• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শূন্যই থাকবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন পদ?


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৬, ২০১৬, ০৭:১৭ পিএম
শূন্যই থাকবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন পদ?

ঢাকা: জাতীয় কাউন্সিলের পরও সক্রিয় করা যায়নি বিএনপির স্থায়ী কমিটি। বরং অসুস্থতা, বিদেশে অবস্থান এবং আগের মতোই তিনটি পদ শূন্য থাকার কারণে স্থায়ী কমিটি দলটিতে গতিশীল ভূমিকা পালন করতে পারছে না। বলা হচ্ছে, আগের মতোই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কমিটি।

পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দলটির সিনিয়র নেতারা এও বলছেন যে তিনটি শূন্য পদ আগের মতোই অপূরণীয় থাকছে। বিশেষ করে গত ৩০ বছর যাবৎ বিএনপিতে সক্রিয় আছেন বা খালেদা জিয়াকে যারা ঘনিষ্ঠভাবে চেনেন, এমন নেতাদের কেউই মনে করেন না যে শূন্য থাকা ওই তিনটি পদ সহসাই পূরণ হবে। প্রবীণ ওই নেতাদের মতে, ‘সিদ্ধান্তহীনতাই বিএনপির অলংকার’। 

আর চেয়ারপারসনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে তারা বিশ্লেষণ করেন ‘স্থিতাবস্থা’ হিসেবে। নিতান্তই বাধ্য না হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা পরিবর্তন কোনোটাই করেন না খালেদা। ফলে ওই তিনটি পদ আগামী বেশ কিছুদিনেও (অনেকের মতে কয়েক বছরও লাগতে পারে) অপূরণীয় থাকছে বলে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মনে করেন।

তাদের মতে, সিদ্ধান্তহীনতার ক্ষেত্রে বিএনপিতে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হয়ে আছে অষ্টম সংসদে সরকারি দলে এবং নবম সংসদে বিরোধী দলে থাকাকালীন সংসদের একজন উপনেতা নির্বাচন না করতে পারার ঘটনা। এ ছাড়া প্রায় চার বছর ভারপ্রাপ্ত থাকার পরও  মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পূর্ণ মহাসচিব করার প্রশ্নে সিদ্ধান্তহীনতা এবং সর্বশেষ কাউন্সিলের পাঁচ মাস পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণাসহ অনেক ঘটনা বিএনপিতে নজির হয়ে আছে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘শূন্য তিন পদ কবে পূরণ হবে, সে ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। কারণ  কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে গঠনতন্ত্রে চেয়ারপারসনকে সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। সুতরাং তিনি যখন মনে করবেন, তখনই ওই পদ পূরণ হবে।’ অন্য কোনো নেতার এটি জানার কথা নয়, যোগ করেন দলের প্রবীণ এই নেতা। তবে তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী স্থায়ী কমিটি গতিশীল করতে হলে শূন্য পদে নিয়োগ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সম্পন্ন করা উচিত।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সুবিধামতো সময়ে চেয়ারপারসন অবশ্যই শূন্য পদগুলো পূরণ করবেন। কারণ তার জানা আছে, ওই পদগুলোতে কারা আসার যোগ্য।’ 

ফখরুলের মতে, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী একাধিক প্রার্থী বিএনপির মতো বড় দলে থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার মধ্য থেকে দলে যাকে অনিবার্য বলে মনে করবেন, তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। কিন্তু এটি কবে হবে সেটা বলা কঠিন।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ মাত্র ১০ জন সদস্য সক্রিয় আছেন। বাকিদের কেউ অসুস্থ এবং কেউ দেশের বাইরে রয়েছেন। চেয়ারপারসনের সঙ্গে দূরত্বের কারণে কেউ কেউ আবার স্বেচ্ছায় দলীয় কর্মকান্ড থেকে নিজেকে দূরে রাখছেন, এমন ঘটনারও নজির আছে।

সর্বশেষ গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলের আগেও বিএনপিতে বেশ কয়েকটি পদ শূন্য ছিল। তা ছাড়া, বয়সের ভারে ন্যুব্জ বেশ কয়েকজন নেতা দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তা সত্ত্বেও বেশ কয়েক বছর স্থায়ী কমিটির শূন্য পদ পূরণ করেননি খালেদা জিয়া।

 অনেক সময় এমনও হয়েছে যে মাত্র পাঁচ-ছয়জন নেতা নিয়েই স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। ওই সময় অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় নেতাদের বলতে শোনা গেছে, বিএনপি নেত্রীর অবস্থান সব সময় ‘স্ট্যাটাসকো’ বা স্থিতিশীল। একান্ত বাধ্য না হলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন না বা কাউকে দল থেকে বাদও দেন না। সর্বশেষ কাউন্সিলের আগেও তিনি কাউকে বাদ দেননি।

এদিকে জাতীয় কাউন্সিলের পর ৬ আগস্ট ঘোষিত ১৯ সদস্যের কমিটিতে ১৭ ও ১৮ নম্বর পদ অজ্ঞাত কারণে খালি রাখা হয়। ওই সময় শোনা যায়, দুই পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান ও শার্মিলী রহমানের জন্য পদ দুটি খালি রাখা হয়েছে। 

আবার অনেকে ধারণা করেছেন, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা ও মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদের মতো প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকায় খালেদা জিয়া সমন্বয় করতে পারেননি। নিশ্চয়ই সমন্বয় করে শিগগিরই তিনটি পদে নেতাদের নাম ঘোষণা করা হবে, এমনও মনে হয়েছে নেতাদের। 

এরপর গত ২৮ সেপ্টেম্বর আ স ম হান্নান শাহ মারা গেলে আরো একটি পদ শূন্য হয়েছে। স্থায়ী কমিটি ঘোষণার পর ইতিমধ্যে পার হয়েছে তিন মাস। হান্নান শাহ মারা গেছেন তা-ও প্রায় দুই মাস হতে চলছে। অথচ পদ তিনটি এখনো শূন্যই আছে। 

এমন পরিস্থিতি অবশ্য কাউন্সিলের আগেও ছিল। কাউন্সিলের আগে স্থায়ী কমিটির নেতা খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও ড. আর এ গনির মৃত্যুর ফলে দুটি এবং সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তিনটি পদ শূন্য ছিল। এ ছাড়া বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ায় নিষ্ক্রিয় হয়ে ছিলেন এম শামসুল ইসলাম ও সারোয়ারী রহমান। কাউন্সিলের পর গঠিত কমিটিতে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে এখনো বয়সের ভারে ও অসুস্থ হয়ে আছেন এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও এম তরিকুল ইসলাম। আনুষ্ঠানিক দু-একটি বৈঠকে এসব নেতার কেউ কেউ মাঝেমধ্যে এলেও দলের রাজনৈতিক অন্যান্য কর্মকাণ্ডে তারা ততটা সক্রিয় হতে পারছেন না। মওদুদ আহমদও মাঝখানে বেশ কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন। বেশ কয়েক মাস জার্মানিতে থাকার পর সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেছেন।

এদিকে এক-এগারোর পর থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের বাইরে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির দুই নম্বর সদস্য তারেক রহমান। প্রায় এক বছর যাবৎ ভারতে আছেন ১৯ নম্বর সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। সব মিলিয়ে ১৯ সদস্যের কমিটিতে সক্রিয় আছেন মাত্র কয়েকজন। 

খালেদা জিয়াসহ দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকগুলোতে নিয়মিত অংশ নেয়া নেতারা হলেন-ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!