• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রশিতে বেঁধে গ্রাম ঘুরিয়ে নারী নির্যাতন, মামলা


মেহেরপুর প্রতিনিধি জুলাই ৯, ২০১৭, ১০:৫৭ এএম
রশিতে বেঁধে গ্রাম ঘুরিয়ে নারী নির্যাতন, মামলা

মেহেরপুর: জেলার গাংনী উপজেলায় পরকীয়া প্রেমের অভিযোগে গ্রাম্য সালিশে দুই জনের হাত রশি দিয়ে বেঁধে গ্রামের বিভিন্ন সড়কে ঘোরানো ও শারীরিকভাবে নির্যাতনের ঘটনায় অবশেষে মামলা করা হয়েছে।

শনিবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায় নির্যাতিত নারীর বাবা বাদী হয়ে ১৭ জনকে আসামি করে গাংনী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। পুলিশের তাৎক্ষনিক পদক্ষেপে এক ইউপি সদস্য ও কাজিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- করমদি গ্রামের মৃত চেতন মন্ডলের ছেলে তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল হামিদ (৫২) ও একই গ্রামের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) রমজান আলীর ছেলে শিহাব উদ্দীন (২৫)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান- গেল ১ জুলাই রাতে করমদি গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে একই গ্রামের এক যুবকের পরকীয়া প্রেমের অভিযোগে আটক করে গ্রামের কিছু লোকজন। পরদিন গ্রামের অংসখ্য মানুষের উপস্থিতে তাদের দু’জনের হাত একসঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে গ্রামের বিভিন্ন সড়কে ঘোরানো হয়।

এসময় শারীরিকভাবে তাদের নির্যাতন করা হয়। ওই সালিশেই গৃহবধুকে যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। পরে যুবককে দেড় লাখ টাকা জরিমানা নির্ধারণ করে গৃহবধুকে ফের তালাক দেয়া হয়। এঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন- স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ৮নং ওয়ার্ড সদস্যসহ কয়েকজন। তাদের বেঁধে গ্রাম ঘুরানোর ভিডিও এবং ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়।

এঘটনার পরে নির্যাতিতা গৃহবধুর পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।   

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মতর্কা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, শনিবার দিনভর বিভিন্নভাবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হয়। তদন্তে ঘটনার সত্যতা মেলে। গ্রাম্য মতবর কিংবা জনপ্রতিনিধিদের এ ধরনের বিচার করার ক্ষমতা দেয়া হয়নি। তাছাড়া নির্যাতন করাতো অন্যায়। ভিডিও ফুটেজ ও ছবি নির্যাতনের বড় প্রমাণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্যাতিতা গৃহবধুর বাবা বাদী হয়ে শনিবার সন্ধ্যায় গাংনী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

সালিশের নামে নির্যাতনকারীদের ১৭ জনকে তিনি আসামি করেন। পুলিশের তাৎক্ষনিক অভিযানে আসামি দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ সালিশে বিচারকদের একজন ছিলেন।

অপরদিকে নিকাহ রেজিস্ট্রারের ছেলে সিহাব উদ্দীন গৃহবধু এবং ওই যুবকের তালাকনামা সম্পন্ন করেছিলেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এছাড়াও তাদের স্বীকারোক্তিতে অভিযুক্ত সালিশপতিদের বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তবে মামলা তদন্ত এবং আসামি গ্রেপ্তারের স্বার্থে তাদের নাম পরিচয় গোপন করেন তিনি।

বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের ৩/৪টি দল অভিযানে রয়েছে উল্লেখ করে ওসি আরো বলেন, প্রধান আসামিসহ অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ও গাংনী উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মেহেরপুর প্রশাসক পরিমল সিংহ বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখেছি। এই নির্যাতন ও অবিচারের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গাংনী সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম জামাল আহম্মেদকে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নারী নির্যাতনের বিষয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হলে অভিযুক্তদের অনেকেই গাঢাকা দেন।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!