• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বৃদ্ধ মাকে কোনো সন্তান কি এভাবে মারতে পারে?


পঞ্চগড় প্রতিনিধি অক্টোবর ১৪, ২০১৭, ০৭:৩৮ পিএম
বৃদ্ধ মাকে কোনো সন্তান কি এভাবে মারতে পারে?

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছেলের হাতে পিটুনির শিকার বৃদ্ধ মা

পঞ্চগড়: জেলার বোদা উপজেলায় মাত্র তিন শতক জমির জন্য গর্ভধারিণী বৃদ্ধা মাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে ছেলে। আহত বৃদ্ধার মা হলেঅ- শরিফন নেছা (৬৫)।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুতার পাড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা।

এদিকে শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল হাসপাতালে ওই মাকে দেখতে যান। তখন তিনি আইগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। পরে বোদা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্বামী সত্তোর্ধ আব্দুর রাজ্জাক নিয়ে শরিফন নেছা ছোট ছেলে আইজুল হকের সঙ্গে একই বাড়িতে বসবাস করতেন। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার বিয়ে দিয়েছেন তারা। বড় ছেলে আশরাফুল বিয়ে করে অন্যত্র বাড়ি করেছেন।

পেশায় ভ্যানচালক ছোট ছেলে আইজুলকে নিজের আড়াই বিঘা আবাদি জমি লিখে দেন বৃদ্ধ বাবা-মা। কিন্তু তারপরও ছেলের সংসারে দু’মুঠো খাবার জোটেনি তাদের। তাই বাধ্য হয়ে কর্মহীন স্বামীকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে নিজেই সংসার চালাতেন শরিফন।

কিন্তু মায়ের নামে থাকা তিন শতক ভিটেমাটিও নিজের করে নিতে পর্চা কেটে নেন ছোট ছেলে আইজুল ইসলাম। এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে ঝগড়া চলছিল মা-ছেলে এবং পুত্রবধূ ইতির সঙ্গে।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে কথাকাটির এক পর্যায়ে বৃদ্ধা মাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে ছেলে আইজুল। লাঠির আঘাতে মায়ের হাত কেটে গিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। ছেলের পিটুনি সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে আশ্রয় নেন বাড়ির পাশের একটি মুদি দোকানে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় প্রতিবেশীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠলে পালিয়ে যান ছেলে আইজুল।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে শরিফন বলেন, ছোট ছেলে বৌ বাচ্চা নিয়ে আলাদা খায়। ছেলের সুখের জন্য নিজের শেষ সম্বল আড়াই বিঘা জমি লিখে দেই। বড় ছেলে আশরাফুলকে কিছুই দিতে পারিনি। তারপরও ছোট ছেলে আমার ভিটেমাটি টুকুর পর্চা কেটে নেয়। এ নিয়েই ঝগড়া শুরু। এর আগেও সে আমাকে একাধিক বার মারপিট করে।

প্রতিবেশী মুদি দোকানদার মহিদুল ইসলাম বলেন, আমি দোকানেই বসেছিলাম। হঠাৎ শরিফন হাপাতে হাপাতে আমার দোকনের সামনে এসে মাটিতে বসে পড়ে। দেখি তার হাত থেকে রক্ত ঝরছে। পরে কয়েকজন মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।

বোদা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার জাকিয়া আক্তার বলেন, বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে ওই বৃদ্ধা মাকে তার মেয়ে গুরুত্বর আহত অবস্থায় হাসপাতলে নিয়ে আসেন। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং হাতে রক্ত ঝরছিল। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে তিনি আশঙ্কামুক্ত।

বোদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মানিক বলেন, ঘটনাটি জানার পর হাসপাতলে যাই এবং ওই বৃদ্ধার চিকিৎসার খোঁজখবর নিই। ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। পাষণ্ড ছেলেকে বিচারের আওতায় আনা উচিত।

জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, খবর পেয়ে নিজে হাসপাতলে গিয়ে বৃদ্ধা মায়ের খোঁজ-খবর নেই এবং তখনই পুলিশকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেই। এছাড়া তার যথাযথ চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!