• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘সব প্রযোজকের টাকা কি শাকিব এখন ফেরৎ দিতে পারবে?’


মিতুল আহমেদ এপ্রিল ১৯, ২০১৭, ০৬:১৭ পিএম
‘সব প্রযোজকের টাকা কি শাকিব এখন ফেরৎ দিতে পারবে?’

মনতাজুর রহমান আকবর। বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রভাবশালী নির্মাতা। এখন পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সবেচেয় বেশি সিনেমা বানানো পাঁচ জনের একজন তিনি। এই চিত্রনির্মাতা আজিজুর রহমান, মতিন রহমান, জিল্লুর রহমান, সাইফুল আজম কাশেম ও নারায়ণ ঘোষ মিতার মতো প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতার সঙ্গে সহকারি হিসেবে কাজ শুরু  করেন। কাজ করেছেন ছুটির ঘণ্টা, জনতা এক্সপ্রেস,  মহানগর, লাল কাগজের মতো সিনেমায়। নব্বইয়ের দশকে পরিচালক হিসেবে আভির্ভূত হওয়া এই নির্মাতা পুরো দশকজুড়েই তুমুল হিট সিনেমা নির্মাণ করেন। নির্মাতা হিসেবে চিত্রনায়ক মান্নাকে নিয়ে বেশির ভাগ সিনেমা করলেও মৌসুমী ও হুমায়ূন ফরিদী ছিলো তার পছন্দের শিল্পী। শান্ত কেন মাস্তান, খল নায়ক, কুলি, মগের মুল্লুক, কুখ্যাক খুনী ও বস্তির রানী সুরিয়ার মতো অসংখ্য সিনেমা নির্মাণ করেন। বর্তমানে নির্মাণ করছেন ‘দুলাভাই জিন্দাবাদ’ নামের একটি সিনেমা। মৌসুমী ও ডিপজল অভিনীত এই সিনেমাটিরসূত্র ধরে এই নির্মাতার সঙ্গে বাংলা চলচ্চিত্রের সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মিতুল আহমেদ

‘দুলাভাই জিন্দাবাদ’ সিনেমার আপডেট কি আকবর ভাই...? 
মোটামুটি শ্যুটিং শেষ। কালকে(২০ এপ্রিল) থেকে গানের শ্যুটিং। ছবির সম্পাদনাও শেষের দিকে।

তাহলে নিশ্চয় ছবির রিলিজ ডেটও ঠিক করে ফেলেছেন?
না। এখনো রিলিজ ঠিক করেনি। আগে ডাবিং হবে, কালার কারেকশান হবে, ডিজিটালে মুভ হবে। পোস্ট প্রোডাকশনের সমস্ত কাজ শেষ হলে রিলিজ নিয়ে ভাববো। আজকে দেখলাম শাকিব খানের ‘রংবাজ’ সিনেমার কি যেনো দিলো(ফার্স্টলুক)। এই যে এরকম শ্যুটিং শুরু করার আগেই সিনেমার রিলিজ ঘোষণা করতে পারবো না। 

আসছে ‘শিল্পী সমিতির নির্বাচন’-এ প্রধান নির্বাচন কমিশনার আপনি। শিল্পী সমিতি কি এতোদিন সত্যিকার অর্থেই শিল্পীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতে পেরেছে বলে মনে করেন?
এটা বাংলাদেশে হয় না। বলাও যায় না। করাও যায় না। বছর শেষ হয়, আবার নতুন বছর আসে। আবার এরকম একটা দর্শনিয় নির্বাচন হয়, আবার মেয়াদ ফুরায়। কারো অধিকার নিয়ে কেউ কিছু বলতে আসে না। অধিকার নিয়ে এখন কেউ নির্বাচন করতে আসে না, এখন নির্বাচন করে একটু ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য। আর এখনতো ইন্ডাস্ট্রিতে ছবিই নাই, ওই পরিমাণ শিল্পীও নাই। কে কি অধিকার আদায় করবে? সমিতি একটা আছে, সদস্য হয়ে টয়ে একটা নির্বাচন হয়। এই...! 

যৌথ প্রযোজনার ছবি নাম নিয়ে ভারতীয় অসংখ্য অভিনেতা-নির্মাতা ও কলাকুশলী দেশের বাজার দখল করছে বলে অভিযোগ আছে। এটাকে কি বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য হুমকি মনে করেন?
এগুলো চরম বেঈমানীর ফল। সিরাজদৌল্লার আমল থেকেই এরা ছিল। মিরজাফরের বংশধর যারা তারাই এসব করছে। নিজেদের স্বার্থের জন্য দেশের স্বার্থ পর্যন্ত বিক্রি করে দিচ্ছে। সে অভিনেতা হোক, বা নির্মাতা হোক যৌথ বাণিজ্যে নাম লেখানোর আগে তার দেশের সিনেমা নিয়া দশবার ভাবা উচিত। তারতো এই বোধ থাকতে হবে যে দেশকে বিক্রি করে দিলেতো হবে না। 

সম্প্রতি শাকিব খানের হাত ধরে কলকাতার সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযোজনা সংস্থা ‘ভেঙ্কটেশ’ পর্যন্ত বাংলাদেশে আসতে চলেছে। এটাকে কিভাবে দেখেন...?
এই বিষয়ে এখনো ক্লিয়ার হয়নি। আমরা শুনছি। ভেঙ্কটেশ নাকি বাংলাদেশে অফিস খুলবে। আগে ভাগে কিছু বলা ভালো না। দেখি। 

এফডিসি কেন্দ্রীক সিনেমাগুলোর সঙ্গে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম মেকারদের একটা দূরত্ব আমরা প্রায়শই লক্ষ্য করি। বিশেষ করে এফডিসির অনেক নির্মাতা, প্রযোজক, অভিনেতারা তাদের সিনেমাকে ‘নাটক’ বা ‘টেলিফিল্ম’ বলে উড়িয়ে দেন। এই দূরত্ব কিভাবে গুচানো যায়? 
(কথা থামিয়ে) আপনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকার বলতে কাদের বুঝাচ্ছেন...?

