• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিনাচাষে রসুন রোপণে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণীরা


পাবনা প্রতিনিধি নভেম্বর ২৭, ২০১৬, ০৭:০৮ পিএম
বিনাচাষে রসুন রোপণে ব্যস্ত কৃষাণ-কৃষাণীরা

পাবনা : জেলার চাটমোহর উপজেলাসহ চলনবিলের অধ্যুষিত উপজেলাগুলোতে বিনাচাষে রসুন রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। ফজরের নামাজের পরপরই কুয়াশাকে উপেক্ষা করে কৃষকরা মাঠে সারিবদ্ধভাবে রসুনের কোয়া রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। লাইন করে, দঁড়ি টেনে। নরম মাটি রোদে শক্ত হয়ে গেলে রসুন রোপণ করা যাবে না। তাই মজুরদের সাথে পরিবারের সবাই মিলে মাঠে নেমেছে কৃষক।

চলনবিলের দ্বিতীয় প্রধান অর্থকরী মসলা জাতীয় ফসল এখন এই রসুন। সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই বিনাচাষে রসুন চাষ। এই বিলের কৃষক ধান বেচে পাওনাদারদের ঋণ শোধ করতে না পারলে তাকে বলেন, সেই প্রচলিত গ্রামীণ প্রবাদ ‘আর কয়’টা দিন সবুর কর, রসুন বুনেছি’।

চলনবিলের মাঠ থেকে পানি নেমে যাচ্ছে নদীতে। জেগে উঠেছে পলি ধোয়া উর্বর ফসলী জমি। জমির আমন ধান কাটার পাশাপাশি চলছে খড় পরিষ্কারের কাজ। জমি চাষের প্রয়োজন নেই। জমি পরিষ্কার বা হালের দরকার নেই। কাঁদা মাটিতে পুঁতে দেয়া হচ্ছে রসুনের কোয়া।

সাথে সাথেই ধানের নাড়া (খড় বিচালী) অথবা কচুরী পানা দিয়ে ঢেকে দেয়া হচ্ছে রসুনের ক্ষেত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখন চলছে রসুন বোনা। এক সাথে ধানকাটা মাড়াই আর রসুন বোনার কারণে দেখা দিয়েছে মজুর সংকট। নারী ৩০০, পুরুষ মজুর ৪০০ টাকাতেও মিলছে না।

গম বা বোরো আবাদের তুলনায় বিনাহালের রসুনের আবাদে বেশি লাভ হওয়ার কারণে এলাকার কৃষক রসুন চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। বিগত বছরগুলোতে কৃষকরা রসুনে ফলনও পেয়েছেন ভালো। তাই দ্রুতই সম্প্রসারিত হয়েছে তা এখন গোটা চলনবিল এলাকায়। এ অঞ্চলের কৃষকরা কয়েক বছর আগেও গতানুগতিকভাবেই ইরি-বোরো ধান, গম, সরিষা, কালাই, মসুর ও সবজির আবাদ করে আসছিলেন।

অতি বন্যা, খড়া, ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখীসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে রোগ-বালাইয়ের ঝুঁকি। সারসহ কৃষি উপকরণের দাম বাড়তি হলে কৃষকের ফসলের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। সেদিক থেকে বিনা চাষে রসুন আবাদ করে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এখন রসুনেই ঝুঁকে পড়েছেন বেশি। ফলে রসুন এখন চলনবিল এলাকার কৃষকদের কাছে হয়ে উঠেছে বোরো ধানের পরেই প্রধান অর্থকারী ফসল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে চলনবিলে রসুন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে। চাটমোহর উপজেলায় চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ১০০ হেক্টর। এর মধ্যে অর্জন হয়ে গেছে ১২০০ হেক্টর।
চাটমোহর উপজেলার কয়েকটি এলাকায় গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বিঘা জমিতে রসুনের ফলন হয় ২২ থেকে ২৮ মণ। যার বর্তমান বাজার মূল্যে মণপ্রতি বীজ ৬ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর খাবার রসুন বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা মণ। রসুন আবাদ করতে বিঘা প্রতি ৩ মণ হারে বীজ বাবদ ১৪ হাজার টাকা, সার কীটনাশক বাবদ ৬/৭ হাজার টাকা, শ্রমিক খরচ ৪ হাজার টাকা, জমির আগাছা পরিষ্কার বাবদ ৪ হাজার টাকা, সেচ বাবদ ৩ হাজার টাকাসহ প্রায় ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়।

যারা জমি লীজ নিয়ে আবাদ করেন তাদেরকে বিঘা প্রতি অতিরিক্ত ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা গুণতে হয়। ১ বিঘা জমির রসুন বিক্রি করা যাচ্ছে ১ লাখ টাকা। খরচ বাদে বিঘা প্রতি লাভ থাকছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু কোনো কোন বছর বাজার এত খারাপ থাকে যে তখন উৎপাদন খরচ ও উঠে না। চাটমোহরের কাটেঙ্গা গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান জানান, রসুনের বাজার অস্থির থাকে। কখনো লাভ ভালই হয়। আবার লোকসানও দিতে হয় অনেক সময়। উৎপাদন খরচটা অনেক বেশি বলে ঝুঁকিটাও বেশি বলে জানালেন কাটেঙ্গা গ্রামের রসুন চাষী ইমরান আলী।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রওশন আলম বলেন, আমন ধান কাটার পর জমি থেকে দ্রুত আগাছা পরিষ্কার করে জমিতে কাঁদা মাটি থাকতেই পরিমিত সার ছিটানোর পরের দিনই সারিবদ্ধভাবে রসুন বীজ রোপণ করে ওই দিনই খর অথবা বিচালী দিয়ে পুরো জমি ঢেকে দিতে হয়। বীজ রোপণের ১ মাস পর পানি সেচ দিয়ে বিঘাপ্রতি পরিমাণ মতো ইউরিয়া সার দিতে হয়।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (তথ্য) আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, এই পদ্ধতির রসুন চাষে রোগ বালাই নেই বললেই চলে। তবুও পাতায় ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিলে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে রসুন ঘরে উঠে যায়। কৃষকদের দাবি সরকারিভাবে রসুন চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানসহ উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ করা হলে আবাদ আরও বাড়বে। তারা রসুনের আবাদের জন্য প্রর্দশনী প্লট স্থাপনের দাবি করেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!