• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারি কোষাগারে কোনো অর্থই জমা দিচ্ছে না বিপিসি


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৫, ২০১৬, ০১:১০ পিএম
সরকারি কোষাগারে কোনো অর্থই জমা দিচ্ছে না বিপিসি

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এখন দেশের সর্ববৃহৎ লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। লাভের দিক থেকে ব্যাংক ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মুনাফাও বিপিসির ধারেকাছে নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থাটি ২০১৫-১৬ অর্থবছর নিট মুনাফা করেছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা।

কিন্তু বড় অঙ্কের মুনাফা করলেও বিপিসি সরকারি কোষাগাওে কোনো অর্থই জমা দেয়নি সংস্থাটি। যদিও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার মুনাফা জমা দিতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি বিপিসিকে ৫ হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়- বিপিসি মুনাফা করলে অতিরিক্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। কারণ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তহবিলে ব্যয়ের পর যে উদ্বৃত্ত থাকে তা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়। বিপিসির ক্ষেত্রেও তা করতে হবে। অতিরিক্ত অর্থ বিপিসি তার নিজস্ব হিসাবে রাখতে পারবে না। বিপিসি ও অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় সুফল পাচ্ছে বিপিসি। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কম দামে জ্বালানি তেল কিনে অত্যধিক বেশি দামে বিক্রি করায় বিপিসির মুনাফা বড় হচ্ছে। যদিও মুনাফার ওই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিচ্ছে না বিপিসি। এমনকি পরিশোধ করা হয়নি বকেয়া ভ্যাট-করও। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অব্যাহতভাবে কমতে থাকায় ২০১৫ সালের শুরু থেকে মুনাফা করছে বিপিসি।

চলতি অর্থবছরের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিপিসির মুনাফা দাঁড়ায় ১২ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। আর অর্থবছর শেষে তা সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিপিসি মুনাফা করে ৪ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত তেল কেনাবেচা থেকে বিপিসির নিজস্ব মুনাফা ছিল ১১ হাজার ৭২৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সংস্থাটির অধীন বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলোর (পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অয়েল কোম্পানি) মুনাফা ৪৬০ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম নিম্নমুখী হওয়ায় জ্বালানি তেলে সরকারের ভর্তুকি আর নেই। তবে এই মূল্যহ্রাস দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতিতে কোনো ভ‚মিকা রাখছে না। বরং তা বিপিসির মুনাফার আকার বড় করছে। তাতে সংস্থাটির ব্যাংক ডিপোজিট বাড়ছে। বিপিসির হিসাবেও তার প্রমাণ মেলে।

বিপিসির হিসাবে দেখা যায় মুনাফা থেকে গত অর্থবছর বিপিসি ও এর ইউনিটগুলো প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকে ডিপোজিট করেছে। আর ১ হাজার ১৪ কোটি টাকার স্থায়ী সম্পদ কিনেছে বিপিসি। যদিও গত ২৫ এপ্রিল অকটেন ও পেট্রোলের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা এবং ডিজেল ও কেরোসিনের লিটারপ্রতি ৩ টাকা কমানো হয়েছে। তার আগে ১ এপ্রিল ফার্নেস অয়েলের দাম লিটারে ১৮ টাকা কমানো হয়।

সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমানোর পরও যেহেতু বিপিসি প্রচুর মুনাফা করছে ফলে তা আরো কমানো উচিত। আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই ওই মূল্য নির্ধারণ করা দরকার। কারণ জ্বালানি তেলের মূল্যহ্রাস ও স্থিতিশীলতা অর্থনীতিকে উদ্দীপ্ত করে। তা ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ব্যয়ও কমায়। ফলে ভোক্তাদের ব্যয়যোগ্য আয় বাড়ে। যা অন্যান্য খাতে খরচ করা যায়।

জ্বালানির মূল্যহ্রাসে সব ধরনের উৎপাদন ব্যয়ও কমে। যা শিল্প ও সেবাপণ্যের দাম কমাতে ভূমিকা রাখে। তার ঠিক উল্টো ঘটে জ্বালানির দাম বাড়লে বা উচ্চপর্যায়ে থাকলে। আর তেলের উচ্চমূল্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস করে। এর পাশাপাশি স্বচ্ছ নিরীক্ষার মাধ্যমে বিপিসির মুনাফার প্রকৃত হিসাবও বের করা উচিত। আর সেই অর্থ বিপিসির কাছে না রেখে ব্যয় করতে হবে সরকারের উন্নয়ন খাতে।

এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন- বিপিসির যখন লোকসান হয়েছে জনগণের অর্থে তাদের ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমায় বিপিসি এখন মুনাফা করছে। এর অংশীদার জনগণ। তাই প্রতিষ্ঠানটির মুনাফার অর্থ জ্বালানি উন্নয়ন তহবিল করে সেখানে জমা রাখা উচিত। পরে জ্বালানি খাতের উন্নয়নে সেটা ব্যয় করা যাবে।

অন্যদিকে এ বিষয়ে বিপিসির পরিচালক (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) মোসলেহ উদ্দিন জানান- বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। বিপিসি এখনো মুনাফার অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার তাগিদ দিয়েছে। তবে কর ও ভ্যাট নিয়মিত পরিশোধ করে আসছে বিপিসি। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়তে থাকায় আর দেশের বাজারে কমানোয় আগামীতে বিপিসির মুনাফা কমে আসবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!