• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারী: বাচ্চুর সম্পদের খোঁজ নিবে দুদক


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১৯, ২০১৭, ০৭:২৬ পিএম
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারী: বাচ্চুর সম্পদের খোঁজ নিবে দুদক

ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ব বেসিক ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারীর সঙ্গে জড়িত ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন আব্দুল হাই বাচ্চু। ঋণ কেলেঙ্কারীরর ঘটনায় আদালতের নির্দেশে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। জিজ্ঞাসাবাদ থেকে বাঁচতে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এক মাস সময় চেয়েছেন বাচ্চু।

কিন্তু বাচ্চুকে ওই সময় দেয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। সংস্থাটির গণসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য মঙ্গলবার(১৯ ডিসেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তৃতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হননি বাচ্চু। পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে হাজির হতে এক মাস সময় চান তিনি। কিন্তু দুদক সূত্র জানিয়েছে, বাচ্চুকে সময় দেয়া হচ্ছে না। তাকে ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করছে দুদক। এমনকি বাচ্চুর সম্পদের খোঁজ নিতে একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে দুদক।

এজন্য অনুসন্ধান চালাতে দুদকের উপ-পরিচালক শামসুল আলমকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দুদক জানতে পেরেছে, অসুস্থ হয়ে আব্দুল হাই বাচ্চু রাজধানীর যে হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে দুদকে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করেন, ওই হাসপাতালে তিনি মাত্র একদিন ভর্তি ছিলেন।

প্রসঙ্গত, বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে দুদকের তলবে গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম হাজির হন জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বাচ্চু। একদিন বিরতি দিয়ে ৬ ডিসেম্বর প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন তিনি।

তৃতীয় দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১৭ ডিসেম্বর সেগুন বাগিচায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি উপস্থিত না হয়ে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এক মাস সময় চেয়ে আবেদন করেন।

বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে চাপের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন। বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকাকালেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংটির ঋণ বিতরণে অনিয়মের ঘটনাগুলো ঘটে, পরে দুদক ৫৬টি মামলা করে।

দুই দিনে ৫৬টি মামলার মধ্যে ১৫টির বিষয়ে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

প্রথম দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর বাচ্চু সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ঋণে অনিয়মের ঘটনায় নিজেকে তিনি দোষী মনে করেন না।

২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়াত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে দুদক। ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দানসহ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিধি বহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।

প্রায় চার বছর অনুসন্ধান শেষে এই অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় গত বছর রাজাধানীর তিনটি থানায় ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে দুদক। আসামিদের মধ্যে ২৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং বাকিরা ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক জরিপ প্রতিষ্ঠানে যুক্ত।

বাচ্চুকে আসামি না করার বিষয়ে দুদক তখন যুক্তি দেখিয়েছিল, এই অনিয়মে তার সংশ্লিষ্টতা তারা পায়নি। এরপর সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের নিয়োগ করা নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে অনিয়মিত ঋণ মঞ্জুর, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে পরিচালনা পর্ষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা ছিল।

গত অগাস্টে এক মামলার শুনানিতে আপিল বিভাগ বাচ্চু ও পরিচালনা পর্ষদের অন্য কাউকে আসামি না করায় উষ্মা প্রকাশ করে।

ব্যক্তি যেই হোক না কেন- এ ধরনের মামলায় আসামি করার ক্ষেত্রে ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ যেন না হয় সে বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সে সময় সতর্ক করে আদালত।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!