• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আজ

মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮, ০১:২৫ পিএম
মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ

ঢাকা : মাছের পর এবার মাংস উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। গত নয় বছরে মাংস উৎপাদন সাত গুণ বেড়েছে। গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) পণ্যটির উৎপাদন ছিল ৭১ লাখ টন। সরকার আশা করছে, চলতি অর্থবছর (২০১৭-১৮) শেষে এর উৎপাদনে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হবে। এতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানিও সম্ভব হবে। আগামীতে মাংস আমদানি নিরুৎসাহিত করার পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেলা ১১টায় এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংসের চাহিদা রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, দেশে বছরে ৭৫ লাখ ৫২ হাজার টন মাংসের প্রয়োজন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় মাংসের উৎপাদন ছিল প্রায় ১০ লাখ টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে আরো বেড়েছে। ২০১৭ সালে ঈদুল আজহায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার। কোরবানি ঈদ উপলক্ষে হৃষ্টপুষ্টকরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে অধিক উৎপাদনশীল গবাদিপশু (মূলত দেশীয় জাতের) পালনের মাধ্যমে ওই পরিমাণ গবাদিপশু জোগান দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

গত বছর গবাদিপশু পালনে সম্পৃক্ত খামারির সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ২৮৯ জন। একই সময়ে দুধের উৎপাদন তিন গুণ ও ডিমের উৎপাদন প্রায় আট গুণ বেড়েছে। গত অর্থবছরে দুধের উৎপাদন ছিল ২৬ লাখ টন থেকে বেড়ে ৯৩ লাখ টন এবং ডিম উৎপাদন ৫৬৫ কোটি থেকে ১ হাজার ৪৯৩ কোটিতে পৌঁছায়। আগামীতে আরো বাড়বে বলে মন্ত্রণালয় আশাবাদী।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গত অর্থবছরে মাছের উৎপাদন ছিল ৪১ লাখ ৩৪ হাজার টন। এ সময়ে মাছের পাশাপাশি মাংসের উৎপাদন বেড়েছে। ফলে দেশের মানুষের চাহিদা পূরণের পর রফতানিও সম্ভব হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, ‘আমিষের চাহিদা পূরণে ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি প্রবর্তন এবং তা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের মাধ্যমে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির বহুমাত্রিক কার্যক্রম গ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর এ বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়। যে কারণে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশি গরুর পাশাপাশি এক হাজার কেজি ওজনের আমেরিকান সঙ্করায়ণ করা ব্রাহমাজাতের গরু পালন হচ্ছে। ফলে আমরা মাছের পাশাপাশি মাংসেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।’

মন্ত্রী আরো বলেন, ‘দেশে মাংসের চাহিদার চেয়েও বর্তমানে উৎপাদন বেশি হচ্ছে। তাই আইনের ফাঁক গলিয়ে আসা হিমায়িত মাংসের আমদানি বন্ধের চেষ্টা করা হবে।’ এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সরকারি তথ্য মতে, বর্তমানে একটি গরুতে ৫০০ থেকে এক হাজার কেজি মাংস পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দুগ্ধ খামারিদের মধ্যে ৫ শতাংশ সরল সুদে ২০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। যেখানে ক্ষুদ্র খামারি ও নারী উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গবাদিপশুর আধুনিক রোগ নির্ণয়, রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কার্যক্রম, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন, প্রাণিপুষ্টি উন্নয়ন, উন্নতজাতের ঘাস চাষ এবং উপযুক্ত প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম গ্রহণের ফলে প্রাণিসম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

জনসংখ্যা ও আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুধ, মাংস, ডিম এবং এসব পণ্য থেকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের চাহিদাও ব্যাপকভাবে বাড়ছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সরকারের ভিশন-২০২১ অনুযায়ী প্রতিদিন জনপ্রতি দুধ ১৫০ মিলি লিটার ও মাংস ১১০ গ্রাম এবং বছরে ডিমের চাহিদা ১০৪টি নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রতিদিন ৯৪ লাখ ৬০ হাজার টন দুধ ও ৬৯ লাখ ৬০ হাজার টন মাংস এবং বছরে ১৭ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজারটি ডিম উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে সরকারের আশা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!