• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করার কার্যকর উদ্যোগ নেই

বাংলাদেশের শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসছে


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ২৬, ২০১৮, ০২:১০ পিএম
বাংলাদেশের শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসছে

ঢাকা : বিদেশে বাংলাদেশি প্রতি চারজনের তিনজন কাজ করছেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও মালয়েশিয়ায়। প্রবাসী আয়ের সিংহভাগও আসে এই কয়েক দেশ থেকে। বর্তমানে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজারে নানা সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার মালয়েশিয়া সরকার বিদ্যমান চুক্তি মোতাবেক জনশক্তি রফতানিতে অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশি শ্রমিক স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

চলতি মাসেই সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরেছেন শতাধিক নারীশ্রমিক। ২০১৬ সালের পর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত শ্রমিক নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে বৈদেশিক শ্রমবাজারে বড় ধাক্কা খাবে বাংলাদেশ। নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করার নানা উদ্যোগের কথা সরকার বললেও কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই।

তবে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, নতুন ৫২ দেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ গত মে মাস পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য বলছে, বাংলাদেশি নাগরিকদের সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ ১১ হাজার ৯৭০ জন। তারা এ পর্যন্ত দেশে পাঠিয়েছেন ১২ লাখ ৯১ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। এ অঙ্ক দেশের মোট জাতীয় বাজেটের প্রায় তিন গুণ।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যুরোর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মোট জনশক্তির ২৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করছেন সৌদি আরবে। দেশটিতে ৩৫ লাখ ২৪ হাজার ১৭১ বাংলাদেশি বৈধভাবে কাজ করছেন। অর্থাৎ মোট প্রবাসী নাগরিকের এক-তৃতীয়াংশ কর্মরত এ দেশটিতে। সম্প্রতি দেশটিতে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি নারীরা ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সৌদি আরব থেকে ২০১৮ সালের মে মাসে ২৩৬ কোটি মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে মোট ১ লাখ ৩০ হাজার ৯০০ বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরব গেছেন। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৬১ হাজার ৩০৮ জন।

এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলছেন, একটি মুসলিম দেশে নারী নির্যাতনের এসব ঘটনা অপ্রত্যাশিত। ‘আমরা যখন তথ্য পাচ্ছি’ সেভাবেই আমাদের নারীশ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছি।  

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে সরকারি পর্যায়ে মাত্র ৩৭ হাজার টাকায় মালয়েশিয়ায় ১০ লাখ কর্মী নেওয়ার লক্ষ্যে দুই দেশ সম্মত হয়। এ উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর নতুন করে ১৫ লাখ কর্মী নিতে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবার সমঝোতা সই করা হয়। মে মাসে দেশটি থেকে প্রবাসী আয় দেশে এসেছে ১০০ কোটি ডলার। বর্তমানে দেশটিতে ৯ লাখ ৬০ হাজার ১২৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন বিভিন্ন খাতে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশির সংখ্যা ৭৯ হাজার ৫৪৩ জন।  

সংযুক্ত আরব আমিরাতে মোট প্রবাসী নাগরিকের ২০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কাজ করছে। বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছে এখানে ২৩ লাখ ৬৬ হাজার ২৮৫ জন। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে গত মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২১৬ কোটি ডলার। গত পাঁচ মাসে দেশটিতে মোট শ্রমিক গেছেন ১ হাজার ২৯৩ জন। সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেছে।  

ওমানে ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ১৭৯ বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন, যা মোট প্রবাসী বাংলাদেশির ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত পাঁচ মাসে দেশটিতে কাজ নিয়ে ৩৩ হাজার ৪০৫ জন শ্রমিক গেছেন। মে মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৮৬ কোটি ডলার। কাতারে বর্তমানে ৭ লাখ ১৭ হাজার ৪৭ বাংলাদেশি নাগরিক কাজ করছেন। মে মাসে তারা দেশে পাঠিয়েছেন ৭৫ কোটি ডলার।  

জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার বলেন, ইউরোপসহ ৫২টি দেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণে সরকারের গবেষণাসহ উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। আমরা মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশের কাছে শ্রমবাজার আটকে রাখতে চাই না। মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ও বিশাল শ্রমবাজার। বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমশক্তি রফতানিতে বাংলাদেশকে বেশ কিছুটা সমস্যার মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বের অন্যান্য দেশে নতুন নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি আলাদা শ্রমবাজার সেল কাজ করছে।   

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!