মানে যারা এফডিসি বলয়ের বাইরে সিনেমা বানাচ্ছেন...?
অরাতো নাটক টেলিফিল্মই বানাচ্ছে। সিনেমারতো একটা ভাষা আছে। নাকি? সিনেমাতো বিশাল। যাদের কথা বলছেন, তারাতো আর্টফিল্মও বানাচ্ছে না, নাটক টেলিফিল্মই বানাচ্ছে। আর্টফিল্মতো আলাদা বিষয়। তানভীর মোকাম্মেল, মোরশেদুল ইসলামরা বানিয়েছে। কিন্তু যাদের কথা ইঙ্গিত করছেন তারাতো সেভাবে পারতেছে না। হয়তো তাদের বানানো কিছু ব্যবসাসফল হচ্ছে, কিন্তু সেগুলো নাটক টেলিফিল্মই। 

আমরা দর্শকের জন্য সিনেমা বানাই। দর্শককেই একটা সিনেমার বিচারক মনে করি। সিনেমার গুনাগুন থাকলে দর্শক এমনিতেই সেটা পছন্দ করবে। কেনো, দর্শক কী আয়ানাবাজি পছন্দ করে নাই? অবশ্যই করছে। কারণ এই ছবিতে সিনেমার সবকিছু ছিলো। গল্প, চিত্রনাট্য, ডায়ালগ, সিনেমাটোগ্রাফি থেকে শুরু করে সবই ভালো ছিলো। সবকিছু এই ছবির সুন্দর ছিলো। আসলে কে কি বললো তাতে যায় আসে না কিছু। সিনেমার সবকিছুইতো দর্শকের উপর। 

তারমানে এই দূরত্ব গুচার নয়...?
যারা আজীবন নাটক টেলিফিল্ম বানাইছে। তাদের হাতে যদি আপনি সিনেমা তোলার জন্য ক্যামেরা দিয়ে দেন তাহলে সেইটাতো নাটক টেলিফিল্মই হবে। কিন্তু তারপরও তারা বানাক। আমরা সবার মধ্যেই একটা সমন্নয় করতেছি। সবাই আসুক এফডিসিতে। পরিচালক সমিতি এসব বিষয়ে কাজ করছে এখন।

শাকিব-অপু বিষয়টিও যদি একটু টাচ করে যান। বিষয়টিতো এখন স্থির। কিন্তু অপুকে যে আর সিনেমা না করতে দেয়ার সিদ্ধান্ত শাকিব খান নিলেন, এটাকে একজন পরিচালক হিসেবে কিভাবে দেখেন?
আমারতো শাকিব-অপুর সাথে একটা ছবি রানিং আছিই। শাকিবতো এখন হুট করে এটা বলতে পারে না যে অপু আর সিনেমা করবে না। সে সুপারস্টার হতে পারে, কিন্তু সে কিভাবে এটা বলতে পারে যে একজন নায়িকা আর সিনেমা করবে না। ধরুন আমার সিনেমাতে প্রযোজক কোটি টাকা লগ্নি করছে, এখন যদি সিনেমাটা শেষ করতে না পারি তাহলে এই ক্ষতি পূরণ কে দেবে? সেতো শুধু আমার একটা সিনেমাই না, অপুর সঙ্গে অন্তত আরো কয়েকজনের এমন আট দশটা সিনেমার কাজ বাকি। সব প্রযোজকের টাকা কি শাকিব এখন ফেরৎ দিতে পারবে?

আপনার সঙ্গে কোন সিনেমা?
‘মাই ডার্লিং’ নামের একটি সিনেমা। মাঝখানে অপু উধাও হলো, ছবির কাজ বন্ধ। প্রযোজককে আমার ছবির পেছনে টাকা লগ্নি করলো, তার কি হবে। এখন ফিরে আসছে, তাও যদি সিনেমাটা না শেষ করা যায় তাহলে কি হবে বুঝতে পারছেন। এমনিতেই আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির যা অবস্থা, তাহলে প্রযোজক কি নির্মাতাদের পেছনে আর টাকা লগ্নি করবে? এরকম হুটহাট সিদ্ধান্ত আমাদের চলচ্চিত্রকেই ধ্বংসের কিনারে নিয়ে যাবে। 

আপনার ‘মাই ডার্লিং’ সিনেমার শ্যুটিং কতোটা হয়েছিল? আর কবে থেকে শ্যুটিং বন্ধ?
ছবির অনেকটা শ্যুটিং শেষ। আউটডোরে কিছু শ্যুটিং শুধু বাকি। গত দুই বছর ধরে শাকিব আমাকে ঘুরাচ্ছে, কিন্তু আমার সিনেমাটা আর এগুচ্ছে না। এখন অপু তার স্ত্রী, সে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। কিন্তু সিনেমা অর্ধেক করার পর স্ত্রী হইছে দেখে অপুকে আর সিনেমা না করতে দেয়ার সিদ্ধান্ত সে নিতে পারে না। আগে বাকি থাকা সিনেমাগুলো সম্পূর্ণ করুক, তারপর সিনেমা থেকে যার ইচ্ছা দূরে সরে যেতে পারে। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!