• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুদ্রানীতি ঘোষণার পর শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন


অর্থনৈতিক প্রতিবেদক  জানুয়ারি ৩০, ২০১৭, ১০:৫৬ এএম
মুদ্রানীতি ঘোষণার পর শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন

ঢাকা : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণার পর দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক কমেছে ১১৮ পয়েন্ট এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূচক কমেছে ২৪৭ পয়েন্ট। 

এদিকে গত সাত কার্যদিবসে যে পরিমাণে সূচক বেড়েছে, একদিনে তার থেকে আড়াই গুণ কমেছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের দরপতন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগে নজরদারি বাড়াসহ নানা ইস্যুতে এ দরপতন হয়েছে।  

মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় শেয়ারবাজার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, মূলধন বাজারে ২০১০ সাল থেকে বিদ্যমান মন্দা প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়াটি যাতে কর্তৃপক্ষের সুদৃঢ় নিয়ন্ত্রণে সুস্থ ধারায় থাকে, সে বিষয়ে কার্যকর নজরদারি জরুরি। তা না হলে অতীতের মতো এবারো বিনিয়োগকারীদের গুরুতর ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে। তিনি বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ইতিমধ্যে সতর্কতামূলক উপদেশ জারি এবং বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বাড়াতে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। স্পন্সরদের শেয়ার ও অস্বাভাবিক উচ্চ প্রাইস আর্নিং রেশিওধারী শেয়ারগুলোর বিপরীতে মার্জিন ঋণ জোগানের ওপর বিধিনিষেধ আরোপও এক্ষেত্রে বাঞ্ছনীয় হতে পারে।

গভর্নর জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের দিক থেকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাংকগুলোর ওপর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে, যাতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে তারা আইন নির্দেশিত মাত্রা মেনে চলে। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিক থেকেও তাদের গ্রাহকদের নেয়া বিভিন্ন ঋণ সঠিক খাতে যথাযথ ব্যবহার হয় কি না সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হবে। অস্বাভাবিক লাভের আশায় বিনিয়োগের যাতে অপব্যবহার না হয়, সে বিষয়ে নজরদারি জোরদার করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, বাজারে যে পতন হয়েছে তা স্বাভাবিক কারেকশন (মূল্য সংশোধন) নয়। মার্কেটকে জোর করে নামানো হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নিয়ে বিভিন্ন মহলের কথাবার্তা এবং সর্বশেষ মুদ্রানীতি দিতে গিয়ে শেয়ারবাজার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্যের পর বড় দরপতন হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এবং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেট করপোরেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ হাফিজ উদ্দিন বলেন, মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় গভর্নর বাজারে নজরদারি বাড়ানোর যে কথা বলেছেন, তাতে প্যানিক সৃৃষ্টি হয়ে দরপতন ঘটেছে।

এদিকে গতকাল রোববার দুই বাজারেই লেনদেন শুরু হয়েছিল ঊর্ধ্বমুখী সূচক নিয়ে। সকাল সাড়ে ১০টায় লেনদেন শুরুর পর এক দফা কিছুটা কমলেও সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চাঙ্গাভাব অব্যাহত ছিল। কিন্তু নতুন মুদ্রানীতিতে শেয়ারবাজার নিয়ে সতর্ক করার পর দুই বাজারেই সূচক নামতে থাকে। বেলা আড়াইটায় লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে পতনের প্রবণতা। 

এদিন ডিএসইতে এক হাজার ১৩৭ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা গত বৃহস্পতিবারের চেয়ে ১৩২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা কম। সেদিন এ বাজারে এক হাজার ২৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। ৩২৭টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৭টির, কমেছে ২৭৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে পাঁচটির। এদিকে বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দিন শেষে আগের দিনের চেয়ে ১১৭ পয়েন্ট কমে পাঁচ হাজার ৫০০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ১৭ পয়েন্ট কমে হয়েছে এক হাজার ২৭৪ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ৩৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে দুই হাজার তিন পয়েন্টে। 

অন্যদিকে সিএসইতে ৬৮ কোটি সাত লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার হাতবদল হয়েছিল ৭২ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার। সিএসইর সার্বিক সূচক আগের কার্যদিবসের চেয়ে সিএএসপিআই ৪১৯ পয়েন্ট কমে ১৬ হাজার ৯৭৯ পয়েন্টে দিন শেষ করেছে। লেনদেন হয়েছে ২৬৩টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪২টির, কমেছে ২১৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে চারটির দর।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সূচকের ব্যাপক পতনে শেয়ারবাজারে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করেছে, যার নেপথ্যে একাধিক ইস্যু কাজ করেছে। ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারবাজারে যে পরিমাণ শেয়ার কেনা হয়েছে, ঊর্ধ্বগতির বাজারের সুযোগ নিয়ে তারা মুনাফা বের করে নিয়েছেন। বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রি হওয়ায় সামগ্রিক বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। 

সাম্প্রতিক বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারবাজারে এক্সপোজারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ শেয়ারবাজার এক্সপোজারের হিসাব মার্কেট ভ্যালুর ওপর নির্ভর করে। আর মার্কেট এক্সপোজারের পরিমাণ কনসোলিডেটেড পেইড আপ ক্যাপিটালের ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে। 

এছাড়া প্রত্যেক মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারের এক্সপোজারের হিসাব দাখিল করতে হয়। তবে সম্প্রতি ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মুনাফা বের করে নেয়ার এক ধরনের মৌখিক নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তবে শেয়ার বিক্রির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো নির্দেশনাই ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেয়নি। কারণ ক্যাপিটাল মার্কেটে তারা কোনো শেয়ার কিনবে বা বিক্রি করবে- এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো হস্তক্ষেপ করে না। তবে তাদের আইনের মধ্যে থাকতে বলা হয়েছে। আইনের বাইরে কেউ কোনো কিছু যেন না করে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!