• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে উৎপাদিত তেলাপিয়া মাছ শতভাগ নিরাপদ!


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২৪, ২০১৬, ০৭:৪৩ পিএম
বাংলাদেশে উৎপাদিত তেলাপিয়া মাছ শতভাগ নিরাপদ!

বাংলাদেশে উৎপাদিত তেলাপিয়া মাছ স্বাস্থ্যের জন্য শতভাগ নিরাপদ। এই মাছে কোনো বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য নেই। বাংলাদেশে উৎপাদিত তেলাপিয়া মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য শতভাগ নিরাপদ এবং পুষ্টিমান সমৃদ্ধ। সুতরাং দেশের মানুষ বিনা ভয়ে তেলাপিয়া মাছ খেতে পারবেন।

বুধবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘তেলাপিয়া মাছের উৎপাদন ও জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক এক সেমিনারে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিউটটের (বিফআরআই) এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ সচিব মো. মাকসুদুল হাসান খান প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা জানান।

বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন। দেশের তেলাপিয়া মাছের গুণগত মানসর্ম্পকে জনসচেনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিফআরআই এই সেমিনারের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল ওহাব প্রমুখ।

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তৃতা করেন, ফ্রোজেন ফুড অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা, বাংলাদেশ তেলাপিয়া ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ গোলাম হোসেন, যশোরের মৎস্য চাষী আজিজুর রহমানসহ বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণকর্মী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মৎস্য খাতের উদ্যোক্তা ও উপস্থিত চাষীরা।

মৎস্য গবেষণা ইউনিস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএইচ এম কহিনুর মূল প্রবন্ধে বলেন, ‘বিএফআরআই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তেলাপিয়া মাসের ৫০টি নমুনা সংগ্রহ করে। গবেষণায় তেলাপিয়ায় একটি নমুনাতেও বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।’

ড. কহিনুর গবেষণার তথ্য উপস্থাপন কালে বলেন, ‘সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তেলাপিয়া মাছের মান সম্পর্কে নেতিবাচক খবর প্রচার করা হয়েছে। এর ফলে দেশের চাষীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে দাবি মাঠ পর্যারের চাষীদের। 
আমেরিকার একাধিক ব্লগ ফেসবুকসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়, বাংলাদেশের চাষকৃত তেলাপিয়ায় বিষাক্ত উচ্চমাত্রায় ডায়োক্সিন, ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড এবং বিষাক্ত এন্টিবায়োটিক রয়েছে বলে দাবি করা হয়। যা ক্যান্সারসহ নানা রোগের কারণ হতে পারে।’ এটা সম্পূর্ণ অপ্রচার বলে মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস সচিব বলেন, আমাদের দেশে উৎপাদিত তেলাপিয়া মাছ সুস্বাদু, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর। এতে কোনো বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নেই। সুতরাং এটা খেতে কোনো অসুবিধা নেই।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে তেলাপিয়া চাষে খৈল ও কুড়াজাতীয় স্বল্পমূল্যেও খাবার ব্যবহার করা হয়। এসব খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় না। ফলে এসব খাবার ব্যবহার করে ফুড চেইনের (খাদ্য শিকল) মাধ্যমে কোনো বিষাক্ত রাষায়নিক পদার্থ তেলাপিয়ার দেহে অনুপ্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া চাষাবাদের ক্ষেত্রে দেশের এখন গুড অ্যাকুয়াকালচার প্র্যাকটিস (জিএপি) অনুসরণ করা হচ্ছে বলেও জানান সচিব। তিনি এই জন্য সংবাদ মাধ্যমকে সঠিক তথ্য তুলে ধরে তেলাপিয়া সর্ম্পকে ভোক্তাদের আতঙ্ক দূর করার আহবান জানান।

তেলাপিয়া ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্য করে মৎস্য অধিদপ্তরের মাহপরিচালক বলেন, দেশের তেলাপিয়া চাষকে নিরুৎসাহিত করতে, একটি মহল ব্লগে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করছে। তিনি সাধারণ মানুষের কাছে তেলাপিয়া সর্ম্পকে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্লগ তৈরি করে অপ্রচারের জবাব দেয়ার আহ্বান জানান।

মহাপরিচালক বলেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য, অধিদপ্তর থেকে সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশননে স্ক্রল, বিটিআসির মাধ্যমে মোবাইলে এসএমএস প্রদান এবং দেশব্যাপি ৬৪ জেলায় ভোক্তা ও অংশিজনদের নিয়ে মিডিয়া ডায়লগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বলেন, নেতিবাচক প্রচারণার বিষয়টি কাটিয়ে উঠতে মৎস্য অধিদপ্তর একটি সেল করতে পারে। যেখান থেকে তেলাপিয়া বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা নিয়মিত মনিটরিং করা যেতে পারে।

অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমেরিকাসহ চীনের তেলাপিয়ায় ক্যান্সারসৃষ্টিকারী দ্রব্য পাওয়া গেলেও বাংলাদেশের তেলাপিয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং ভয়েরর কোনো কারণই নেই বলে তারা আশ্বস্ত করেন।

সেমিনারে বলা হয়, বিশ্বে চাষযোগ্য মাছের মধ্যে তেলাপিয়ার অবস্থান দ্বিতীয় অর্থাৎ কার্পজাতীয় মাছের পরেই এর স্থান। আর বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বে তেলাপিয়ামাছ-উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে সপ্তম। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিশ্বে তেলাপিয়ার উৎপাদন ছিল ৪.৬৭ মিলিয়ন টন, যা বাংলাদেশের মোট উৎপাদনের ৯.৪৪%।

সেমিনারে জানানো হয়, ২০০৫ সালে বাংলাদেশ এমাছের উৎপাদন ছিল মোট ২০ হাজার মে. টন এবং ২০১৫ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৩.৪৮ লক্ষ মে. টন, যা আমাদের মোট মৎস্য-উৎপাদনের ১০.০%। তেলাপিয়ার ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে দেশে গড়ে উঠেছে ৫০০টি তেলাপিয়ামাছের হ্যাচারী এবং এসব হ্যাচারী থেকে বছরে প্রায় ৬০০ কোটি পোনা উৎপাদিত হচ্ছে।

মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট ১৯৮৬ সালে প্রথম তেলাপিয়া নিয়ে গবেষণা শুরু করে এবং ২০০৫ সালে মালয়েশিয়া থেকে গিফট নামক তেলাপিয়ামাছ আমদানী করে এর উন্নয়ন ঘটায় এবং সারাদেশের মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়। ফলে আস্তে আস্তে দেশে এই তেলাপিয়া জনপ্রিয়তা পায়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!