• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বসতি এলাকায় ইটভাটা: হুমকিতে জনস্বাস্থ্য


ভোলা প্রতিনিধি জানুয়ারি ২০, ২০১৭, ০৬:৫৮ পিএম
বসতি এলাকায় ইটভাটা: হুমকিতে জনস্বাস্থ্য

ভোলা: ভোলার চরফ্যাশনে পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং অনুমোদন ছাড়াই ইটভাটাগুলোতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কৃষি জমি এবং বসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে এসব ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই ভাটাগুলোতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। বছরের পর বছর এসব অনুমোদনহীন ভাটায় কৃষি জমির উর্বর মাটি ও বন ধ্বংস করে ইট উৎপাদন করছে। এসব ইটভাটায় একদিকে যেমন উজার হচ্ছে বন, অন্যদিকে হুমকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্য।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ ভাটার পাশে বসতবাড়ি, গাছপালা ও বিদ্যালয়। আশপাশেই বিস্তীর্ণ এলাকায় ধান ক্ষেত। বর্তমানে ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। ফলে ধোঁয়ায় কালো হয়ে উঠছে চারদিক। যদিও ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী কৃষিজমি, আবাসিক এলাকা, সরকারি বা ব্যক্তিগত বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমিতে ইটভাটা করা যাবে না।

স্থানীয় প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, চরফ্যাশন উপজেলায় ২৬টি ইটভাটা। এরমধ্যে মাত্র ৩টির লাইসেন্স থাকলেও ১টি নবায়ন হচ্ছে না গত দুই বছর ধরে। বাকিগুলোর মধ্যে জনতা ব্রিকস, উপকূল, এ আলী, রূপালী, ফ্যাশন, মাদ্রাজ, টাটা, রাত্রি, আকন, জাহান, দোয়েল, জিদান, গ্রামীণ, মেঘনা, পদ্মা, যমুনা, মা, আপন, নাভানা, শাপলা, মহাজন, শানিনা এবং ইউনাইটেড ব্রিকসের লাইসেন্স নেই। অন্যদিকে পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং হালনাগাদ লাইসেন্স ছাড়াই ইটভাটাগুলোতে কাঠ দিয়ে চলছে ইট পোড়ানোর ধুম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইটভাটা মালিক জানান, বৈধভাবে সরকারের নীতিমালা মেনে ইটভাটার ব্যবসা করছেন, তাঁরা অবৈধ ইটভাটার জন্য ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অবৈধ ব্যবসায়ীরা যত্রতত্র ভাটা বসিয়ে, কাঠ পুড়িয়ে কম খরচে ইট উৎপাদন করছেন।

অভিযোগ আছে, উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী খ্যাত ম্যানগ্রোভ বাগান থেকে কাঠ পাচার করে এসব ইটভাটার জ্বালানী  কাঠের যোগান দেয়া হচ্ছে। উপজেলার মাদ্রাজ, জাহানপুর, নজরুল নগর ইউনিয়নের কৃষক, মাটি ব্যবসায়ী ও ইটভাটা শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেখতে দেখতে চারপাশ ইটভাটায় ভরে গেছে। ভাটার চিমনির ধোঁয়া, বালু, কয়লার গুঁড়া ও ছাই উড়ে আশপাশের ফসল, বাগান ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এমনকি এসব এলাকায় বসবাসকারী মানুষের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অথচ এ বিষয়ে আইনও আছে। কিন্তু কোনো প্রয়োগ দেখছেন না তাঁরা।

চরফ্যাশন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা  বলেন, কৃষিজমিতে ইটভাটা হওয়ার ফলে ব্যাপক কৃষিজমির ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। সরকারের দ্রুত ইটভাটার জমি নির্ধারণ করা জরুরি। পরিবেশ কর্মী সজিব শাহারিয়ার বলেন, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের আরও আন্তরিক হওয়া জরুরি। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও কঠোর হওয়া দরকার।

পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, আইনের বাইরে ইটভাটা করার কোনো ছাড়পত্র দেয়া হয় না। আইনের আরও সংস্কার হয়েছে। নতুন করে আবেদনকারীকে ইট পোড়ানোর ছাড়পত্র দেয়া হবে না। কারণ, অনেক ইটভাটা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ও বিদ্যালয়ের পাশে।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো সেলিম উদ্দিন বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ইটভাটাগুলোকে নতুন লাইসেন্স ও লাইসেন্স নবায়নের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। এক মাস ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলছে। এ সময়ে ১০টি অভিযানে কয়েক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!