• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
চাঁদা দাবির মামলা

বিধবাকে ঘরছাড়া করার মিশনে ভূমি কর্মকর্তা


ঝালকাঠি প্রতিনিধি এপ্রিল ৩০, ২০১৮, ০৬:২২ পিএম
বিধবাকে ঘরছাড়া করার মিশনে ভূমি কর্মকর্তা

ঝালকাঠি : জেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আতিকুর রহমানের যোগসাজসে এক অসহায় বিধবাকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সদর উপজেলার কান্ডারগাতী গ্রামের বিধবা বৃদ্ধা সেতারা এখন জীবনের শেষ সম্বল হারানোর শংকায় এক একটি দিন পাড় করছেন। সদর উপজেলার মৃত আজিজ হাওলাদারের পুত্র আতিকুর রহমান, মৃত হোসেন আলীর পুত্র মো. মোফাজ্জেল হোসেন মন্টু ও মৃত সেরাজ উদ্দীনের পুত্র মজিবুর রহমান গ্রুপ বৃদ্ধা সেতারা বেগম ও তার ভাতিজা সাখাওয়াত হোসেন খোকনকে এলাকা ছাড়তে হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন সেতারা বেগম। আতিকুর রহমান ছাত্র জীবন থেকেই বেপরোয়া জীবন যাপন করে আসছেন বলে জানিয়েছেন মো. শাখাওয়াত হোসেন খোকন। তিনি আরো বলেন, হিন্দুদের জমি দখল করে চাঁদা দাবির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আতিকুর রহমানের রয়েছে একটি চাঁদাবাজির গ্যাং।

কান্ডারগাতি গ্রামের মৃত নজর আলীর পুত্র ব্যবসায়ী মো. শাখাওয়াত হোসেন খোকন জানান, তিনি তার চাচা মৃত ইউসুফ আলী ও চাচী সেতারা বেগমের কাছ থেকে ৭ বছর পূর্বে ওই দাগের ১১ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। তার বৃদ্ধ চাচি গত ৩৫ বছর ধরে ওই জমিতে বসবাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি তিনি (শাখাওয়াত হোসেন খোকন) বৃদ্ধ চাচির থাকার জন্য পাকা ঘর তুলতে চাইলে একই গ্রামের প্রতিপক্ষ আতিকুর রহমান, মো. মোফাজ্জেল হোসেন মন্টু ও মজিবুর রহমান গ্রুপ বাধা দেয়। ওই জমিতে ঘর তুলতে হলে তাদের চাঁদা দিতে হবে বলে হুমকি দিতে থাকে। এ ঘটনায় শাখাওয়াত হোসেন খোকন ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা (এমপি ৫৭) করেছেন। বর্তমানে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিকেশন (পিবিআই) তদন্ত করছেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, সদর উপজেলার কান্ডারগাতি গ্রামের ইউসুফ আলী ও সোতারা বেগমের কান্ডারগাতি মৌজার ১০৮ নং দাগের খতিয়ানের জেএল ৪২-এর ১২নং খাতিয়ানের এসএ ২৬২ নং দাগ এবং বর্তমান বিএস ৫৭২ নং দাগের মোট ২৩ শতাংশ জমির মধ্যে কান্ডারগাতি গ্রামের মৃত নজর আলীর পুত্র ব্যবসায়ী মো. শাখাওয়াত হোসেন খোকন ৭ বছর পূর্বে ক্রয় করে। ক্রয়কৃত জমিতে টিনসেড ঘরে বসত করে আসছিল। পাকা দালান নির্মাণ করতে গেলে বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে। গত ৬ এপ্রিল গ্রামের বাড়িতে আসলে প্রতিপক্ষ আতিকুর রহমান, মো. মোফাজ্জেল হোসেন মন্টু ও মজিবুর রহমানসহ আর ৭/৮ জন আস্ত্রধারী সন্ত্রাসী শাখাওয়াত হোসেন খোকনের নির্মাণাধীন দালানের সামনে এসে খোকনকে ডেকে ঘর তুলতে হলে তাদের ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আসামিরা খোকনকে লোহার রড দিয়ে শরীরের বিভিন স্থানে আঘাত করতে থাকে। পরে বৃদ্ধা সেতারা বেগম ঘর থেকে বের হলে তাকেও মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এক পর্যায় বাড়ির লোকজন ও নির্মাণ শ্রমিকরা এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই জমিতে সেতারা বেগম ৩৫ বছর ধরে বসত করে আসছিল। প্রতিপক্ষরা যদি ওই জমির অংশিদার হলে এত বছর কেন আসেনি। তাদের ওই জমিতে মালিকানা থাকলেও ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ধারা ও ট্রাইব্যুনাল করতে পারত। কিন্তু তাদের এ জমির কোনো কাগজ না থাকায় আইনি লড়াই করতে আসেনি। মূলত এ নিচু জমিটি বালু ভরাট করে পাকা দালান তুলতে চাইলে ভূমিদস্যুদের নজর পরে। এরপর একের পর এক মামলা দিয়ে শাখাওয়াত হোসেন খোকনকে হয়রানি করতে থাকে। এই জমিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ২৩ এপ্রিল ১৪৪/১৪৫ ধারা জারি করলে ঝালকাঠি সদর থানার এসআই সরোয়ার হোসেন আমার দখল সত্ব আছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে। এর পরে অপর একজনকে বাদী করে আদালতের মাধ্যমে একই জমিতে ১৪৪/১৪৫ ধারা জারি করায়।

এ ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউর রহমান পনু বলেন, শাখাওয়াত হোসেন খোকনের দালানের কাজের সাইটে আমি বালু সরবরাহ করি। আসামিরা আমাকে ওই জমিতে বালু দিতে বাধা দিয়ে হুমকি-ধামকি দেয়।

এই কাজে ইট ও রড সরবারাহকারী নসির উদ্দীন পিন্টু বলেন, আমি মালামাল দিতে গেলে আমাকেও তারা হুমকি দিচ্ছে।
একই গ্রামের কৃষক হান্নান বলেন, এ জমিতে ৩০/৩৫ বছর ধরে তারা বসবাস করে আসছে। ইউসুফ মিয়া জমিতে বালু ভরাট করলেও তখনও তারা বাধা দেয়নি। ইউসুফ মিয়া ও সেতারা বেগম তার ভাতিজা খোকনকে ছেলের মতোই জানে।

বৃদ্ধ সেতারা বেগম বলেন, তারা ওই জমিতে ৩৫ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। আমার কোনো ছেলে না থাকায় ভাতিজার কাছে জমিটুকু বিক্রি করে দেই। ভাতিজা খোকনই আমার আশ্রয়। ও আমাকে ভালো রাখার জন্যই দালান করতে চাইছে। কিন্তু আতিকুর রহমান, মো. মোফাজ্জেল হোসেন মন্টু ও মজিবুর রহমানের লোলুপ দৃষ্টি পরে এই জমিতে। আমাদের তাড়িয়ে দিয়ে এই জমিটি দখলের পাঁয়তারা করতেছে। এ ব্যাপারে অসহায় বৃদ্ধা বিধবা সেতারা বেগম প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে পোনাবালিয়া ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আতিকুর রহমান ও মোফাজ্জেল হোসেন মন্টু বলেন, ওই জমিতে আমাদের অংশ রয়েছে। চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধ থাকায় তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করেছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!