• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
এবারও পিপিপিতে থাকছে দুই হাজার কোটি টাকা

বরাদ্দ আছে ব্যয় নেই


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৩, ২০১৭, ০২:২২ পিএম
বরাদ্দ আছে ব্যয় নেই

ঢাকা : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবে ২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকারের বিনিয়োগ ছিল ৩৭ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর সরকারি বিনিয়োগ ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। মোট দেশজ আয়ের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ থেকে সরকারি বিনিয়োগ ৭ দশমিক ২৬ শতাংশে উন্নীত হলেও অবকাঠামো উন্নয়নে তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ৫ বছরে অবকাঠামো খাতে ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশাল এ ঘাটতি অর্থায়নে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। টানা ৮ বছর সফলতা না এলেও এবারের বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে পিপিপি খাতে। পিপিপি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে জুড়ে দেয়া হয়েছে ১৩ প্রকল্প। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও পিপিপি খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বরাদ্দ কমানো হলেও সফলতা আসেনি। গেল ১ বছরে পিপিপি খাতে বরাদ্দের মাত্র ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে অর্থমন্ত্রী দেশে পিপিপির মাধ্যমে সমুদ্র ও বিমানবন্দর, সাধারণ ও বিশেষায়িত হাসপাতাল, সড়ক ও রেলপথ এবং বড় বড় সেতু নির্মাণ করা হবে বলে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন। প্রতি বছর ৩৯ হাজার কোটি টাকা হিসাবে ৫ বছরে ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা পিপিপি থেকেই পাওয়া যাবে বলেও আশা করেছিলেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, আগামী ৫ বছরে দরকার অতিরিক্ত ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। পিপিপি উদ্যোগে এ বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণ করা হবে। তাই ২০০৯-১০ অর্থবছরে পিপিপি খাতে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। আর ২০০৯-১০ অর্থবছরের পর থেকে টানা পাঁচ অর্থবছরই এ খাতে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা  হয়। কিন্তু পিপিপির পুরো অর্থ খরচ হয়নি কখনও। কারণ দীর্ঘমেয়াদি বলে বেসরকারি খাত এমুখী হয়নি। হিসাব-নিকাশ করে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বরাদ্দ কমিয়ে ২ হাজার কোটি টাকা করা হয়। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বরাদ্দ কমানো হলেও সফলতা আসেনি। গেল ১ বছরে পিপিপি খাতে বরাদ্দের মাত্র ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তারপরও আগামী অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে গেল দুই অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় ২ হাজার কোটি টাকাই বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। মোট আটটি প্রকল্পের জন্য এ অর্থ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুফল এরই মধ্যে আসতে শুরু করেছে। কয়েক বছরের ব্যবধানে মোট দেশজ আয়ের (জিডিপি) আকার দ্বিগুণে পরিণত হয়েছে। এর ফলে অবকাঠামোয় সরকারের অর্থায়নের সামর্থ্য বাড়ছে। তবে পিপিপি ব্যবস্থা জোরদার হলে আরও বড় আকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এডিপির আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাস্তবায়ন দক্ষতা বাড়ছে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের বড় মাধ্যম হতে পারে পিপিপি। তবে আইনি সীমাবদ্ধতা ও প্রস্তুতির অভাবের কারণে পিপিপি কার্যক্রমে সফলতায় বেশি সময় লাগছে বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ব্রিটেনে পিপিপি আইন পাস হওয়ার ১৫ বছরের মাথায় এ খাতে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশেও আগামীতে পিপিপি ভিত্তিতে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছর থেকে পিপিপি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প বিবেচনা করছে সরকার। এরই মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) অনুমোদন পাওয়া আগামী অর্থবছরের এডিপিতে এ খাতের ১৩ প্রকল্প জুড়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের কুমিরায় একটি এলপিজি প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। জয়দেবপুর থেকে ভুলতা হয়ে সদনপুর পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার রাস্তা পিপিপি ভিত্তিতে চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ২১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ঢাকা চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণসহ পরিবহন খাতের সাত প্রকল্প ও পাঁচটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে পিপিপি ভিত্তিতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে পিপিপি সফল করতে আবারও নতুন উদ্যোগের বিস্তারিত বর্ণনা দেবেন অর্থমন্ত্রী। তিনি আশা করছেন, নতুন উদ্যোগে পিপিপি বিমুখ বেসরকারি খাত নতুন করে আগ্রহী হবে। বাজেট বক্তৃতায় এ ব্যাপারে কিছু আশার বাণীও শোনাতে পারেন মন্ত্রী। এ খাত নিয়ে অর্থমন্ত্রীর ‘খেদ’ থাকলেও চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায়ই শুধু তিনি ‘পদ্ধতিগত’ ভুলের কথা স্বীকার করেন। আগের কয়েক বছরেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা শুনিয়েছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুরু থেকেই বাংলাদেশে পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে পিপিপি উন্নয়নে ৩৫ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির অবকাঠামো উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক।

প্রকল্পের প্রস্তাবে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর বিবেচনায় বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়নে মারাÍক হারে পিছিয়ে রয়েছে। ১৪৪ দেশের মধ্যে অবকাঠামো সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০তম। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের অবকাঠামো ঘাটতি প্রবল। অবকাঠামো খাতে উন্নতি না হলে বর্তমানের অর্থনৈতিক উন্নতিও টেকসই হবে না। এ অবস্থায় অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ জিডিপির আরও ৩ শতাংশ বাড়াতে হবে।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, সরকারের একার পক্ষে এত বেশি অর্থ বিনিয়োগ সম্ভব নয়। এ অবস্থায় প্রত্যাশিত উন্নতি নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাতের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পিপিপি ব্যবস্থাকে জোরদার করা হবে। সংস্থার ২ কোটি ডলার কারিগরি সহায়তা ব্যয় করে পিপিপি অফিসের সক্ষমতা বাড়ানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়, বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও ব্যয় হবে এ অর্থ। অবশিষ্ট ৩৩ কোটি ডলার বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!