• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে চাপ দিবে যুক্তরাষ্ট্র: বার্নিকাট


কক্সবাজার প্রতিনিধি জানুয়ারি ৩১, ২০১৭, ০৭:২৭ পিএম
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে চাপ দিবে যুক্তরাষ্ট্র: বার্নিকাট

কক্সবাজার : ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তরিক। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান মিয়ানমারের হাতে। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অব্যাহত থাকবে। 

কক্সবাজারের টেকনাফে দুটি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। মঙ্গলবার(৩১ জানুয়ারি) তিনি দুটি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছেন কয়েকটি ক্যাম্প ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়। তাদের পরিস্থিতি জানতে টেকনাফের হ্নীলা এলাকার লেদা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন বার্নিকাট। ক্যাম্পটি অনিবন্ধিত। এই শিবিরে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এর মধ্যে সদ্য আসা রোহিঙ্গা আছে প্রায় ৩৭ হাজার। এ সময় তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে টেকনাফে পালিয়ে আসা অন্তত ১৮ জন নির্যাতিত রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন। মার্কিন দূতাবাসের আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলও এসময়ে বার্নিকাটের সঙ্গে ছিলেন।

এছাড়াও লেদাস্থ আইএমও’র স্বাস্থ্য ক্লিনিকে কর্মরত এনজিও কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন এ প্রতিনিধি দল। সেখানে ১৪ জন নারী ও চারজন রোহিঙ্গা পুরুষ এবং কয়েক বছর আগে আসা আরও দুজন রোহিঙ্গা পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন।

রাখাইনে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে ছোটগজরবিল থেকে পালিয়ে আসা ফিরোজা বেগম (৩২) কান্না শুরু করেন। তাঁর কোলে থাকা ২২ দিন বয়সী শিশুটিও এ সময় কান্না শুরু করে।কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ডিসেম্বরের শেষ দিকে মিয়ানমারের সেনা ও পুলিশ তাদের গ্রামটি ঘিরে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। গুলিতে তার স্বামী, বাবা, শ্বশুর, ননদসহ পরিবারের নয়জন নিহত হন। এরপর রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তখন তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। কোনোমতে তিনি চার বছর বয়সী এক ছেলে ও আড়াই বছর বয়সী এক মেয়েকে নিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেন। প্রাণ বাঁচাতে ওই রাতেই তিনি ছেলেমেয়েকে নিয়ে টেকনাফ পালিয়ে আসেন। এরপর লেদার এই রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেন।

২২ দিন আগে এই শিবিরের ই-ব্লকের একটি কক্ষে জন্ম নেয় কোলের শিশু সন্তানটি। তিনি বলেন, মুসলমান বলে আমাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে না। দমন-পীড়ন চালিয়ে ঘরছাড়া করা হচ্ছে। তাহলে আমরা কোথায় যাব?—সে প্রশ্ন​ও করেন তিনি।

লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি দুদু মিয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নির্যাতন এখনো বন্ধ হয়নি। দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন। নাগরিকত্ব ফিরে পেলে রোহিঙ্গারা এ দেশে এক মুহূর্তও থাকবে না।

লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে দুপুর ১টার দিকে মার্শা বার্নিকাট বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তাঁর দেশ অত্যন্ত আন্তরিক। এ জন্য তিনি এবারসহ দুইবার ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ ভালো কাজ করেছে। ঘটনার চার মাস পর কেন এই পরিদর্শন—এর জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজতে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই মিয়ানমারের ওপর চাপ দিয়ে আসছে। এই চাপ অব্যাহত থাকবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান মিয়ানমারের হাতে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ মিয়ানমারকে নিতে হবে।

পরিদর্শনকালে প্রতিনিধি দলের সাথে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বাংলাদেশ অফিস প্রধান পে পে কেবি ছিদ্দিকী, বিজিবি টেকনাফ ২ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ, উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল সিদ্দিকী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাউলাউ মারমা, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: শফিউল আলম উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রতিনিধি দল টেকনাফের মুছনী নয়াপাড়া নিবন্ধিত ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।

এর পুর্বে সোমবার বিকালে বিশেষ বিমানযোগে মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার পৌঁছান। বিকাল ৫টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধি দলটি। পরে বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআইসি) কার্যালয়ে যান।

সেখানে আরআরআইসি কমিশনার সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আতা
 

Wordbridge School
Link copied!