• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সন্তানদের মৃত্যু চেয়ে বাবার আবেদন!


মেহেরপুর প্রতিনিধি জানুয়ারি ২০, ২০১৭, ০৬:৩৭ পিএম
সন্তানদের মৃত্যু চেয়ে বাবার আবেদন!

মেহেরপুর: জেলা শহরের বেড়পাড়ার তোফাজ্জেল হোসেন সন্তানদের মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর আবেদন করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে মেহেরপুরের ডিসি পরিমল সিংহের কাছে এ লিখিত আবেদন করেন তিনি।

তোফাজ্জেল হোসেন একান্ত অসহায় হয়েই নিজের দুই ছেলের মৃত্যুর কামনা করেছেন। একই সঙ্গে স্ত্রী ও নাতনির মৃত্যুও। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঘটনাটি সত্য। ছেলের চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটাতে না পারা অসহায় বাবা তার আবেদনে বলেছেন, দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত দুই ছেলে, স্ত্রী ও নাতনির মৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হোক, না হলে চিকিৎসার ব্যয়ভার নেয়া হোক।

এ আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিডিএলজি) খায়রুল হাসান।

জানা গেছে, তোফাজ্জেলের দুই ছেলে জন্মের পর থেকেই ‘ডুফিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি’ রোগে আক্রান্ত। যার ওষুধ আজও আবিষ্কার হয়নি। দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিতে হয়েছে তার। আত্মীয়স্বজনও হাত গুটিয়ে নিয়েছেন তার কাছ থেকে। দিন যতই যাচ্ছে ততই মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন বড় সন্তানটি। একমাত্র মেয়ের শরীরেও একই রোগ বাসা বেঁধেছে। তোফাজ্জেলের স্ত্রীও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। এ অবস্থায় তিনি চোখে অন্ধকার দেখছেন। তোফাজ্জেলের বড় ছেলে আবদুস সবুর (২৪), ছোট ছেলে রায়হান, নাতি সৌরভ (৮) তিনজনই ডুফিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি রোগে আক্রান্ত। সবুর বর্তমানে বিছানাগত।

শহরের বড়বাজারের পৌর মার্কেটে তোফাজ্জেলের একটি পান-বিড়ির দোকান ছিল। সেটিও তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন ছেলের চিকিৎসার প্রয়োজনে।

স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা করাতে সঞ্চিত সব অর্থ ও সহায়-সম্পত্তি শেষ করে ফেলেছেন। কিন্তু তাতে ছেলের শরীরের কোনো উন্নতি হয়নি।

আবদুস সবুর ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। সে সময় তার রোগটি দেখা দেয়। ফলে তার আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। সে সময় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহাবুবুল আলম রোগটি শনাক্ত করেন।

ভারতের কেয়ার হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ গৌরাঙ্গ মণ্ডল, তপন কুমার বিশ্বাস, ভারতের কোঠারি মেডিকেল সেন্টারের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. স্বপন মুখার্জিও সবুরের মল-মূত্র, রক্ত, কফ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন ‘ডুফিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি’ ডিজিজ বলে। তোফাজ্জেল হোসেন তার সন্তানের আরোগ্যে দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, দূতাবাসেও ছুটে গেছেন। ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস সহযোগিতা দিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের কাছে রোগের ওষুধ কী জানতে চায়।

শত শত চিকিৎসক ইন্টারনেটে জানিয়েছেন, এখনো এই রোগের কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। ফলে তোফাজ্জেল হতাশ হয়ে পড়েন।

সরেজমিন দেখা যায়, বসবাসের অযোগ্য একটি ঘরে ছয়জন ঠাসাঠাসি করে থাকেন। তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ছেলের চিকিৎসা করাতে সঞ্চিত সব অর্থই শেষ হয়ে গেছে। এরপরও আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়েও চিকিৎসা করানো হয়েছে। এখন একদম নিঃস্ব।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক খায়রুল হাসান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক। আবেদনটি পড়ে চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি। আমরা বিভিন্নভাবে তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে চাই। আমরা চাই তারা বেঁচে উঠুক। সুস্থ থাকুক।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!