকেন্ডেই ভাঙবে বিজিএমইএ! (ভিডিও)

ঢাকা: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুরোনো বা অনুপোযোগী সুউচ্চ ভবনগুলো ভাঙতে ‘নিয়ন্ত্রিত ধ্বংস’ (কনট্রোলড ডিমোলিশড) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এতে ভবনের শক্তিশালী কয়েকটি স্থানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা লাগানো হয়। এরপর সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটালে ভবনের মূল অবকাঠামো ধসে পড়ে। 

বাংলাদেশে ‘নিয়ন্ত্রিত ধ্বংস’ পদ্ধতিতে আগে কখনও ভবন ভাঙার কাজ করা হয়নি। তবে আদালতের নির্দেশনার পর সম্প্রতি বহু আলোচিত বিজিএমইএর ১৫ তলা ভবন এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর এক্ষেত্রে অনুসরণ করা হচ্ছে জার্মানীর বন সেন্টার ভাঙার প্রক্রিয়াকে।

গেল ২০ মার্চ জার্মানীর বন শহরের ১৮ তলার সুউচ্চ ল্যান্ডমার্ক ভবন ভেঙে ফেলা হয় কয়েক সেকেন্ডে। কন্ট্রোলড ডিমোলিশড পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙার আগে পুরো এলাকায় নেয়া হয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ব্যবহার করা হয় আড়াইশ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক দ্রব্য। পুরো প্রক্রিয়াটা ভিডিওতে ধারন করা হয়।

কন্ট্রোলড ডিমোলিশড কী
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর শত শত অকার্যকর ও পুরোনো ভবন ভেঙে ফেলা হয় কন্ট্রোলড ডিমোলিশড পদ্ধতিতেই। এ পদ্ধতিতে ভবনের শক্তিশালি কয়েকটি স্থানে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বোমা লাগানো হয়। বিস্ফোরণের পরে মূল অবকাঠামো ভেঙে যায়। এতে ভারসাম্য হারিয়ে মুহূর্তের মধ্যে ধসে পড়ে ভবনটি। ইট-পাথর-সিমেন্টের মিশ্রণগুলো টুকরো টুকরো হয় যায়। প্রচুর ধুলা তৈরি হয় বাতাসে। বিকট শব্দ হয়। মাটি কেঁপে উঠে।

অনেক সময় আবাসিক এলাকার পুরনো ভবনও এই পদ্ধতিতে ভাঙা হয়। কিন্তু এজন্য কয়েকদিন আগে থেকেই প্রচার চালাতে হয়। অনেক ভবন কাপড় দিয়ে মুড়ে দিতে হয়, যাতে বাসায় ধুলা না ঢোকে। এর পরিবেশগত প্রভাব কতটা বিরূপ হতে পারে, তা নিয়েও বিশেষজ্ঞ দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।

কীভাবে ভাঙা হলো বন সেন্টার
বন সেন্টারটি ছিল অর্ধশত বছরের পুরোনো একটি ভবন। গেল ২০ মার্চ সকালের দিকে ভবনের ২০০ মিটারের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয় সব যানবাহন। পুরো এলাকা ঘিরে রাখেন নিরাপত্তা কর্মীরা। এতে অংশ নেয় পুলিশ, ফায়ার ব্রিগেড, ইঞ্জিনিয়ার ও পরিচ্ছন্ন কর্মী মিলে দেড়শ জনের চৌকস দল। ভবনের শক্তিশালি কয়েকটি স্থানে বোমা লাগানো হয়। নিচের অংশ ঢেকে দেয়া হয় কাপড় দিয়ে। এরপর বোমাগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো হলে মুহূর্তের মধ্যে ধসে পড়ে পুরো কাঠামো। বিকট শব্দ হয়। মাটি কেঁপে উঠে। ইট-পাথর-সিমেন্টের মিশ্রণগুলো টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। প্রচুর ধুলা তৈরি হয় বাতাসে। ধারন করা ভিডিওতে দেখা যায়, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিকট শব্দে ভেঙে পড়ে ধংসস্তূপে পরিণত হয় ভবনটি।

প্রসঙ্গত, বিধ্বস্ত বন সেন্টারটির স্থানেই আধুনিক সুবিধা দিয়ে গড়ে তোলা হবে নতুন বহুতল ভবন। নির্মাণের কাজ শুরু হবে ২০১৮ সালে। শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২০ সালে। ওই বছরই ব্যবহারের জন্য খুলে দেয়া হবে ভবনটি।

ভাঙা হবে বিজিএমইএ ভবন
ঢাকার হাতিরঝিলে অবস্থিত ১৫ তলা বিশিষ্ট ওই ভবন ভাঙার নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। বিজিএমইএ ভবন ভাঙার জন্য রাজউক কন্ট্রোলড ডিমোলিশড পদ্ধতি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশে এ পদ্ধতিতে কখনও ভবন ভাঙা হয়নি। এবারই প্রথম, তাই নেয়া হবে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহায়তা। সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে পরিচালিত হবে ভবন ভাঙার কাজটি।

এর আগে অবৈধভাবে গড়ে উঠা বিজয় স্মরণীর র‌্যাংগস ভবন ভাঙা হয়েছিল প্রচলিত হ্যামার, হাতুড়ি, সাবল ব্যবহার করে শ্রমিক দিয়ে। তখন কয়েক জন নিহত হওয়ায় এবার আধুনিক পদ্ধতি নিতে যাচ্ছে রাজউক। বিজিএমইএ ভবনের পাশে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও পাঁচ তারকা প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বহুতল সরকারি ভবন, কারওয়ান বাজার, নিউ ইস্কাটন এলাকা। ভাঙার পর চারদিক ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে যাবে। এর পরিবেশগত প্রভাব কতটা বিরূপ হতে পারে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।

আদালতের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় অনুযায়ী অবৈধ এ ভবনটি ভাঙার সকল খরচ বিজিএমইএকে বহন করতে হবে। ২০১১ সালে হাইকোর্টের রায়ে ওই ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। এই লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, জলাভূমিতে অবস্থিত ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স’ নামের ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে নির্দেশ দেয়া হলো। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হলো। পরবর্তীতে এই রায়টি পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেছিল বিজিএমইএ। সেখানে রায় পরিবর্তন হয়নি। শেষে ভবন ভাঙতে তিন বছর সময় চেয়েছিল সংগঠনটি। কিন্তু আদালত ৬ মাস সময় বেঁধে দিয়েছে।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!