• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মোটাতাজা দেখলেই খাঁটি গরু নয়!


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৬, ১২:৪৮ পিএম
মোটাতাজা দেখলেই খাঁটি গরু নয়!

দরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। শিগগিরই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবে গবাদিপশুর হাট। গরু-মহিষ-ছাগল কিনতে ভিড় করবেন ক্রেতারা। গরু নিয়ে অনেকের মন থাকে দুরুদুরু। অসাধু খামারিরা কৃত্রিমভাবে গরু মোটাতাজা করে থাকেন, যা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বরং এই মাংস খাওয়া বেশ বিপজ্জনক। কাজেই গাঁটের টাকা খরচ করে মনের মতো গরু কেনা নিয়ে অনেকে সংশয়ে থাকেন। প্রশ্নটা হচ্ছে, এই ভেজালের মধ্যে কীভাবে খাঁটি গরু কেনা যাবে?

অসাধু খামারিরা সাধারণত বিশেষ তরল পদার্থ ইনজেকশনের মাধ্যমে পুশ করেন, নানা ধরনের ট্যাবলেট খাইয়ে গরুকে খুব অল্প সময়ে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলেন। অভিজ্ঞ না হলে এ চালাকি ধরা কঠিন। এ জন্য চাই সচেতনতা। প্রাণী চিকিৎসক, মাংস ব্যবসায়ী ও খামারিদের মতে, কোরবানির হাটে প্রথমে গরুর আচরণের দিকে খেলায় রাখতে হবে। আকর্ষণীয়, চকচকে, তেলতেলে হলেই যে সেটি ভালো গরু, তেমন ভাবার কারণ নেই।

মাংস ব্যবসায়ীদের মতে, কোরবানি করার তিন মাস থেকে ১০-১৫ দিন আগে গরুর শরীরে ট্যাবলেট বা ইনজেকশনের মাধ্যমে ওষুধ দিয়ে থাকেন অসাধু খামারিরা। এতে গরু দ্রুত ফুলে-ফেঁপে ওঠে। মনে হবে গরুর শরীরে প্রচুর মাংস। তা ছাড়া ওই গরুর শরীর তৈলাক্ত ও চকচক করতে থাকে। হাটে নেয়ার পর পাশে থাকা অন্য গরুর চেয়ে একটু আলাদা দেখতে এটিকে।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, একধরনের ইনজেকশন আছে, যা দেয়া হলে গরু ১৫ দিনের বেশি বাঁচে না। এ জন্য অসাধু খামারিরা ঈদের চার-পাঁচ দিন আগে তাঁদের গরুর শরীরে ইনজেকশন প্রয়োগ করে হাটে নিয়ে আসেন। তখন দেড় মণ ওজনের একটি গরুকে অনেকটা দুই মণ ওজনের মনে হবে। কিন্তু বেশি গরম পড়লে ও দীর্ঘ সময় যাত্রা করার কারণে অনেক গরু পথেই মারা যায়। এখন গরম পড়ছে, তাই এ ধরনের গরু হাটে আসার সম্ভাবনা কম।

গরু ফুলে-ফেঁপে ওঠার কারণ সম্পর্কে রবিউল আলম বলেন, ‘মানুষ হাঁটলে শরীরে ঘাম হয়। এর সঙ্গে জীবাণু বেরিয়ে যায়। গরুরও শরীর ঘামে, পানি বের হয়। কিন্তু মোটা-তাজা করার জন্য ওষুধ দেয়া হলে সেই গরুর শরীর থেকে পানি বের না হয়ে তা জমা হয়ে যায়। তাই শরীর ফোলা ফোলা দেখায়। অনেকটা মানুষের রূপচর্চার জন্য ফেসিয়াল করলে যেমন দেখায়, তেমন লাগে।’

ঢাকা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক তালুকদার বলেন, গরুর যেসব অংশে মাংসের পরিমাণ বেশি থাকে, সেখানে আঙুল দিয়ে হালকা করে চাপ দিতে হবে। যেসব গরুকে ইনজেকশন-ট্যাবলেট খাইয়ে মোটা করা হয়েছে, সেগুলোর মাংস বেশি দেবে গর্তের মতো হয়ে যাবে। সেই গর্ত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতেও বেশ সময় লাগবে। কিন্তু প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বেড়ে ওঠা একটি গরুর শরীরে চাপ দিলে দেবে গেলেও তা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসে।

মো. এমদাদুল হক তালুকদার বলেন, এখন ক্রেতা ও খামারিরা যথেষ্ট সচেতন। ওষুধ দিলে গরুর শরীরে খারাপ প্রভাব পড়ে। এর মাংসও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এবার ঢাকার সব পশুর হাট ও উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পশুর হাটে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের দল নজরদারি করবে। হাটগুলোতে পশু চিকিৎসকও রাখা হবে। খামারিরা জানান, গবাদিপশুকে যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক পরিবেশে লালন-পালন করতে হবে। খাবার হিসেবে খড়ের সঙ্গে চিটাগুড়, মিষ্টি আলু, প্রচুর পরিমাণে ঘাস খাওয়ালে গরু এমনিতেই মোটা-তাজা থাকে, শারীরিক বৃদ্ধিও ঘটে।

মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো নামের গবাদিপশুর খামারের পরিচালক ইমরান হোসেন বলেন, গরুর চিকিৎসায় ওষুধ খাওয়ানো যেতে পারে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে গরুর খাবার হিসেবে গুড় ও খড়ের সঙ্গে সামান্য ইউরিয়া সার দেয়ার প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। তবে ঘাস, ভুসি, খড় খাওয়ানো হলে গরু এমনিতেই হৃষ্টপুষ্ট হয়।

খামারি, চামড়া ও মাংস ব্যবসায়ী সমিতি এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, প্রতিবছর ঈদুল আজহায় ৫০ থেকে ৫৫ লাখ গরু কোরবানি দেয়া হয়। গবাদিপশু পালন বৃদ্ধি পাওয়ায় আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানিযোগ্য গরু আছে ৪৪ লাখ ২০ হাজার। ছাগল-ভেড়া রয়েছে ৭০ লাখ ৫০ হাজার। এ ছাড়া ভারত ও মিয়ানমার থেকেও গরু আসছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School

জাতীয় বিভাগের আরো খবর

Link copied!