• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানবতাবিরোধী অপরাধে ইদ্রিস আলীর ফাঁসি


আদালত প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৫, ২০১৬, ১০:৫৫ এএম
মানবতাবিরোধী অপরাধে ইদ্রিস আলীর ফাঁসি

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শরীয়তপুরের পলাতক ইদ্রিস আলী সরদারের (৬৭) ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যর বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী।

ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে আনা চারটি অভিযোগের ১ ও ২ নম্বর অভিযোগে সংখ্যা ঘরিষ্ঠের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ৩ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ৪ নম্বর অভিযোগে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। ফাঁসি দিয়ে অথবা গুলি করে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরা করা যাবে বলে রায়ে বলা হয়েছে।

এর আগে বেলা পৌনে ১১টায় ৪৮৬ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করে ট্রাইব্যুনাল।

চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ২ নভেম্বর মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষামাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল রবিবার রায় ঘোষণার জন্য সোমবার দিন ঠিক করে দেয় ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর ঋষিকৃষ শাহা, জেয়াদ আলম মালুম ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম।

রেজিয়া সুলতানা চমন জানান, যুক্তিতর্কে তারা আসামি ইদ্রিস আলীর সর্বোচ্চ শাস্তি চান। এই মামলায় আটক আরেক আসামি মো. সুলা্ইমান মোল্লা (৮৪) সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে শরীয়তপুরের মো. সুলা্ইমান মোল্লা ও ইদ্রিস আলী সরদারের (৬৭) বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ২৯ অক্টোবর হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নিযাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ চার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে তদন্ত সংস্থা। আসামিরা শরীয়তপুর জেলার পালং থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুর মুসলিম পাড়ার অধিবাসী।

সোলায়মান মোল্লা ১৯৬৩ সালের পর মুসলিম লীগের নেতা হিসেবে শরীয়তপুর জেলার পালং থানার সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আর গাজী ইদ্রিস আলীও একই ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামি ছাত্র সংঘের’ নেতা ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ইদ্রিস ইসলামী ছাত্র সংঘের সক্রিয়কর্মী ছিলেন। গত বছরের ১৫ জুন সোলায়মান মোল্লা আটক হন। ইদ্রিস আলী এখনো পলাতক রয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল অনুসন্ধান শেষে ইদ্রিস ও সোলায়মানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। গতবছরের ২২ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নিয়ে চলতি বছর মে মাসে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে মোট ১৩ জনের সাক্ষ্য শুনেছেন আদালত।

ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট চার অভিযোগ

প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২২ মে আসামিরা দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ১০০ থেকে দেড়শ’ জন সদস্যসহ শরীয়তপুর জেলার পালং থানা এলাকায় কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কৃষক আব্দুস সামাদসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় ২০০ মানুষকে গুলি করে হত্যা ও বাড়ির মালামাল লুট করেন।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৬ মে পালং থানার মালোপাড়া ও রুদ্রকর গ্রামে হামলা চালিয়ে মঠের পুরোহিতকে গুলে করে হত্যা ও গ্রামগুলো থেকে মামালাল লুট ও আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করেন আসামিরা। মালোপাড়া থেকে ৩০/৪৫ জন নারী ও পুরুষকে ধরে মাদারীপুর পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে নিয়ে তিনদিন আটকে রেখে নারীদের ধর্ষণ করে ছেড়ে দেন। কিন্তু পুরুষদের গুলি করে হত্যা করেন।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৬ জুন একই থানার শৈলেন্দ্র কৃষ্ণ পালের বাড়িতে হামলা চালিয়ে দুইজনকে হত্যা করে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের নির্যাতন করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেন আসামিরা।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসামিরা দখলদার বাহিনীর সহায়তায় এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধ করেন। এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করে পালং থানার এক থেকে দেড় হাজার মানুষকে দেশত্যাগ করে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য করেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!