• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে না করদাতার সংখ্যা


অর্থনৈতিক প্রতিবেদক জানুয়ারি ৩১, ২০১৭, ১০:৩৪ এএম
বাড়ছে না করদাতার সংখ্যা

ঢাকা : টিআইএনধারীর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, সে তুলনায় আয়করদাতার সংখ্যা বাড়ছে না। এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা প্রায় ছয় কোটি। তাদের মধ্যে প্রায় তিন কোটিরও বেশি মানুষ কর দেয়ার ক্ষমতা রাখেন, কিন্তু তারা কর দিচ্ছেন না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী করের আওতায় এসেছেন ২৬ লাখ ১৯ হাজার ২৯ জন। অথচ কর দিয়েছেন এর অর্ধেকেরও কম। অর্থাৎ টিআইএন নেয়া ব্যক্তিদের ৫০ ভাগই কর দিচ্ছেন না।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ১ জুলাই ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন শুরুর পর থেকে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ ডিজিটের টিআইএনধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ১৯ হাজার ২৯ জনে। তাদের মধ্যে কর দিয়েছেন মাত্র সাড়ে ১১ লাখ (২০১৬-১৭ করবর্ষের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত)। তবে চলতি অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে আয়কর বাড়াতে বেশ জোর দিয়েছে এনবিআর। জেলা-উপজেলায় মেলার পাশাপাশি অনলাইনেও রিটার্ন জমা চালু করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে মোট আয়কর আদায়ের ৭০ শতাংশ আসে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান থেকে। বাকি ৩০ শতাংশ ব্যক্তি-শ্রেণির কর, যদিও সংখ্যার দিক থেকে ব্যক্তি-শ্রেণি করদাতার সংখ্যাই বেশি। এদিকে গত অর্থবছরে আয়করের মাধ্যমে এনবিআর আয় করেছে ৫৪ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। এই ৫৪ হাজার কোটি টাকার ৭০ ভাগই দিয়েছে কোম্পানি, যা করপোরেট কর হিসেবে বিবেচ্য। বাকিটা এসেছে ব্যক্তি খাত থেকে। এদিকে প্রতি বছর জাতীয় বাজেটে করের আওতা বাড়ানোর কথা বলা হলেও নির্দিষ্ট কয়েকটি খাত থেকেই কর আদায় হচ্ছে বেশি। করপোরেট কর হিসেবে কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর দেয় ব্যাংক খাত। মোট কর আদায়ের ৩০ ভাগই আসে এই খাত থেকে। তার পরই আছে বীমা, মার্চেন্ট ব্যাংক, লিজিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও টেলিযোগাযোগ খাত এবং মোবাইল কোম্পানি, টোব্যাকো ও ফার্মাসিউটিক্যালস খাত। 

আয়কর আইন অনুযায়ী বর্তমানে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ, বাড়ি ভাড়া ও যাতায়াত ভাতা বাদ দিয়ে বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকার বেশি হলে তাকে প্রযোজ্য হারে কর দিতে হবে। সম্প্রতি এনবিআরের নিজস্ব গবেষণাতেও দেখা গেছে, টিআইএনধারীর সংখ্যা বাড়লেও করের আওতা বাড়ানো যায়নি। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য রেজাউল হাসান বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠী বা জাতীয় আয়ের তুলনায় করদাতার সংখ্যা অত্যন্ত কম।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ইটিআইএন বৃদ্ধি হচ্ছে মানেই করদাতা বাড়ছে, এমনটি নয়। তাদের একটা অংশ কর দেয়ার জন্য ইটিআইএন খোলেননি, খুলেছেন মূলত তাদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেয়ার জন্য। যেহেতু ২৬ লাখ টিআইএনধারীর একটা বড় অংশ পটেনশিয়াল করদাতা নন, যারা কিনা সর্বনিু তিন হাজার টাকা বা পাঁচ হাজার টাকা কর দেন। এ কারণে করের পরিমাণ বাড়ছে না। সাবেক এ চেয়ারম্যান আরো বলেন, যারা কর দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন তারা যাতে আনন্দের সঙ্গে কর দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা এনবিআরকেই করতে হবে। এ জন্য আগে এনবিআরের কর্মকর্তাদের সৎ হতে হবে। যখন মানুষ জানবে কর দিতে গেলে হয়রানি হতে হয় না, তখনই মানুষ আনন্দের সঙ্গে কর দিতে চাইবে।

এদিকে এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ই-টিআইএন শুরুর সময় ১০ ডিজিটের টিআইএনধারী ছিলেন ৩২ লাখের কাছাকাছি। তবে তাদের মধ্যে রিটার্ন জমা দেয়ার সংখ্যা ছিল অতি নগণ্য। ২০১১ সাল নাগাদ টিআইএনধারী ছিলেন ২৮ লাখের কাছাকাছি। এর মধ্যে মাত্র ৩৯ শতাংশ রিটার্ন জমা দিতেন, বাকি ৬১ শতাংশ টিআইএন ছিল ভুয়া।

এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ করবর্ষে সাড়ে ১১ লাখ করদাতা রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এই সংখ্যা গতবারের চেয়ে ৪০ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ব্যক্তি-শ্রেণির করদাতাদের কাছ থেকে মোট আদায় হয়েছে তিন হাজার ৩৩৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। এছাড়া আরো এক লাখ ৫১ হাজার ৮৮৯ করদাতা রিটার্ন দাখিলের জন্য সময় বাড়াতে আবেদন করেছেন। এ হিসাবে গত করবর্ষের মতো এই করবর্ষেও ১৩ লাখ করদাতা কর দিচ্ছেন। এবার সারা দেশের বিভিন্ন কর সার্কেলে ছয় লাখ ৩৭ হাজার ৯০২ করদাতা তাদের আয়কর বিবরণী দাখিল করেছেন। এছাড়া, ১ থেকে ৭ নভেম্বর আয়কর মেলায় এক লাখ ৯৪ হাজার ৫৯৮ করদাতা রিটার্ন দাখিল করেন। আর আয়কর সপ্তাহে জমা দেন (নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ) তিন লাখ ১১ হাজার ৯৯৭ জন।

এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের রাজস্ব বাড়াতে হলে সামর্থ্যবান সবাইকে করের আওতায় এনে কর আদায় নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য অবশ্য উপযুক্ত পরিবেশও নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নিজ উদ্যোগেই তারা টিআইএনের আওতায় আসেন এবং আয়কর রিটার্ন জমা দেন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, মানুষ আগের চেয়ে বেশি পরিমাণ কর দিচ্ছে, কিন্তু সেবার মান আগের চেয়ে বাড়েনি। এক টাকার কর দিতে গিয়ে এখনো তিন টাকার হয়রানির শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, দেশে আয়করযোগ্য মানুষ ৮০ লাখেরও বেশি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিপুলসংখ্যক মানুষ আয়করের বাইরে থেকে যাওয়ার কারণে উন্নয়নের ক্ষেত্রে একদিকে অর্থসংকট তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালের আগে জেনারেল ইনডেক্স রেজিস্টার নম্বর বা জিআইআরের মাধ্যমে আয়কর দিতেন করদাতারা। তখন কর দিতেন হাতেগোনা কিছু মানুষ। ১৯৯২ সালে জিআইআর বাতিল করে ১০ ডিজিটের আয়কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়। পরে দেখা যায়, একই ব্যক্তি ২০ থেকে ২৫টি টিআইএন করেছেন। তাই ১০ ডিজিটের এই টিআইএন বাতিল করে ১২ ডিজিটের ই-টিআইএন বাধ্যতামূলক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই


 

Wordbridge School
Link copied!